দিনাজপুরে ফেসবুক লাইভে এক এমপির বিরুদ্ধে আরেক এমপির অভিযোগ

ফেসবুক লাইভে এসে দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য (এমপি) মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেছেন দলের আরেক এমপি শিবলী সাদিক। ফিজারের বিরুদ্ধে দলের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি, নিজ দলের এমপিদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি, দলীয় প্রার্থীকে হারিয়ে দেওয়ার অপকৌশল, পকেট কমিটি গঠনসহ একাধিক অভিযোগ করেছেন তিনি।

ভিডিওতে শিবলী সাদিক বলেন, ‘আমার জেলার সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার সাহেবের গাত্রদাহ, উনার একটাই ঈর্ষার কারণ যে শিবলী সাদিকের প্রগ্রামে কেন হাজার হাজার মানুষ আসে। শিবলী সাদিক কেন এত বড় প্রগ্রাম করছে, শিবলী সাদিকের নাম কেন জেলায় শোনা যাচ্ছে। জেলার প্রতিদ্বন্দ্বী কেন সে হবে, বা শিবলী সাদিক আওয়ামী লীগকে কেন গঠনতান্ত্রিকভাবে করতে চাচ্ছে। আওয়ামী লীগ আমরা যেভাবে করি, পকেট কমিটি করি। ’

দিনাজপুর-৬ আসনের এমপি শিবলী সাদিকের অভিযোগ, দিনাজপুর-৫ আসনের এমপি মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার আওয়ামী লীগকে নষ্ট করতে চান, ধ্বংস করতে চান, গ্রুপিং করতে চান। আগামী দিনে আচরণ ও ব্যবহারের পরিবর্তন না করলে প্রতিটি এলাকায় তাঁকে প্রতিহত করারও ঘোষণা দিয়েছেন শিবলী সাদিক।গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে শিবলী সাদিক তাঁর ফেসবুক আইডিতে সরাসরি (লাইভ) ভিডিও বার্তায় এই ঘোষণা দেন। লাইভে তিনি ২৯ মিনিট ৪৩ সেকেন্ড কথা বলেন।

এমপি শিবলী সাদিকের অভিযোগ, ‘আমার এলাকায় দুটি কমিটির অনুমোদন দিচ্ছেন না। আপনার সুপারিশে ৬২ হাজার মেট্রিক টন কয়লা দেওয়া হয়েছে। যে কয়লা সাড়ে ৯ হাজার টাকা করে ক্রয় করে ২২ থেকে ২৬ হাজার টাকা টন দরে বিক্রি হয়েছে। আপনার সুপারিশে কাছের মানুষ এসব কয়লা পেয়েছেন।

এটা তো রাষ্ট্রীয় সম্পদ ছিল। আমরা তো কোনো দিনই বলিনি। আমাকে আঘাত ও অপমানিত করতে আসিয়েন না, আমি বিনয়ের সঙ্গে বলছি। আমি আওয়ামী লীগের এমপি, বিএনপি-জামায়াতের এমপি নই। ’

শিবলী সাদিকের অভিযোগ, ‘নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানকেও জেলা কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে আমার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি করেছেন, তাঁকে দিয়ে অভিযোগ করিয়েছেন। প্রতিটি উপজেলায়ই তিনি গ্রুপিংয়ের সৃষ্টি করেছেন। আমি দিনাজপুর-৫ আসনে নির্বাচন করব না। মাঝে মাঝে শোনা যায়, আপনারাই নাকি দিনাজপুর-৬-এ নির্বাচন করবেন। আপনি সাতবারের এমপি, আপনি ১০ জায়গায় এমপিশিপ করতে পারেন, সেই ক্ষমতা আল্লাহ আপনাকে দিয়েছেন। ’

‘আপনার (ফিজার) চাওয়া-পাওয়া যেকোনোভাবে মানুষকে ছোট করতে হবে, ধ্বংস করে দিতে হবে। এককভাবে আপনার আসনে এমপি হবেন। প্রতিটি সংসদীয় আসনে আপনি বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন। আমার বাবাকে নির্বাচনে হারিয়েছেন, আমি ভুলি নাই সেই কথা।

আপনি সূক্ষ্মভাবে আপনার আসন ছাড়া সব প্রার্থীকেই হারিয়েছেন। খালিদের (খালিদ মাহমুদ চৌধুরী) বাবাকে হারিয়েছেন, ইকবাল ভাইয়ের বাবাকে হারিয়েছেন, মিজানুর রহমান মানুকে হারিয়েছেন, আমার বাবাকে হারিয়েছেন। এই কথাগুলো কষ্টের সঙ্গে, দুঃখের সঙ্গে বলছি, বিনয়ের সঙ্গে বলছি, এখান থেকে পরিবর্তন হয়ে আসতে হবে। ’

শিবলী সাদিকের অভিযোগের ব্যাপারে সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলেন, ‘এমপি শিবলী সাদিক আমার বিরুদ্ধে ফেসবুকে কথা বলেছে, সেটা আমার আশপাশের লোকজনের কাছে শুনেছি। তবে আমি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নই। শিবলী সাহেব যা বলেছেন উনার দায়িত্বে বলেছেন। আমি মনে করি যে আমার কোনো ষড়যন্ত্র করার দরকার হয় না। ’

শিবলী সাদিকের অভিযোগ, জমি দখল নিয়ে তাঁর ও তাঁদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান স্বপ্নপুরীর বিরুদ্ধে যেসব মানববন্ধন করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার কিছু ব্যক্তিকে দিয়ে এসব অভিযোগ করাচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যদি জমি দখল করি তাহলে কেউ মামলা করে না কেন? আদালতে তো মামলা হতেই পারে।

স্বপ্নপুরী এলাকায় জমির মূল্য বিঘাপ্রতি (৩৩ শতক) পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা। ৭০ একর জমি হলে ২০০ বিঘা জমি হবে, যার দাম ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা হতে পারে। আমরা আফতাবগঞ্জে একটি মসজিদ নির্মাণ করে দিচ্ছি পারিবারিকভাবে, যার দাম ৫৬ কোটি টাকা। মানুষ যাতে করে ভালোভাবে নামাজ আদায় করতে পারে সে জন্য আমরা একটি মসজিদ নির্মাণ করে দিচ্ছি। আর আমরা মাত্র ১০ কোটি টাকার জমি দখল করব?’

তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি ইন্ডিয়ান হাইকমিশন এবং রাষ্ট্রপতির কাছেও আমারসহ আরো বেশ কয়েকজনের নামে অভিযোগ করা হয়েছে; যাতে আগামী দিনে আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে মনোনয়ন না পাই। আমরা শেখ হাসিনার সৈনিক। শেখ হাসিনাকে টেকানোর জন্য যা করা দরকার সেটাই করব আমরা। ’

বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে

Exit mobile version