বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য প্রয়াত তরিকুল ইসলামের ঘোপ এলাকার বাড়িতে আওয়ামী লীগের কর্মীরা আবারও হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে দলটি। এ ছাড়া তাঁর ছেলে ও বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলামের গাড়ি এবং দলটির জেলা কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
অনিন্দ্য ইসলামের গাড়ি, বাড়ি ও জেলা বিএনপি কার্যালয়ে আজকের হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।রাতে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী দল নিশ্চিহ্ন করার জন্য সর্বোচ্চ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে শাসকগোষ্ঠী।
এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আওয়ামী সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা সারা দেশে বেপরোয়া সহিংসতার ধারাবাহিকতায় অনিন্দ্য ইসলামের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। তাঁকে হত্যা করার জন্য এই আক্রমণ। অল্পের জন্য তিনি প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। বিবৃতিতে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান মির্জা ফখরুল।
হামলার সময় বিএনপির নেতা–কর্মীরা ইটপাটকেল ছুড়েছেন এবং লাঠিসোঁটা নিয়ে পাল্টা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। আজ রোববার বেলা তিনটা থেকে বিকেল পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।তরিকুল ইসলামের স্ত্রী নার্গিস বেগম যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক। অনিন্দ্য ইসলাম তাঁদের ছেলে।
জানতে চাইলে অনিন্দ্য ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দড়াটানা মোড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন পুলিশ সদস্যের সামনে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের লোকজন আমার গাড়িতে হামলা করেন। ওই সময় যশোর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন এবং পৌর কাউন্সিলর জাহিদুর রহমান ওরফে টাক মিলনকে দেখেছি। তাঁরা হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন। এরপর আমার বাড়িতে হামলা হলো দিনদুপুরে। ওই সময় পুলিশে কল করা হলে হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর পুলিশ আসে।’
এর আগে গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে গতকাল শনিবার ভোর পর্যন্ত যশোরে বিএনপির শীর্ষ চার নেতার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। জেলা বিএনপির নেতারা জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত ১টা ৪০ মিনিটে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে প্রথমে তরিকুল ইসলামের বাড়িতে হামলা চালানো হয়।
এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার নিয়ে দুর্বৃত্তরা উপশহরে গিয়ে বিএনপির জেলা কমিটির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক ও সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান এবং ধর্মতলা এলাকায় জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে হামলা চালায়।
অভিযোগের বিষয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি কর্মীদের নিয়ে অনিন্দ্য ইসলাম প্রথমে দড়াটানা মোড়ে এবং পরে তাঁর বাড়ি ও লালদীঘিপাড়ের দলীয় কার্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছিলেন। আমরা তা প্রতিহত করেছি। এভাবে যশোর সদরে বিএনপি কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের নেতৃত্বে আমরা দাঁতভাঙা জবাব দেব।’
বিএনপির নেতারা ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, গতকাল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় করা একটি মামলায় বিএনপির গ্রেপ্তার ২৮ নেতা–কর্মীকে আজ আদালতে পাঠানো হয়। এ জন্য অনিন্দ্য ইসলামের নেতৃত্বে কয়েকজন বিএনপি নেতা আদালতে যান।
সেথান থেকে ফেরার পথে দড়াটানা মোড়ে অনিন্দ্য ইসলামের গাড়িতে ইটপাটকেল ছুড়ে সামনের গ্লাস ভাঙচুর করেন যুবলীগের ৩০-৪০ জন। ওই সময় গাড়িতে অনিন্দ্য ইসলাম ছাড়াও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনছারুল হক ও পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মারুফ হোসেন ছিলেন।
চালক দ্রুত গাড়ি ঘুরিয়ে অনিন্দ্য ইসলামের ঘোপ এলাকার বাড়িতে ঢুকে পড়েন। এরপর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা–কর্মীরা মিছিল নিয়ে অনিন্দ্য ইসলামের বাড়ির সামনে গিয়ে প্রধান ফটকের বাইরে থেকে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। হামলায় বাড়ির বাইরে রাখা বিএনপি কর্মীদের দুটি মোটরসাইকেল ও বাইরের একটি প্রাইভেট কার ভাঙচুর করা হয়।পরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করে শহরের লালদীঘিপাড়ে গিয়ে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে ভাংচুর চালায়।
কোতোয়ালি থানার ওসি তাজুল ইসলাম বলেন, ‘অনিন্দ্য ইসলামের বাড়িতে হামলার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। সেখানে কিছু ইটপাটকেল পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বিএনপি কর্মীদের হাতে বাঁশের লাঠিসোঁটা দেখা গেছে। অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’দড়াটানা মোড়ে পুলিশের সামনে হামলার অভিযোগের বিষয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সেখানে ওই সময়ে পুলিশ ছিল কি না, তা আমার জানা নেই।’
আজকের হামলার অভিযোগ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার এবং জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুপম কুমার সরকারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে তাঁরা ধরেননি।
বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে