রাজধানীর উত্তরায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারী চক্র
রাজধানীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারী চক্র। সুযোগ পেলেই ছোঁ মেরে মোবাইল ফোনসহ জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। তাদের টার্গেটের শিকার হয়ে অনেকে আহত হন। এমন দৃশ্য প্রতিদিনের। এভাবেই রাজধানীতে সক্রিয় ছিনতাইকারী চক্র। রাজধানীর উত্তরায় কয়েকজন ভু্ক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে।
গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় বিমানবন্দর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হঠাৎ বাস থেকে যাত্রীর ফোন নিয়ে পালাচ্ছে একজন ছিনতাইকারী। মুহূর্তেই পুলিশ ও পথচারীদের ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যায়।পথচারীদের অভিযোগ, ছিনতাইকারী সিন্ডিকেটকে খুব ভালো করে চেনে পুলিশ। আবার ফুটপাতের দোকানীদের সঙ্গেও ছিনতাইকারীদের রয়েছে সখ্যতা। কিন্তু এমন অভিযোগ মানতে নারাজ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সম্প্রতি ছিনতাইয়ের শিকার হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সোনিয়া। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘চারদিকে মানুষের কোলাহল। বিমানবন্দরে বাসের সিটে বসে আমি মোবাইলে ব্যস্ত ছিলাম। বাস ছাড়ার মুহূর্তেই জানালা দিয়ে চিলের মতো ছোঁ মেরে নিয়ে গেলো আমার মোবাইল ফোন। সেদিনের পর থেকে ছিনতাই আতঙ্ক তাড়া করে বেড়ায় আমাকে।’
বেসরকারি মেডিক্যালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মোসা. লাকি আক্তার ছিনতাইয়ের ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে দুপুর ১১টার দিকে আমি যে রিকশায় যাচ্ছি তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন অনেক পথচারীও। হঠাৎ একজন তার গলা থেকে এক ভরি স্বর্ণের চেইন টান দিয়ে নিয়ে দৌড়ে চলে যায়।’
তিনি বলেন, ‘এখনো মনে হলে চমকে উঠি। ভুলে যেতে চাই সেদিনের মর্মান্তিক স্মৃতি। দিনদুপুরে শত শত মানুষের সামনে গলা থেকে স্বর্ণের চেইন নিয়ে গেল ছিনতাইকারী, গলা বেয়ে পড়ছিল রক্ত। অবাক লাগে মাত্র ৫ গজ দূরে পুলিশের সামনে টান দিয়ে ছিনিয়ে নিয়ে গেলো চেইন। সেদিনের পর থেকে উত্তরা মানেই আতঙ্ক মনে হয়।’
এ ব্যাপারে আব্দুল্লাহপুরে দায়িত্বরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের কাজই হলো যাত্রীদের নিরাপত্তা দেওয়া। রাস্তায় নানা রকমের মানুষের চলাচল। তাই কে ভালো, কে ছিনতাইকারী বোঝা খুবই মুশকিল। তারপরও মাঝে মাঝে ছিনতাইকারী ধরে চালান দিয়ে থাকি।’
রাজধানীর ব্যস্ততম কয়েকটি বাস স্টপেজ ঘুরে জানা যায়, ছিনতাইকারীদের দিনদুপুরে ছিনতাইয়ের নানা কৌশল। তাদের প্রত্যেকের জন্য নির্দিষ্ট এলাকা ভাগ করা রয়েছে। কে কোন দিন কোথায় কাজ করবে, তা ভাগ করে দেওয়া হয় আগের দিন রাতেই। এদের পরিচালনায় রয়েছে একাধিক চক্র। উত্তরার আব্দুল্লাহপুর, হাউজবিল্ডিং, আজমপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের আনাগোনা সবসময় দেখা যায়।
ভুক্তভোগী রাসেল হোসেন বলেন, ‘সম্প্রতি আমি প্রতিদিনের মতো বাংলামোটর থেকে আব্দুল্লাহপুরে বাসায় যাচ্ছিলাম। এ সময় হাউজ বিল্ডিং থেকে চিলের মতো ছোঁ মেরে আমার ফোনটা নিয়ে গেল ছিনতাইকারী। প্রকাশ্যে পুলিশ ও পথচারীদের সামনে এমন ছিনতাই হয় কীভাবে। এই দুর্বৃত্তরা এই এলাকার। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তরায় দায়িত্বরত একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, ‘ভাই আসলে আমরা রাস্তায় গাড়ি সামাল দিতেই সময় পাই না। তাই ছিনতাইকারী নিয়ে তেমন কাজ করার সুযোগ থাকে না। এর মধ্যেও চেষ্টা করি যাতে সবাই নিরাপদে চলাচল করতে পারে। আবার অনেক জায়গাতে মাইকিংও করা হয় সচেতন থাকার জন্য।’
রনি নামে এক ব্যক্তি কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানান, ‘আমি গাড়ি চালাই, সেই সুবাদে দিনরাত রাজধানীর ব্যস্ততম রাস্তায় চলাচল করি। কিছুদিন আগে উত্তরা কলেজের সামনে এক ছিনতাইকারীকে সুপারম্যানের মতো বাসের জানালা দিয়ে এক যাত্রীর কান ছিড়ে স্বর্ণের দুল নিয়ে পালাতে দেখেছি। যা দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শত শত গাড়ির সামনে দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে রাস্তার বিপরীত দিক দিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।’
উত্তরা পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ছিনতাই কমানোর জন্য আমারা ২৫টি স্থান সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় এনেছি। আমাদের পুলিশ প্রশাসন সার্বক্ষণিক তদারকি করে। পুলিশের পোশাক ছাড়া সাদা পোশাকের মাধ্যমে ছিনতাইকারীর ধরার জন্য আমরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছি। এ পর্যন্ত যত ছিনতাইকারীর ধরেছি তারা অধিকাংশই টঙ্গী গাজীপুর থেকে আসে।’
উত্তরা পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ মহসিন বলেন, ‘ছিনতাইকারীদের ধরে আমরা আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। অধিকাংশ ছিনতাইকারী থেকে আমরা কমন তথ্য পাই-মাদকের টাকা যোগাড় করার জন্য তারা ছিনতাই করে।’
বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে