কয়েক দিনের ব্যবধানে ডিমের দাম আবার কমতে শুরু করেছে

দেশে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে ‘রকেটগতিতে’ বেড়ে যায় ডিমের দাম। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের খুচরা বাজারে তখন প্রতি হালি ডিমের দাম ৫৫ টাকার বেশি বিক্রি হয়।তবে কয়েক দিনের ব্যবধানে দাম আবার কমতে শুরু করেছে। এখন ঢাকার খুচরা বাজারে হালিপ্রতি ডিম মিলছে ৪০ থেকে ৪২ টাকা বা তার একটু ওপরে।

অর্থাৎ, দাম বাড়ার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে ডিমের বাজার।কারওয়ান বাজারের পাইকারি ডিম বিক্রেতা লিটন আহমেদ বলেন, ‘সরবরাহ কম থাকায় মাঝে হঠাৎ করে ডিমের দাম বেড়ে যায়। তিন-চার দিন হলো দাম কমে আগের অবস্থায় চলে এসেছে। একলাফে হালিতে ডিমের দাম কমেছে ১৫ টাকার মতো। দাম কমায় বেচাকেনাও ভালো।’

আজ বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও মগবাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বিক্রেতারা এখন বাদামি রঙের এক ডজন ডিমের দাম রাখছেন ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। ফার্মের মুরগির সাদা রঙের ডিমের দাম ডজনপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা কম। আর দেশি হাঁস ও মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা ডজনে। বাজারে ডিমের সরবরাহেও সংকট নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

চলতি আগস্টের প্রথম দুই সপ্তাহ পর্যন্ত খামার পর্যায়ে ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের প্রতিটি ডিমের দাম রাখা হয়েছে ৯ টাকা ৭৩ পয়সা। আর খামারিরা সাদা রঙের ডিম পাইকারিতে বিক্রি করেছে ৯ টাকা ৪০ পয়সায়। সেই হিসাবে হঠাৎ করে বাজারে ডিমের দাম যখন বাড়ল, তখন খামারিরা বাড়তি মূল্য না পেলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা বড় অঙ্কের মুনাফা করেছে। এতে ডিমের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে।এ কথাগুলো বলছে  বিপিআইসিসি।

বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) তথ্য বলছে, দেশে প্রতিদিন চার কোটির বেশি ডিম উৎপাদিত হয়। উৎপাদিত এসব ডিমের বড় অংশ আসে গ্রামের খামার থেকে। পচনশীল পণ্য হওয়ায় এসব ডিম দ্রুত পরিবহন করে দেশের বড় বাজারগুলোতে নিয়ে আসা হয়। সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে বেড়েছে পরিবহন ব্যয়। কিন্তু তার প্রভাব ডিমের ওপর খুব বেশি পড়ার কথা না থাকলেও ডিমের দাম হালিতে ১৫ টাকার বেশি বেড়ে যায়।

এদিকে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠপর্যায়ে অভিযানে নামে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আবার ডিমের দাম না কমলে সরকার বিদেশ থেকে আমদানির অনুমতি দিতে পারে—এমন ঘোষণার পর বাজারে ডিমের দাম কমতে শুরু করে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিম আমদানি করলেও খরচ বেশি পড়বে; কারণ, পরিবহন ব্যয় বেশি এবং ডিমের সংরক্ষণ পদ্ধতি ব্যয়বহুল। এতে দেশীয় খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়বেন। এর চেয়ে বরং খামারিদের সুরক্ষা দিয়ে বাজার তদারকির মাধ্যমে সংকটের সমাধান চান তাঁরা।

বাংলাদেশ এগ প্রোডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ‘ডিমের দাম এখন কমে এসেছে। আগের দামে ১২০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ডিম। বাজার এখন স্থিতিশীল, হঠাৎ করে দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই।

তবে ডিমের উৎপাদন ধরে রাখতে হবে। উৎপাদন ব্যাহত হলে দ্রুত বাজারে প্রভাব পড়বে। তাই খামারিদের সুরক্ষা দেওয়ার বিকল্প নেই।’ তবে ডিমের বাজার অস্থিতিশীলতার জন্য বড় খামারি ও করপোরেট ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা করার প্রবণতাকে দায়ী করেন তিনি।

অন্যদিকে খামারিরা বলছেন, মুরগির খাবার ও ওষুধের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এতে উৎপাদন খরচ বাড়তি। লোকসানে পড়ে অনেক খামারি মুরগির সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছেন। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর খামারিদের সুরক্ষা দেওয়া না গেলে চাহিদার তুলনায় ডিমের সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে। এখন প্রশাসনের চাপাচাপি ও চাহিদা পড়ে যাওয়ায় ডিমের দাম স্বাভাবিকভাবে কমে এলেও উৎপাদন খরচের বাড়তি চাপ সামাল দিতে খামারিরা হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২২ অনুযায়ী, দেশে বছরে প্রায় দুই হাজার কোটি ডিম উৎপাদিত হয়। দেশে উৎপাদিত ডিম দিয়েই চাহিদা মেটে। এই ডিম খাওয়ার পাশাপাশি একটা বড় অংশ দিয়ে আবার মুরগির বাচ্চাও ফোটানো হয়। ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তথ্যানুসারে, চলতি আগস্ট মাসে দেশে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার চাহিদা ছিল সপ্তাহে গড়ে ১ কোটি ৩২ লাখ।

বাংলা ম্যাগাজিন / এমএ

Exit mobile version