রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।এখন সেই নিষেধাজ্ঞা তাদের জন্য বুমেরাং হয়ে উঠেছে।কারণ, তেল-গ্যাসের বিকল্প উৎস এখনো তারা বের করতে পারেনি। ফলে যে রাশিয়ার কাছ থেকে তারা এত দিন চাহিদার ৩৫ শতাংশ আমদানি করত, সেই আমদানি বন্ধ হওয়ায় বড় ধরনের বিপদে পড়েছে তারা।
বিষয়টি হচ্ছে জ্বালানিসংকট প্রকট হচ্ছে ইউরোপে। সেই সঙ্গে আগস্ট মাস শেষ হতে চলল, অক্টোবর মাস থেকে সাধারণত শীত শুরু হয় এই মহাদেশে। অর্থাৎ শীত আসতে আর এক মাসের মতো বাকি। শীতের সময় ইউরোপে ঘর গরম রাখতে ফায়ারপ্লেস জ্বালাতে হয়, তা না হলে সেখানে টেকাই দায়। কিন্তু এবার শীতে গ্যাস রেশনিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানি।
জার্মানিতে আসন্ন শীতকালে সরকারি ভবনে বাতি জ্বালানো ও ঘর গরম রাখার সুযোগ সীমিত করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জার্মান সরকার গ্যাস ব্যবহার অন্তত ২ শতাংশ হ্রাস করতে চায়। জার্মান সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে, সেপ্টেম্বর মাস থেকে হাসপাতাল ছাড়া জার্মানির সব সরকারি ভবন সর্বোচ্চ ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত গরম করা যাবে। এ ছাড়া ভবনের প্রবেশদ্বার ও করিডর গরম করার ব্যবস্থা রাখা যাবে না।
এ ছাড়া সৌন্দর্যবর্ধনের জন্যও সরকারি ভবন ও সৌধ আলোকিত করা যাবে না এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো রাতের বেলা আলো জ্বালাতে পারবে না। ব্যক্তিমালিকানাধীন সুইমিংপুল গরম করাও নিষিদ্ধ করা হতে পারে। এ ছাড়া রেলওয়েতে কয়লা ও তেলবাহী কার্গো চলাচলে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, অর্থাৎ যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হবে।
জার্মানির অর্থমন্ত্রী রবার্ট হ্যাবেক বিবিসিকে বলেন, তাঁরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা থেকে রেহাই চান। আরও বলেন, ‘নতুন এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে তাঁরা জ্বালানি বাঁচাতে চান, কিন্তু এখন পর্যন্ত এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি যে আমরা বলতে পারি, যথেষ্ট হয়েছে।’
জার্মানির অর্থমন্ত্রী আরও বলেছেন, ইউক্রেনে রুশ হামলার আগে রাশিয়ার কাছ থেকে চাহিদার ৫৫ শতাংশ গ্যাস আমদানি করত জার্মানি। কিন্তু ইতিমধ্যে তারা গ্যাস আমদানি ৩৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে এবং পণ করেছে, সে দেশে থেকে কোনো গ্যাস আমদানি করা হবে না।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়ার গ্যাসের ওপর জার্মানির নির্ভরশীলতা ছিল সবচেয়ে বেশি। যুদ্ধ শুরুর পর দুই মাসে রাশিয়ার গ্যাস ও তেল বাবদ ৯০০ কোটি ইউরো পরিশোধ করেছে। ফলে রাশিয়ার কাছেও জার্মানি গুরুত্বপূর্ণ বাজার।রাশিয়াও চুপচাপ বসে নেই। নর্ডস্ট্রিম ১ পাইপলাইন দিয়ে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ ২০ শতাংশ হ্রাস করেছে এবং আশঙ্কা আছে, আসন্ন শীতে এই পাইপলাইন পুরোপুরি বন্ধ করে দেবে তারা।
ইউরোপের লাখ লাখ বাড়িতে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য গ্যাস ব্যবহৃত হয়। সাধারণ মানুষ বছরের পর বছর এই রীতিতে অভ্যস্ত।তাঁদের বিদ্যুৎ ব্যবহারে অভ্যস্ত করা সময়সাপেক্ষ হবে।
এ ক্ষেত্রে ইউরোপের সামনে আরেকটি বিকল্প আছে, তা হলো উত্তর আমেরিকা অথবা মধ্যপ্রাচ্য থেকে তরল গ্যাস আমদানি করা। এই তরল গ্যাস আমদানির পরিমাণও বেড়েছে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে।
২০২০ সালে রাশিয়া থেকে ইউরোপের আমদানি করা ১৬৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাসের মধ্যে জার্মানি ৫৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ঘনমিটার, তারপরে ইতালি ১৯ দশমিক ৭ বিলিয়ন, নেদারল্যান্ডস ১১ দশমিক ২ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস আমদানি করেছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে তরল গ্যাস আমদানির পরিমাণ জানুয়ারির প্রায় তিন গুণ। এতে স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বাংলাদেশের পক্ষে আর স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা সম্ভব হচ্ছে না। সে কারণে দেশে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। বেড়েছে লোডশেডিং।
বাংলা ম্যাগাজিন / এমএ