আটকে গেল শিক্ষা কর্মকর্তাদের নতুন পদোন্নতি বিধিমালা
সহকারী থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের (এটিইও) মধ্য থেকে থানা শিক্ষা অফিসার (টিইও) পদে পদোন্নতির কোটা ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮০ শতাংশে বৃদ্ধির সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশনা সম্বলিত হাইকোর্টের রায়টি ছিল জাল। এই রায় জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছেন হাইকোর্ট। এর সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।বিচারপতি নাঈমা হায়দারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ গতকাল বুধবার এই রায় দিয়েছেন।
বেঞ্চের অপর দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি কাজী জিনাত হক।হাইকোর্ট বলেছেন, এটিইওদের পদোন্নতির বিষয়ে দুটি রায় দেখা যাচ্ছে। একটি রুল খারিজের, অন্যটি রুল মঞ্জুরের (অ্যাবসলুটের)। আমাদের পর্যবেক্ষণ হলো এখানে জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। রুল খারিজ করা হলো।জাল রায়ের ভিত্তিতে এটিইওদের মধ্য থেকে টিইও পদে পদোন্নতির কোটা ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮০ শতাংশ করতে বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বর্তমানে সংশোধিত ওই পদোন্নতির বিধিমালাটি পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসির) অনুমোদনেরঅপেক্ষায় আছে। হাইকোর্টের নতুন রায়ের ফলে সেই উদ্যোগ আটকে গেল।হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ বুধবার যে রায় দিয়েছেন, ওই রায়ের কপি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, পিএসসির সচিব এবং প্রাথমিক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার এবং আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ মশিউর রহমান।জানা যায়, পিএসসির সুপারিশক্রমে ‘প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেটেড অফিসার ও নন-গেজেটেড কর্মচারীদের নিয়োগ বিধিমালা-১৯৮৫’ তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এই বিধিমালায় এটিইওদের মধ্য থেকে টিইও পদে পদোন্নতির জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রাখা হয়। আর বাকি ৫০ শতাংশ টিইও সরাসরি নিয়োগের বিধান রাখা হয়। ১৯৯১ সালে এটিইওদের মধ্য থেকে ৮০ শতাংশ টিইও নিয়োগের জন্য শিক্ষা সচিব বরাবর সুপারিশ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। কিন্তু ১৯৯৪ সালে এই বিধিমালা সংশোধন করে এটিইও থেকে টিইও হওয়ার কোটা ২০ শতাংশে নামিয়ে আনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০০২ সালে আবারও এই কোটা ৮০ শতাংশ করার সুপারিশ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। পরে কোটা কমাতে ১৯৯৪ সালে করা বিধি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন এটিইও মুন্সি রুহুল আসলাম।
২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রিটটি পর্যবেক্ষণসহকারে খারিজ করে রায় দেন বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি জাফর আহমেদের বেঞ্চ।এরপরই রায় জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। রুল মঞ্জুর হয়েছে মর্মে জাল রায় তৈরি করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের কাছে দাখিল করে রিটকারীপক্ষ। জাল রায়ে বলা হয়, ২০০২ সালে কোটা বাড়ানোর যে সুপারিশ করা হয় তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। জাল রায়ের আলোকে ১৯৮৫ সালের বিধিমালা পুনরায় সংশোধনের উদ্যোগ নেয় সরকার। সংশোধিত বিধিমালায় হাইকোর্টের (জাল) রায়ের আলোকে এটিইওদের মধ্য থেকে টিইও পদে পদোন্নতির কোটা ৮০ শতাংশ করার বিধান করা হয়।
পরে শিক্ষা কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিপক্ষ এই রায় জালিয়াতির বিষয়টি টের পেয়ে যায়। তারা একই রিট আবেদন খারিজ ও রিট আবেদন মঞ্জুরের ভিন্ন দুটি নকল সার্টিফায়েড কপি হাতে পান। পরে বিষয়টির তদন্ত চেয়ে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর চিঠি লেখেন ফেনী পিটিআই ইন্সট্রাক্টর ও বাংলাদেশ পিটিআই কর্মকর্তা সমিতির আইন সম্পাদক জাকির হোসেন। সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন রায় জালিয়াতির ব্যাপারে প্রাথমিক অনুসন্ধানে সত্যতা পেলে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এই জাল রায়ের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করেন। ওই বেঞ্চই বুধবার রায় দেন।
বাংলা ম্যাগাজিন /এনএইচ