মস্তিষ্ক দেহের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি শরীরের অন্যান্য সব ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। যার মধ্যে হৃৎস্পন্দন, ফুসফুসের শ্বাস প্রশ্বাস এবং শরীরের অন্যান্য সব কাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।যেহেতু সমস্ত শারীরিক ক্রিয়া আপনার মস্তিষ্কের কার্যকারিতার উপর নির্ভরশীল, তাই এটি সুস্থ রাখা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং সঠিক শরীরচর্চা দিয়ে মস্তিষ্ক সুস্থ রাখা সম্ভব।
কিছু খাবার আমাদের মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এতে আপনার স্মৃতি, মেজাজ নষ্ট হওয়া এবং ডিমেনশিয়ার মতো পরিস্থিতির ঝুঁকি বেড়ে যায়।
১.আপনি ইতিমধ্যে জানেন যে সফট ড্রিংকস বা কোমল পানীয় শরীর আর মস্তিষ্ক উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু আপনি কি জানেন, ফলের জুস, এনার্জি ড্রিংক, চিনিযুক্ত চা/কফি এমনকি চিনিযুক্ত যেকোনো কিছুই মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। মনে রাখবেন চিনি মস্তিষ্কের শত্রু। এ জন্য চিনি আর লবণকে বলা হয় ‘সাদা বিষ’। চিনি স্মৃতিশক্তি ও শিখনক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ভাবছেন ডায়েট সোডা খাওয়া ভালো। বিশ্বাস করুন, ওটা আরও ক্ষতিকর। ডায়েট সোডা স্ট্রোক ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
২.দিন দিন বাড়ছে বাজার থেকে প্রক্রিয়াজাত মাংসের নানা খাবার কিনে খাওয়ার প্রবণতা। সেই তালিকার ওপরের দিকে রয়েছে হিমায়িত চিকেন সমুচা, নাগেটস ইত্যাদি। অতিথি এলে আমরা ঝটপট নাশতার জন্য হাত বাড়াই এমন সব খাবারের দিকে। অথচ প্রক্রিয়াজাত যেকোনো মাংস কেবল শরীরের জন্যই ক্ষতিকর নয়, ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ানোর জন্যও দায়ী।
৩.ভাজা খাবার খেতে কার না ভালো লাগে! চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই—এগুলো নাগরিক জীবনের জনপ্রিয়তম স্ন্যাকস। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব ভাজাপোড়া খাবার মস্তিষ্কে প্রদাহ সৃষ্টি করে। শুধু তা–ই নয়, মস্তিষ্কে টিস্যুর সাইজ কমিয়ে এর যে অংশ জ্ঞানীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেই অংশের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই আপনার বাচ্চাকে যদি অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাওয়ান, বুঝবেন, ওর ‘হাবাগোবা’ হওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার।
৪.সাদা আটা, সাদা পাউরুটি, সাদা পাস্তা—এগুলো উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেস্কযুক্ত খাবার। অর্থাৎ এগুলো খেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। শুধু তা–ই নয়, এই প্রক্রিয়াজাত শর্করা খাবারগুলো মস্তিষ্কের জন্যও ক্ষতিকর। যাঁদের মেনোপজ চলে অর্থাৎ মাসিক স্থায়ীভাবে প্রাকৃতিকভাবে বয়সজনিত কারণে বন্ধ হয়ে গেছে, এই খাবারগুলো এমন নারীদের মধ্যে বিষণ্নতা বাড়ায়। বরং সুপারশপে গিয়ে লাল চাল, লাল আটা—এগুলো তুলে নিন।
৫.আমরা রেস্তোরাঁর ফাস্টফুড খেতে কতই না ভালোবাসি। অথচ পিৎজা, বার্গার, পাস্তা—যা-ই বলুন না কেন, এগুলো উচ্চ ফ্যাট ও লবণযুক্ত খাবার। ফলে স্যাচুরেটেড ফ্যাটে আলঝেইমারের ঝুঁকি বাড়ে। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপের ফলে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ব্রেইন ফগের সৃষ্টি হয়। ফলে মনোযোগ ধরে রাখা ও সৃজনশীল কাজ করা কঠিন হয়ে যায়।
৬.অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনে মস্তিষ্কে মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী অ্যালকোহল ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্কের আয়তন হ্রাস, বিপাকীয় পরিবর্তন এবং নিউরোট্রান্সমিটারের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। যেসব ব্যক্তি বেশি পরিমাণে অ্যালকোহল গ্রহণ করেন তাদের মধ্যে প্রায়শই ভিটামিন বি১ এর ঘাটতি থাকে, যা ওয়ার্নিকের এনসেফেলোপ্যাথি নামে একটি মস্তিষ্কে ব্যাধি সৃষ্টি করতে পারে।
৭.পারদ একটি ভারী ধাতব সংশ্লেষ এবং একটি স্নায়বিক বিষ যা প্রাণীর টিস্যুতে দীর্ঘকাল ধরে সংরক্ষিত থাকতে পারে। দীর্ঘজীবী শিকারী মাছগুলোর শরীরে পারদ জমে এবং তাদের আশেপাশের পানির ঘনত্বের পরিমাণ ১ মিলিয়নেরও বেশি বহন করে। যদি কোনো ব্যক্তি পারদ গ্রহণ করে তবে এটি মস্তিষ্ক, যকৃত এবং কিডনিতে ঢুকে করে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি প্লাসেন্টা এবং ভ্রূণেও ছড়িয়ে পড়ে। পারদের বিষক্রিয়া কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র এবং নিউরোট্রান্সমিটারের বিঘ্ন ঘটায়। এতে মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে। উচ্চ পারদযুক্ত মাছের মধ্যে হাঙর, সওয়ার্ডফিশ, টুনা, কিং ম্যাকেরেল এবং টাইল ফিশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বাদাম, ডার্ক চকলেট, মাছের তেল, মাছ-মাংসের হাড়, ব্রোকলি, ফুলকপি, ডিম, ব্লুবেরি, অ্যাভোকাডো, কফি, মিষ্টিকুমড়ার বীজ, গ্রিন টি, পালংশাক, টাটকা শাকসবজি, কমলা, লাল চাল, চা, কফি—মস্তিষ্কের জন্য খুবই ভালো। এমন খাবারের তালিকা আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে রাখা উচিত।এতে করে আমরা সুস্থ থাকতে পারবো অনেকদিন।
বাংলা ম্যাগাজিন / এমএ