নির্বাচনের আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভাঙা-গড়ার খেলা চলে। জোট ভাঙ্গে, জোট গড়ে। সেই প্রক্রিয়ায় বিএনপি বড় ধরনের ভাঙ্গড়ের মুখোমুখি হচ্ছে। বাংলা ইনসাইডারের অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া হয়ে গেছে যে, নতুন বিএনপি আত্মপ্রকাশের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত প্রায়। নতুন বিএনপিতে বিকল্পধারার প্রধান, বিএনপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নেতা এবং প্রথম মহাসচিব অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী চেয়ারম্যান হচ্ছেন এবং নতুন বিএনপির মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পেতে পারেন এলডিপির প্রধান, বিএনপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নেতা কর্নেল (অব:) অলি আহমেদ।
এই দুই নেতার বাসায় বিএনপির একাধিক নেতার গোপন বৈঠকের তথ্য বাংলা ইনসাইডারের হাতে এসেছে। জানা গেছে যে, বিএনপিকে সন্ত্রাসী দুর্বৃত্তদের হাত থেকে মুক্ত করা এবং খুনি লুটেরাদের থেকে জিয়ার আদর্শকে রক্ষা করার জন্যই এই নতুন বিএনপি গঠন করা হচ্ছে। বর্তমানে যারা বিএনপির নেতৃত্বে আছেন সেই নেতৃত্বের একটি বড় অংশ নতুন বিএনপিতে যোগদান চূড়ান্ত পর্যায়ে বলে জানা গেছে। স্থায়ী কমিটির অন্তত চারজন সদস্য নতুন বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন। এছাড়াও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একটি বড় অংশ নতুন বিএনপিতে যোগ দেবেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। গত একমাসে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং মাহী বি’র সাথে বিএনপির শ’খানেক বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার বৈঠক হয়েছে।
একই সাথে কর্নেল অলি আহমেদের বাসভবনেও বিএনপি নেতাদের পৃথক পৃথক বৈঠক হয়েছে।বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে যে, এই নতুন বিএনপি গঠনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সমর্থনও রয়েছে। তবে এর সঙ্গে সরকারের কোনো সংশ্রব নেই বলে বিএনপির একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছে। আগামী নির্বাচনে সরকারকে আনচ্যালেঞ্জড ছেড়ে না দেওয়ার প্রত্যয় থেকেই নতুন বিএনপি গঠন করা হয়েছে বলে উদ্যোক্তাদের একজন জানিয়েছেন। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং কর্নেল (অব:) অলি আহমেদের ঘনিষ্ঠরা বলছেন যে, তারেক জিয়া জিয়ার আদর্শ থেকে বিএনপিকে বহুদূর দিয়ে গেছেন।
বদরুদ্দোজা চৌধুরীর এক ঘনিষ্ঠ অনুসারী বাংলা ইনসাইডারকে বলেছে যে, জিয়াউর রহমান একটি সৎ এবং দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল গঠন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তারেক জিয়া এখন জিয়াউর রহমানকেই বিএনপি থেকে নির্বাসিত করেছেন। তারেক জিয়ার কারণে বিএনপি এখন কতদূর অসৎ, দুর্বৃত্তদের একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। দুষ্কৃতিকারীরাই এখন বিএনপির হর্তাকর্তা হয়েছে বলেও ওই নেতা মন্তব্য করেছেন। বিএনপিতে জিয়ার আদর্শ রক্ষার জন্য তারেক জিয়াকে এখন বিএনপি থেকে বাদ দিতে হবে, এই শ্লোগানটি এখন মুখ্য হয়ে উঠেছে। গত কিছুদিন ধরে বিএনপিতে তারেক জিয়াকে নিয়ে উত্তাপ চলছে। বিশেষ করে স্বৈরাচারী কায়দায় দল পরিচালনা করা, দলের সিনিয়র নেতাদেরকে অপমান-অপদস্থ করা এবং দলের নীতি-আদর্শকে অনুসরণ না করার অভিযোগ উঠেছে তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন যে, স্থায়ী কমিটি হলো দলের সবচেয়ে নীতিনির্ধারক সংস্থা। কিন্তু সেটিকে অকেজো করে রাখা হয়েছে। বিএনপির গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে একের পর এক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে, যেটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই বাস্তবতায় প্রথমে বিএনপির কিছু নেতা কর্নেল (অব:) অলি আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কর্নেল (অব:) অলি আহমেদ নিজেই বিএনপির প্রধান হতে চেয়েছিলেন কিন্তু নানা বাস্তবতায় শেষ পর্যন্ত অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে সামনে আনা হচ্ছে বলে জানা গেছে। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর তাকে রাষ্ট্রপতিও করা হয়েছিলো। কিন্তু রাষ্ট্রপতি হয়ে তিনি নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করায় তাকে বিএনপি রাষ্ট্রপতি থেকে অভিশংসনের উদ্যোগ নেয়। ইমপিচমেন্টের আগেই অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী পদত্যাগ করেন। এরপর তিনি নতুন রাজনৈতিক দল বিকল্পধারা গঠন করেন। বিকল্পধারা রাজনৈতিক অঙ্গনে তেমন সফল না হলেও অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ইমেজ রয়েছে বলে বিএনপির বিদ্রোহী নেতারা মনে করেন।তাছাড়া অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী একজন জিয়ার সৈনিক হিসেবেও বিবেচিত। বি চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ একজন রাজনৈতিক নেতা বলেছেন যে, সরকার আগামী নির্বাচনে ফাঁকা মাঠে গোল করতে চাইছে এবং বিরোধী দলগুলো যেন নির্বাচনে না আসে সেই চেষ্টা করছে।
সেক্ষেত্রে যদি জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করা যায় তাহলে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয় অনিবার্য। আর এ কারণেই নতুন বিএনপি গঠন করা হচ্ছে বলে তারা দাবি করেছেন। তবে এই উদ্যোগ সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য সদস্য বলেছেন যে, নির্বাচন এলেই ভাঙা-গড়ার খেলা চলে। বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা বহুবার বহুভাবে করেছে। এর পেছনে সরকারের মদদ রয়েছে বলেও স্থায়ী কমিটির ওই সদস্য উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন যে, বিএনপিকে যতই ভাঙ্গার চেষ্টা করা হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত বিএনপি ভাগ হবে না।
তিনি এটিও দাবি করেছেন যে, বিএনপি থেকে যদি কিছু লোক বেরিয়ে যায় তবুও বিএনপির কোনো ক্ষতি হবে না। তার মতে জিয়া পরিবার ছাড়া বিএনপি অর্থহীন এবং সেটি বিএনপি হিসেবে জনগণের কাছে বিবেচিত হবে না।
বাংলা ম্যাগাজিন /এনএইচ