বাংলাদেশরাজশাহী

চালক-মালিকেরা ন্যূনতম অটোরিকশা ভাড়া ১০ টাকার দাবিতে ধর্মঘট রাজশাহীতে

রাজশাহী নগরে অটোরিকশার সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা করার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো ধর্মঘট চলছে। গতকাল রোববার রাস্তায় দু-একটি অটোরিকশা দেখা গেলেও আজ সোমবার তা–ও নেই। কেউ অটোরিকশা বের করলে আন্দোলনকারী চালক-মালিকেরা তা থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে অটোরিকশা আটকে রাখছেন। এতে স্বল্প দূরত্বের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

অটোরিকশার চালক-মালিকদের দাবি, তাঁদের ন্যূনতম অটোরিকশা ভাড়া ৫ থেকে ১০ টাকা করতে হবে। অর্থাৎ অটোরিকশায় উঠলেই ১০ টাকা দিতে হবে। তাঁরা বলছেন, দেশে সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু তাঁদের ভাড়া বাড়ানো হয়নি। প্রতিদিনই ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে তাঁদের বাদানুবাদ করতে হয়।

এর আগে গতকাল থেকে হঠাৎ অটোরিকশার চালক ও মালিকদের একটি পক্ষ অটোরিকশা চালানো বন্ধ করে দেয়। খবরটি শহরে ছড়িয়ে পড়লে বেশির ভাগ অটোরিকশার চালক তাঁদের গাড়ি বের করেননি।

চালক-মালিকেরা ন্যূনতম অটোরিকশা ভাড়া ১০ টাকার দাবিতে সকাল ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের সামনের রাস্তা অবরোধ করেন। এ নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে আজ ভাড়া নির্ধারণ করা হবে—একজন কাউন্সিলরের এমন আশ্বাসে তাঁরা রাস্তা ছাড়েন। তবে ভাড়া বৃদ্ধি না করা পর্যন্ত ধর্মঘট অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তাঁরা।

অটোরিকশানির্ভর রাজশাহী শহরে এই যান বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। অটোরিকশা না পেয়ে দুই সিটের রিকশায় তাঁরা কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকারি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় এই দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। দুর্ভোগ কমাতে রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপ চালু করেছে সিটি সার্ভিস বাসসেবা। সকালে দুই-একটি বাস চালু হলেও দুপুরের পর থেকে অন্তত ৩০টি বাস চলছে নগরের বিভিন্ন সড়কে।

সকালে রাজশাহী নগরের শহীদ এ এইচ এম খায়রুজ্জামান চত্বরে কয়েকটি অটোরিকশায় যাত্রী বহন করায় সেগুলো আটকে দিয়েছেন আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা। এ সময় যাত্রীদের নামিয়ে অটোরিকশার চাবি নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।আজকের কর্মসূচির সঙ্গে কোনো অটোরিকশার মালিক-শ্রমিক সংগঠন জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন রাজশাহী অটোরিকশা চালক সমিতির সভাপতি শরিফুল ইসলাম।

শরিফুল ইসলাম বলেন, তাঁরা সংগঠন থেকে বলেছেন, অটোরিকশা চলবে। যদি ভাড়া বাড়ানোর দাবি থাকে, সেটা তাঁরা মেয়রের সঙ্গে গিয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আলোচনা করবেন। এ নিয়ে তাঁরা কাল মঙ্গলবার বসবেন। আর শহরে যাঁদের ইশারায় অটোরিকশা বন্ধ করা হয়েছে, তাঁদেরও খুঁজে বের করা হচ্ছে।

রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপ সূত্রে জানা যায়, তাদের দুটি সার্ভিস চালু আছে। সিটি সার্ভিস ১-এর বাসগুলো পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভা থেকে বিনোদপুর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, তালাইমারী, সাহেব বাজার, ফায়ার সার্ভিস, সি অ্যান্ড বি মোড়, ভেড়িপাড়া হয়ে রাজশাহী কোর্ট স্টেশন এলাকায় যাবে। একইভাবে বাসগুলো আবার কাটাখালী যাবে।

সিটি সার্ভিস ২–এর বাসগুলো পবা উপজেলার নওহাটা পৌর বাজার থেকে বিমানবন্দর, আমচত্বর, নওদাপাড়া বাজার, রেলগেইট, নগর ভবন, বর্ণালী মোড়, বন্ধগেইট, সিটি বাইপাস, লক্ষ্মীপুর মোড়, সি অ্যান্ড বি মোড় হয়ে রাজশাহী কোর্টে যাবে। এই বাসগুলোও একই রোড ধরে পুনরায় যাত্রী নিয়ে নওহাটা বাজারে যাবে।

রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক বলেন, দুই দিন ধরে রাজশাহী নগরে অটোরিকশা ধর্মঘট চলছে। রাজশাহী নগরে অটোরিকশাই মূলত যাতায়াতের প্রধান পরিবহন। এই পরিবহন না পেয়ে নগরবাসীসহ দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। অনেকে নগরের আশপাশে থেকে হাসপাতালে আসেন এই অটোরিকশায়। তাঁদের দুর্ভোগ কমাতে তাঁরা সাময়িকভাবে সিটি সার্ভিস বাসসেবা চালু করেছেন।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আবদুল মমিন গতকাল আন্দোলনকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি গতকাল শ্রমিকদের উদ্দেশে সংগঠিত হয়ে মেয়রের কাছে লিখিত দাবিদাওয়া নিয়ে আসতে বলেছিলেন। তাঁরা আলোচনা করতে প্রস্তুত।

আজ দুপুরে আলোচনায় বসার কথা রয়েছে, তবে এখনো কেউ যোগাযোগ করেনি। দুপুরে তাঁরা যদি আলোচনায় না আসেন এবং শহরে অরাজকতা তৈরি করেন, তখন তাঁরা কঠিন ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবেন।

বাংলা ম্যাগাজিন / এমএ

২ মন্তব্য

  1. সত্যি তো এই অটোরিকশা গুলো আমাদের বিদ্যুৎতের বড়ো ক্ষতি হচ্ছে – তাই একেবারে বন্ধ করে দেওয়া টা উচিত বলে মনে করি।

Back to top button