রোহিঙ্গা সংকট বৈশ্বিক সংকট সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্বুদ্ধ করতে পারেনি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের একার সংকট নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট যে একটি বৈশ্বিক সংকট, বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সে বিষয়ে যথাযথভাবে উদ্বুদ্ধ করতে পারেনি। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে পাঠাতে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রোহিঙ্গা সংকটের পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারে ব্যর্থতার সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনকে শুধু কাগুজে চুক্তিতে বন্দী না রেখে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় চুক্তির কার্যকর প্রয়োগের পথে এগোতে হবে। এই সংকট সমাধানে জাতিসংঘ, আঞ্চলিক সংস্থা, বিশ্ব পরাশক্তিগুলোর নিজ নিজ ভূমিকা সুনিশ্চিত করতে হবে।

কার্যকর কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে জাতিসংঘসহ আঞ্চলিক মহলকে বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতার কথা উপলব্ধি করাতে হবে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া হতে হবে স্বেচ্ছায়, মিয়ানমারের নাগরিকত্ব নিয়ে, সম্মানজনক ও টেকসই। কোনো ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের পাতানো খেলার অপকৌশল হিসেবে নয়।

এ প্রসঙ্গে স্বাধীনতা–উত্তর বাংলাদেশের শরণার্থীদের ভারত থেকে ফেরানোর ঘটনা উল্লেখ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘১৯৭৩ সালে যখন বাংলাদেশ থেকে শরণার্থী ভারতে গেল, তখন কিন্তু একটা সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা সারা বিশ্ব সফর করেন বিশ্ব নেতাদের বোঝাতে যে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। জিয়াউর রহমানও একইভাবে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করার জন্য গোটা পৃথিবী সফর করেছেন। দুর্ভাগ্যক্রমে এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী তো নয়ই, তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ কোনো মন্ত্রীরও এ বিষয় নিয়ে উদ্যোগ দেখিনি।’

লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, বিশ্বের অন্যান্য মানবিক সংকটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেভাবে সাড়া দেয় বা তৎপর হয়, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তারা সেভাবে এগিয়ে আসেনি। এটা নিঃসন্দেহে সরকারের চরম কূটনৈতিক ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই নয়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়াটি একেবারেই স্থবির হয়ে পড়েছে। সরকার তাদের প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই সংকটকে এখন আর গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না বিশ্ব।

মির্জা ফখরুল বলেন, ২০২১ সালে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন ইস্যুটি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। এই পটভূমিতে ভারত, চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের দেশগুলোসহ আন্তর্জাতিক মহল আরও কার্যকর ও ফলপ্রসূ চাপ না দিলে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পাঠানো সম্ভব নয়।

এ জন্য মিয়ানমারের সামরিক জান্তার ওপর প্রচণ্ড জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে। ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে প্রায় ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা চট্টগ্রামের কক্সবাজারে প্রবেশ করে। এই সংখ্যা এখন ১২ লাখ ছাড়িয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রশ্নে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক—তিন দিক থেকেই বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়েছে। জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার সময় তাঁরা রোহিঙ্গাদের সফলভাবে ফেরত পাঠিয়েছিলেন। এ রাজনৈতিক প্রশ্নটা যখন বারবার উঠছে, এটা থেকে বের হওয়ার জন্য সরকার নির্বাচনের আগে হয়তো কিছু প্রতীকী লোকজন পাঠিয়ে জাতিকে, বিশ্বকে দেখাবে যে আমরাও প্রত্যাবর্তন করাচ্ছি, আমরাও সফল হয়েছি।’

আমীর খসরু অভিযোগ করেন, প্রথম থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল বাংলাদেশ সরকার। পরে মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান ছিল। যে বিষয়টা লক্ষণীয়, মিয়ানমারের গণহত্যার বিষয়ে আইসিসির আদালত, এটাও কিন্তু ওআইসির উদ্যোগে গাম্বিয়ার মাধ্যমে করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের এখানে কোনো ভূমিকা নেই। বাংলাদেশ সরকারের চেয়ে বাইরের সরকারের মানবাধিকারে যারা বিশ্বাস করে, তাদের ভূমিকাই বেশি।

বিএনপির আন্তর্জাতিক কমিটির প্রধান আমীর খসরু আরও বলেন, কিন্তু শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণভাবে প্রত্যাবর্তনের যেসব বিষয় প্রযোজ্য, সেটার বাইরে গিয়ে তারা (সরকার) যদি কিছু করতে চায়, সেটা শরণার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না, বাংলাদেশের জনগণের কাছেও গ্রহণযোগ্য হবে না।

বাংলা ম্যাগাজিন / এমএ

৭ মন্তব্য

  1. সব ম*ন্ত্রীর নজর টাকা চুরি আর পাচারের দিকে থাকলে নজর দেবে কিভাবে ওরাই তো বড় রো*হিঙ্গা

  2. তো আপনারা করেন।ক্ষমতার কি দরকার।দেশেে জন্য কাজ করেন।

    তা তো করবেন না😁
    আপনারা ক্ষমতার লোভী। দেশ প্রেমিক না।তা আপনাদের কর্মে প্রকাশ পায়।

  3. বাংলাদেশের জন্য রোহিংগা সংকট অত্যন্ত জটিল ও প্রয়োজনীয় একটি মানবাধিকার মহাসংকট। যা অবশ্যই কূটনীতিক ব্যর্থতা নয় । মানুষের জান মাল বাঁচানো ও রক্ষ করা জরুরি ছিল । সে জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ভাবে অনেক প্রশংসার অধিকারী হয়েছে । সেই সাথে অনেক সাহায্য পায় রোহিংগাদের জন্য । এটি মোটেও কূটনৈতিক ব্যর্থতা নয়, বরং অতি উচ্চ মাত্রার মানবতার পরিচয় । আবল তাবল বকলে হয় প্রতিপন্ন হতে হবে ।

Back to top button