দেশে শিশু ও নারী অপহরণের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি

চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ৬৩ নারী ও শিশু অপহরণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ জনই শিশু ও কিশোরী, যাদের বয়স এক থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। গত সাত মাসে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে জানা যায়, তুচ্ছ কারণেই অপহরণ এবং পরবর্তী সময়ে হত্যা ও ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটছে। অপহরণের টার্গেট হচ্ছে শিশু ও কিশোরীরা।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ জানায়, ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ৭৪০ নারী ও শিশুকে অপহরণ করা হয়। এর মধ্যে ২০২১ সালে ১৮০ জন, ২০২০ সালে ১২৫ জন, ২০১৯ সালে ১৪৭ জন, ২০১৮ সালে ১৪৫ জন, ২০১৭ সালে ১৪৩ জন ও ২০১৬ সালে ১৩২ জন ছিল।

জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এ ছয় মাসে মোট ৫০ শিশু অপহরণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে ৪৪ জনকে। বেশির ভাগ ভুক্তভোগী শারীরিক নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার।

আর দুজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।অপহরণের শিকার শিশুদের পরিবারও পরে মামলা করতে চায় না। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হয়ে থাকে।সাত মাসে অপহরণের শিকার ৬৩ নারী ও শিশুর মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ছিল ১২ থেকে ১৮ বছরের স্কুলছাত্রী।

সারা দেশে সংঘটিত অপহরণের মধ্যে গত ছয় মাসে নারায়ণগঞ্জে ১০টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে।পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অপহরণের বেশির ভাগ কারণ ছিল প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়া, পাচার, পূর্বশত্রুতা ও জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধ।

গত ৫ মার্চ ঝিনাইদহে প্রাইভেট পড়া শেষে সহপাঠীকে নিয়ে রিকশায় বাসায় ফিরছিলেন কলেজছাত্রী। এ সময় রাস্তা থেকে ওই শিক্ষার্থীকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে অপহরণ করে গাফফার ও তার সহযোগীরা। অপহৃত শিক্ষার্থীকে এসিড নিক্ষেপ ও দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়, যাতে তিনি চিৎকার না করেন।

জানা যায়, ২০১৯ সাল থেকে গাফফার মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করতেন এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে হয়রানি করতেন। মেয়েটির পরিবারকে বিয়ের জন্য বিভিন্নভাবে চাপ ও হুমকি দিতেন। মেয়ের পরিবার বিয়েতে অস্বীকৃতি জানালে গাফফার তাঁকে অপহরণ করেন। ৭ মার্চ র‌্যাব অপহৃত কলেজ শিক্ষার্থীকে উদ্ধার এবং গাফফার ও তাঁর দুই সহযোগী সাব্বির হোসেন ও হাফিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে।

গত জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত মোট ১০৮ জন অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে। শিশু, নারী ও পুরুষ মিলিয়ে মোট অপহৃত হয়েছে ১০২ জন। অপহরণের ক্ষেত্রে একটি মামলার বিপরীতে তিন-চারজন গ্রেপ্তার হয়।

ছয় মাসে গড়ে প্রায় ৩০টি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে তারা। এর মধ্যে শুধু সাম্প্রতিক নয়, দীর্ঘ সময় ঝুলে থাকা মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ সময়ে অপহরণ শেষে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ৯ জন। হতাহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ৩৪ জনকে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক নীনা গোস্বামী বলেন, অপহরণের মামলা করা হলেও মূল উদ্দেশ্যই থাকে সমঝোতা করা। এ জন্য অনেক সময় অপরাধ প্রমাণ করাও কঠিন হয়ে পড়ে। যে কারণে শাস্তির নজির পাওয়া যায় না। নীনা গোস্বামী আরো বলেন, বেশির ভাগ অপহরণের উদ্দেশ্যই থাকে ধর্ষণ করা। এর বাইরে অপহরণের শিকার শিশুদের হত্যা ও অঙ্গহানি প্রতিনিয়ত হচ্ছে।

অপহরণ রোধে ২০১৪ সালের মে মাসে অ্যান্টিকিডন্যাপিং স্কোয়াড নামে ৪০ সদস্যের বিশেষ দল গঠন করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এই স্কোয়াডে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য হটলাইন নম্বরও চালু করা হয়। নম্বরটিতে ফোন দিলে সেটি আর ব্যবহার করা হয় না বলে বার্তা আসে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘ডিএমপির অ্যান্টিকিডন্যাপিং স্কোয়াড আর খোলার কথা ভাবছি না। অপহরণের ঘটনা আমরা বেশ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করি। অ্যান্টিকিডন্যাপিং স্কোয়াড না খুলেই আমরা সার্বক্ষণিক এ বিষয়ে সজাগ। ’

বাংলা ম্যাগাজিন এস/কে 

Exit mobile version