অবশেষে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে দ্বন্দ্বের অবসান
সরকারি অনুদানে নির্মিত ‘আশীর্বাদ’ সিনেমা নিয়ে পরিচালক, নায়ক-নায়িকা ও প্রযোজকের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। একে অন্যের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছিলেন। একটা সময় ছবির নায়িকা মাহি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে সহ-প্রযোজক তাহেরা ফেরদৌস জেনিফারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
২৬ আগস্ট শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত সিনেমা ‘আশীর্বাদ’। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) সিনেমার প্রযোজক জেনিফার ফেরদৌসের সঙ্গে নায়িকা মাহিয়া মাহি ও চিত্রনায়ক রোশনের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বের অবসান ঘটেছে।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের অবসান ঘটায় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। সংগঠনটির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চনের হস্তক্ষেপে এই বিরোধের মীমাংসা হয়েছে বলা জানানো হয়।
মাহিয়া মাহীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক, রোশান, মাহি ও জেনিফারকে ডাকা হয় শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে। গত বৃহস্পতিবার বিকালে শুরু হওয়া সালিশি বৈঠকে দু’পক্ষসহ উপস্থিত ছিলেন পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান, প্রযোজক শামসুল আলম, ইকবাল হোসেন, শিল্পী সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন, সহ-সম্পাদক সাইমন সাদিক, অভিনেত্রী নিপুণ আক্তার।
সালিশি বৈঠক শেষ হয় রাত ৮টার দিকে। এরপর তারা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানান, তাদের মধ্যকার সকল দ্বন্দ্বের অবসান হয়েছে। জেনিফার ফেরদৌস বলেন, আমাদের সঙ্গে ছবি চলাকালীন কোনো দ্বন্দ্ব ছিলনা। কিন্তু কীভাবে যেন কী হয়ে গেল। আমরা জানতে পেরেছি তৃতীয় পক্ষ আমাদের মধ্যে এ দ্বন্দ্ব লাগিয়েছে।
এসময় মাহির বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগ ‘ভুল’ বলে জানান, জেনিফার। একই সঙ্গে এই প্রযোজকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোও ‘ভুল ছিলো’ বলে জানিয়েছেন মাহি। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ‘আশীর্বাদ’ সিনেমার পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক ও চিত্রনায়ক জিয়াউল রোশনও।
জেনিফার ফেরদৌস বলেন, যিনি দ্বন্দ্ব লাগিয়েছেন, আমরা তাকেও চিহ্নিত করতে পেরেছি। তার নামটা সবার সামনে বলতে চাই না। যাই হোক আমাদের মধ্যকার সকল দ্বন্দ্বের অবসান হয়েছে। মাহি বলেন, আমি বলবো শুরু থেকে ছবি নিয়ে একটা ফেসবুক গ্রুপ করে ফেলা যেতো যেখানে ছবির সবকিছু শেয়ার করা হবে, তাহলে হয়তো এত ভুল বোঝাবুঝি হতো না।
তাতে করে এমন হতো এরকমটা করতে চাইছি, তাতে আমরা সবাই ফিডব্যাক দিতে পারতাম। এখনো বলবো, ছবিটা ভুল সময়ে মুক্তি দেয়া হচ্ছে। সময় নিয়ে মুক্তি দিলে আমরা ভালো করে প্রচারণা করতে পারতাম। আর আমি দুঃখিত সবকিছুর জন্য। মুক্তিযুদ্ধের গল্পে নির্মিত হয়েছে ‘আশীর্বাদ’ সিনেমাটি। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে সরকারি অনুদান পায় এটি। গতকাল ২৬শে আগস্ট হাতে গোনা কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে এই ছবি।
এ সময় প্রযোজক জেনিফার ফেরদৌস বলেন, “বিগত তিন সপ্তাহ ধরে আমাদের ‘আশীর্বাদ’ সিনেমার একে অপরকে নিয়ে যে ধরনের বুলিং করা হচ্ছিল, সেটার আজ অবসান হলো। আমাদের মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল তার সুরাহা হয়েছে। একজনের মাধ্যমে আসলে আমাদের কথাবার্তার ছড়িয়েছে। এটা আমরা এখন বুঝতে পেরেছি।”
মাহিয়া মাহিকে জড়িয়ে ধরে তিনি বলেন, ‘মাহি আমার ছোট বোন। ভুল ভ্রান্তি আমাদের মধ্যে যা হয়েছে, যা উচিত হয়নি। আমি নিজেও তিক্ততার সাথে তাকে নিয়ে অনেক কিছু বলে ফেলেছি, যেটা ঠিক হয়নি। আমাদের মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিলো, তা সমাধান হয়ে গেছে।’
এর আগে, নায়ক-নায়িকাকে বাদ দিয়ে ‘আশীর্বাদ’ সিনেমার মুক্তি উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রযোজক জেনিফার ফেরদৌস। তখন তিনি মাহি ও রোশনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন। পরে এই প্রযোজকের বিরুদ্ধে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন মাহি ও রোশন। এরপর তারা এক পক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করারও হুমকি দেন। পরে মাহি বিষয়টি নিয়ে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ জানালে, সংগঠনটির উদ্যোগে বৃহস্পতিবার সভা ডাকা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬০ লাখ টাকা সরকারি অনুদান পায় ‘আশীর্বাদ’। সিনেমাটির সংলাপ লিখেছেন আব্দুল্লাহ জহির বাবু। এতে রোশান ও মাহি ছাড়া আরও অভিনয় করেছেন কাজী হায়াৎ, রেহানা জোলি, রেবেকা, শাহনূর, সীমান্ত প্রমুখ।
বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে