এক্সক্লুসিভকূটনীতিবাংলাদেশবিএনপিরাজনীতি

বেনজীর আহমেদের শর্ত সাপেক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিয়ে বিভ্রান্তিঃফখরুল

বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের শর্ত সাপেক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেওয়া নিয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কী এই বিভ্রান্তি, তার একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জাতিসংঘের ১৯৪৭ সালের চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি শুধু জাতিংঘের সুনির্দিষ্ট সম্মেলনে যোগ দিতে পারবেন এবং জাতিসংঘ প্রাঙ্গণে তাঁর অবস্থান সীমিত থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থাকায় বেনজীর আহমেদ এই সম্মেলনে যেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) এবং বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে তাঁদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি সে দেশে থাকা সম্পদ জব্দের সুযোগ তৈরি হয়। ২৫ আগস্ট আইজিপি বেনজীর আহমদকে ভিসা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুই দিনব্যাপী সংস্থাটির সদস্যদেশগুলোর পুলিশপ্রধানদের সম্মেলন হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এই সম্মেলনে অংশ নেবে। প্রতিনিধিদলে বাংলাদেশের পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদও রয়েছেন। সম্মেলনে অংশ নিতে ৩০ আগস্ট প্রতিনিধিদলের যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে যাত্রা করার কথা রয়েছে।

আজ শনিবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো ভয়ংকর মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। জাতিসংঘে পুলিশপ্রধানদের সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলে পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের নাম অন্তর্ভুক্তি সরকারের অপরিণামদর্শী ও ফ্যাসিবাদী সিদ্ধান্ত। এর মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, এই ধরনের শর্ত সাপেক্ষে ভিসা প্রদান বাংলাদেশের জন্য অবমাননাকর। সরকারের এই ধরনের দায়িত্বহীন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। বিএনপিসহ দেশের প্রায় সব গণতান্ত্রিক দল সরকারের হিংস্র আচরণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ জানিয়ে আসছে। দেশে কোনো গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই, মিটিং–মিছিল করার কোনো অধিকার নেই। বিনা অনুমতিতে কোনো সমাবেশ পর্যন্ত করতে দেয় না সরকার। গণমাধ্যমকে সেলফ সেন্সরশিপে বাধ্য করা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের মতো সংস্থার পক্ষ থেকেও বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করা হলেও সরকার তোয়াক্কা করছে না। সরকার হত্যা, গুম-খুন চালিয়ে যাচ্ছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন করায় র‌্যাব ও পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও ভিসা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেতের রিপোর্টে বাংলাদেশ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করার মতো কিছু নেই বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, তিনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) অপব্যাখ্যা দিয়েছেন ও সত্যের অপলাপ করেছেন। মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে চার-পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো উঠে এসেছে।

২২ আগস্ট থেকে জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপির কর্মসূচিতে বরিশাল, যশোর, রাজশাহী, ঠাকুরগাঁওসহ দেশের ৫০টির বেশি স্থানে হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, এসব ঘটনায় তিন শতাধিক নেতা–কর্মী আহত ও দুই শতাধিক গ্রেপ্তার হয়েছেন।

এই হামলার পর বিএনপি আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াবে কি না, প্রশ্ন করা হয় মির্জা ফখরুলের কাছে। তিনি বলেন, ‘বিএনপি তো আন্দোলন শুরুই করেছে। আমাদের লক্ষ্য একটাই, এই ভয়াবহ দানবীয় শক্তিকে ক্ষমতা থেকে সরানো। এদের সরিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। সে জন্য আমরা একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা আবার একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে পেতে চাই।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার বাংলাদেশের বিষয়ে পরিষ্কার করে বক্তব্য দিয়ে গেছেন। তিনি যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, সেখানে পরিষ্কারভাবে বলে গেছেন, বাংলাদেশ কোথায় অবস্থান করছে।

উনি শেষে বলেছেন, এই অবস্থা থেকে মুক্ত হতে গেলে একটা স্বচ্ছ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করার প্রয়োজনীয়তা আছে। তিনি তদন্তের প্রস্তাব দিয়ে গেছেন ও প্রয়োজনে জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ এই তদন্তে সহায়তা করবে, এটাও বলে গেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বিএনপির মিডিয়া সেলের শহীদ উদ্দিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে 

Back to top button