ব্রাজিলে আদিবাসী গোষ্ঠীর শেষ সদস্যও মারা গেছেন

পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে আরও এক আদিবাসী গোষ্ঠী। ব্রাজিলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন একটি আদিবাসী গোষ্ঠীর শেষ সদস্যও মারা গেছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ওই ব্যক্তির নাম জানা যায়নি। ২৬ বছর ধরে তিনি একাকী বসবাস করছিলেন।
লোকটি রনডোনিয়া রাজ্যের তানারু আদিবাসী এলাকায় বসবাসকারী একটি আদিবাসী গোষ্ঠীর সর্বশেষ ব্যক্তি ছিলেন। রাজ্যটি বলিভিয়া সীমান্তের কাছে।২৩ আগস্ট নিজের কুঁড়েঘরের বাইরে দোলনাসদৃশ বিছানায় তাঁর মরদেহ পাওয়া যায়। সহিংস কিছু ঘটার কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, আনুমানিক ৬০ বছর বয়সে তাঁর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলেন, তাঁর এলাকায় কোনো অনুপ্রবেশের চিহ্ন ছিল না। তাঁর কুঁড়েঘরটাও সম্পূর্ণ অক্ষত রয়েছে। কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন কি না, তা নিশ্চিত হতে মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে।
গভীর গর্ত খোঁড়ার জন্য তিনি ‘গর্তমানব’ হিসেবেও পরিচিতি পান। এসব গর্তের কিছু তিনি প্রাণী শিকারে ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করতেন আর কিছু ব্যবহার করতেন লুকিয়ে থাকার জন্য।
ওই ব্যক্তি বাইরের কারও সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ এড়িয়ে চলতেন। ফলে তিনি কোন ভাষায় কথা বলতেন, সেটা জানা যায়নি। এ ছাড়া তিনি কোন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর, সেটাও অজানা রয়ে গেছে।
নিজেদের ভূখণ্ড বাড়াতে চাওয়া পশুপালকদের হাতে সত্তরের দশকে তাঁর এই আদিবাসী গোষ্ঠীর অধিকাংশ সদস্য নিহত হন বলে মনে করা হচ্ছে। ১৯৯৫ সালে তাঁর গোত্রের বাকি ছয় সদস্যও অবৈধ খনিশ্রমিকদের হামলায় নিহত হন। ফলে এই আদিবাসী গোষ্ঠীর একমাত্র তিনিই বেঁচে ছিলেন।
আদিবাসী বিশেষজ্ঞ মার্সেলো দোস সান্তোস স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানান, মৃত্যু আসন্ন জেনে ওই ব্যক্তি নিজেই পালক দিয়ে নিজেকে ঢেকে নিয়েছিলেন বলে তাঁর ধারণা।
মার্সেলো দোস সান্তোস বলেন, তিনি মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন, সেখানে সহিংস কোনো কিছুর চিহ্ন নেই। মরদেহের খোঁজ পাওয়ার ৪০ থেকে ৫০ দিন আগেই ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলেও ধারণা করছেন এই আদিবাসী বিশেষজ্ঞ।
ব্রাজিলের আদিবাসীবিষয়ক সংস্থা ফুনাই ১৯৯৬ সালে কেবল ওই ব্যক্তির বেঁচে থাকার বিষয়টি জানতে পারে। এর পর থেকে তাঁর নিজের নিরাপত্তার জন্য এলাকাটি নজরদারি করে আসছিল সংস্থাটি।নিয়মিত টহলের সময় ফুনাই সদস্য আলতাইর জোসে আলগায়ের ওই ব্যক্তির মরদেহ নিজের কুঁড়েঘরের বাইরে দোলনাসদৃশ বিছানায় দেখতে পান। ম্যাকাউ পাখির পালক দিয়ে মরদেহটি ঢাকা ছিল।
২০১৮ সালে ফুনাই সদস্যরা জঙ্গলে ওই আদিবাসী সদস্যের একটি ভিডিও করতে সক্ষম হন। ভিডিওতে তাঁকে কুড়ালের মতো কিছু একটা দিয়ে গাছে আঘাত করতে দেখা যায়। এর পর থেকে তাঁকে আর দেখা যায়নি। তবে ফুনাই সদস্যরা তাঁর কুঁড়েঘরগুলো এবং তাঁর খোঁড়া গর্তগুলোর সন্ধান পান।
ব্রাজিলে প্রায় ২৪০টি আদিবাসী গোষ্ঠীর বসবাস। অবৈধ খনিশ্রমিক, কাঠ সংগ্রহকারী ও কৃষকেরা তাঁদের ভূখণ্ড দখল করে নেওয়ায় এসব গোষ্ঠীর অনেকেই হুমকির মুখে রয়েছেন বলে সতর্ক করেছে সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে কাজ করে আসছে।বিবিসি।
বাংলা ম্যাগাজিন / এমএ