পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ন্যায্য দাম না পাওয়ার শঙ্কায় দিনাজপুরের কলাচাষীরা

গত দেড় যুগে দিনাজপুরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে কলার আবাদ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে জেলায় ১ হাজার ১৪৬ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছে। এবার আবাদ বেড়েছে আরও ৩৪ হেক্টর জমিতে। দিনাজপুরে কলার আবাদের ৭০ শতাংশ হয় কাহারোল, বীরগঞ্জ, সদর ও ফুলবাড়ী উপজেলায়। 

এ জেলায় উৎপাদিত ‘মেহের সাগর কলার’ খ্যাতি দেশজুড়ে। সাগর কলার পাশাপাশি পজেলায়।সবরী, সুন্দরী (মালভোগ), চিনিচম্পা কলার চাষও হয় এখানে। কলা চাষের উপযোগী জলামুক্ত উঁচু জমি, ভালো ফলন, চাষে কম পরিশ্রম আর ভালো দাম পাওয়ায় গত কয়েক বছরে কৃষকেরাও উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।

দিনাজপুরে শ্রাবণের শুরু থেকে আশ্বিনের মধ্যভাগ পর্যন্ত চলে কলা কেনাবেচা। কাহারোল উপজেলার দশমাইল এলাকায় বসে উত্তরাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম কলার হাট। ভোর থেকে এই হাটে বিক্রির জন্য কলা আনতে শুরু করেন চাষি ও স্থানীয় কলা ব্যবসায়ীরা। ঢাকার বাদামতলী, যাত্রাবাড়ী, তেজগাঁও, ওয়াইজঘাট, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক ব্যাপারী কলা কিনতে আসেন এখানে। বেলা ১১টার মধ্যে শেষ হয় হাটের বেচাকেনা।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সাদিপুর গ্রামের সফিকুল ইসলামের এক বিঘা জমির ৭০০ কলাগাছ ফল আসার আগেই মৌখিক চুক্তিতে কিনে নেন স্থানীয় পাইকার দলিলউদ্দিন। কথা ছিল প্রতি ১০০ কাঁদি (প্রতি কাঁদিতে প্রায় ৮০টি কলা) কলার দাম দেবেন ৩৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৫০ হাজার টাকা অগ্রিমও দিয়েছেন সফিকুলকে।

কিন্তু কলা বিক্রির উপযোগী হওয়ার পর দলিলউদ্দিন দেখেন, বাজারে কলার দাম কম। তাই সফিকুলের সঙ্গে করা মৌখিক চুক্তি রক্ষা করতে পারছেন না। শেষমেশ প্রতি ১০০ কাঁদি কলা ৩৫ হাজার টাকায় দফারফা হয়।

কলাচাষিরা বলছেন, গত মৌসুমে প্রতি ১০০ কাঁদি কলা ৪৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন তাঁরা। এবার শ্রাবণের শুরুতে ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। হঠাৎ জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কলার দাম কমিয়ে দিয়েছেন ব্যাপারীরা। তাই চলতি মৌসুমে কলার ভালো দাম না পাওয়ার শঙ্কায় তাঁরা।

কয়েকজন কৃষক জানান, গত বছর মানভেদে প্রতি কাঁদি কলার দাম ছিল ৪০০-৪৮০ টাকা। প্রতি কাঁদিতে কলা থাকে প্রায় ৮০টি। সেই হিসেবে গত বছর প্রতিটি কলার পাইকারি দাম ছিল ৪ টাকা ৮০ পয়সা। এবার দাম ৩ টাকা ৩৮ পয়সা।

এদিকে কলার দাম কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়াকেই প্রধান কারণ হিসেবে বলছেন পাইকারেরা। নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে আসা কলার ব্যাপারী লুৎফর রহমান বলেন, গত বছর ট্রাকের ভাড়া ছিল ১৬-১৮ হাজার টাকা। এবার দিতে হচ্ছে ২৫-২৮ হাজার টাকা। সব খরচ যোগ করলে ঢাকায় পৌঁছানো পর্যন্ত একটি কলার দাম পড়েছে প্রায় ৪ টাকা।

বাংলা ম্যাগাজিন / এমএ

Exit mobile version