গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ ও কর্মচারী ইউনিয়নের কয়েকজন নেতার যোগসাজশে সাধারণ কর্মচারীদের ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা লুটপাট করা হয়েছে। প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের এ ঘটনায় আরও একজনকে গ্রেপ্তার করার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগ এই তথ্য জানিয়েছে।
আজ রোববার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী বাৎসরিক লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অর্থ কর্মচারীদের দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়নি। ‘কর্মচারীরা স্থায়ী নয়’, ‘কোম্পানি অলাভজনক’সহ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে লভ্যাংশ দেয়নি কর্তৃপক্ষ।
কর্মচারীরা বিভিন্ন সময় লভ্যাংশের দাবি করলে গত বছর প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৯৯ জন শ্রমিককে বেআইনিভাবে ছাঁটাই করা হয়। এসব কারণে প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিকেরা শ্রম আদালতে ১৯০টি মামলা করেন। কিন্তু শ্রমিকদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে কোম্পানি ও শ্রমিক ইউনিয়নের কয়েকজন নেতা যোগসাজশে মামলাগুলো প্রত্যাহার করান।
গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম মাইনুল ইসলাম (৩৯)। তিনি গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সহসভাপতি। গত বুধবার কুমিল্লা সদর থানাধীন মগবাড়ী এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ২টি মুঠোফোন, ১টি ল্যাপটপ ও ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার চেক জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিবি।
ডিবিপ্রধান বলেন, শ্রমিকদের সব পাওনা এ অ্যাকাউন্ট থেকেই পরিচালিত হওয়ার কথা। চুক্তি অনুযায়ী, এখান থেকে শ্রমিকদের পাওনা ও ৫ শতাংশ অগ্রীম কর ব্যতীত অন্য কোনো অর্থ ছাড়ের সুযোগ নেই। কিন্তু বিধিবহির্ভূতভাবে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি, সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন মিলে সেখান থেকে ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা সরিয়ে আত্মসাৎ করেন।
ডিবি প্রধান আরও বলেন, গত ২৭ এপ্রিল গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের মধ্যে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, গত ১০ মে ঢাকা ব্যাংক গুলশান শাখায় একটি সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। সেখানে ২০১০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরের মোট লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অর্থ ও এর সুদ হিসেবে আরও ৪ শতাংশ অর্থ (প্রায় ৪৩৭ কোটি টাকা) কোম্পানি থেকে এ অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়।
চুক্তি অনুযায়ী অ্যাকাউন্টটি থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য গ্রামীণ টেলিকমের এমডিকে বাধ্যতামূলক সিগনেটরি (স্বাক্ষরদাতা) এবং ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অন্য দুই সিগনেটরি হিসেবে রাখা হয়।
৪৭৩ কোটি টাকার মধ্যে ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হলে বাকি টাকা কোথায় গেল, প্রশ্ন করা হলে ডিবিপ্রধান বলেন, ‘বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা মনে করছি, ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর দায় এড়াতে পারেন না। আমরা আরও জিজ্ঞাসাবাদ করছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব। তদন্তে যা আসবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’
বাংলা ম্যাগাজিন / এমএ