এক্সক্লুসিভবাংলা ইনসাইডার

রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন গওহর রিজভী ?

রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন গওহর রিজভী ? ড. গওহর রিজভী। ২০০৯ সালের আগে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রায় অনালোচিত একটি নাম ছিলো। বিদেশে অধ্যাপনা করতেন এবং একজন শিক্ষক পণ্ডিত হিসেবেই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তার সুনাম এবং সুখ্যাতি ছিলো। কিন্তু সেই গওহর রিজভী ২০০৯ সালের নির্বাচনের পর আলোচনায় আসেন।

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে মন্ত্রিসভা গঠনের এবং উপদেষ্টামন্ডলী গঠনের কিছুদিন পর গওহর রিজভীকে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এসময় অনেকেই চমকে উঠেছিলেন। গওহর রিজভীকে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই চিনতেন না। দুই একজন যারা গওহর রিজভীকে জানতেন তারাও কম অবাক হননি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা জানতেন যে গওহর রিজভী কিছু একটা হবেন। গওহর রিজভী পাদপ্রদীপে আসেন ওয়ান-ইলেভেনের সময়।

এই সময় ড. ফখরুদ্দীন আহমদের সরকার আওয়ামী লীগ সভাপতিকে প্রহসনের কিছু মামলায় গ্রেপ্তার করেন। এসময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলে নানা রকম আলাপ-আলোচনা, দরকষাকষি। মুক্তির জন্য পর্দার আড়ালে নানারকম মেরুকরণ সৃষ্টি হয়। এই মেরুকরণে অন্যতম কুশীলব ছিলেন ড. গওহর রিজভী। মূলত, ড. গওহর রিজভী শেখ হাসিনার মুক্তির সমঝোতার অন্যতম একজন ব্যক্তি ছিলেন বলে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রগুলো জানায়। সে কারণেই গওহর রিজভী ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গওহর রিজভী’র একটি ভূমিকা রয়েছে, একটি গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোতে তার পরিচিতি আছে, সুনাম আছে এবং একজন শিক্ষিত মার্জিত সংবেদনশীল ব্যক্তি হিসেবে তিনি বিশ্ব পরিমণ্ডলে পরিচিত।

আর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন সংকটেও তাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা গেছে। বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচন নিয়ে যখন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিলো, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছিলো, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন সেই সময় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে গওহর রিজভী নির্বাচন কেন অপরিহার্য এবং সাংবিধানিকভাবে এই নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা কি তা চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করেছিলেন। অনেকেই মনে করেন গওহর রিজভী’র এই কূটনৈতিক তৎপরতার কারণে ওই নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গ্রহণযোগ্যতা পায়।

কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকেই গওহর রিজভী আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নেন। একটি গবেষণা কাজের জন্য তিনি অধিকাংশ সময় এখন যুক্তরাজ্যে অবস্থান করেন। তবে যেখানে অবস্থান করুক না কেন আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। আগামী নির্বাচনটি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ হবে। বিশেষ করে ওই নির্বাচনে বিরোধী দলগুলো অংশগ্রহণ করবে কিনা তা এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনে ১৫০ আসনে ইভিএম করার ঘোষণা দিয়েছে। এই ঘোষণার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহল থেকেও হচ্ছে, আগামী নির্বাচন অর্থবহ করতে হবে, সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে এবং জনগণের মতামতের প্রতিফলন যেন হয় সেটির গ্যারান্টি দিতে হবে। এরকম একটি বাস্তবতায় আগামী এপ্রিলে যে নতুন রাষ্ট্রপতি হবেন তার ভূমিকা নানাভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

বিশেষ করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এই নির্বাচন নিয়ে যে প্রশ্নগুলো হবে সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া এবং একটি অর্থবহ নির্বাচনের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আগামী রাষ্ট্রপতি হবেন গুরুত্বপূর্ণ। আর সে কারণেই রাষ্ট্রপতি পদে গওহর রিজভী’র নাম আসছে। আগামী রাষ্ট্রপতি দেশে কতটুকু পরিচিত বা কতটুকু গ্রহণযোগ্য, সেটির চেয়েও বড় বিষয় হবে আগামী রাষ্ট্রপতি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কতটুকু আস্থাভাজন এবং গ্রহণযোগ্য। সেই বিবেচনা থেকেই আওয়ামী লীগে গওহর রিজভী’র বিকল্প খুব কম আছে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আর এ কারণেই আগামী রাষ্ট্রপতি হিসেবে যদি গওহর রিজভীও সামনে চলে আসেন তাহলে অবাক হবার কিছু নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।

একটি মন্তব্য

Back to top button