অর্থ ও বাণিজ্যকৃষি, প্রাণী ও পরিবেশঠাকুরগাঁওপঞ্চগড়বাংলাদেশ

পচে যাওয়া আলু মহাসড়কে ঢেলে প্রতিবাদ ও ক্ষতিপূরণ দাবি চাষি ও ব্যবসায়ীদের

হিমাগারে সংরক্ষণ করা আলু পচে যাওয়ায় ক্ষতিপূরণের দাবিতে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় মহাসড়ক অবরোধ করেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।এ সময় চাষি ও ব্যবসায়ীরা আলু ঢেলে মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে আন্দোলনকারী ব্যক্তিদের সরিয়ে দিলে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

আজ মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে আলুচাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে মহাসড়কের ঠাকুরগাঁও পৌর এলাকার রাহবার হিমাগারের সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

আলুচাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতির উপদেষ্টা নুরুল হুদা বলেন, মালিকেরা হিমাগারে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত আলু সংরক্ষণ করেছেন। প্রচণ্ড গরমে দুর্বল মেশিন ঠিকভাবে গুদাম ঠান্ডা রাখতে পারেনি।এ ছাড়া লোডশেডিংয়ের সময় হিমাগার কর্তৃপক্ষ ঠিকমতো জেনারেটরও চালু করেনি। ফলে কৃষকের আলু পচে গেছে।এগুলো আর বাজারে বিক্রির উপযোগী নেই। তাঁরা পচে যাওয়া আলুর ক্ষতিপূরণ চান। ক্ষতিপূরণ না পেলে বড় ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ২৭ হাজার ৬৭৭ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। উৎপাদিত হয়েছে ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৭৯৮ মেট্রিক টন আলু। আলু সংরক্ষণের জন্য জেলায় ১৫টি হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা যায়।

আলুচাষি ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চলতি মৌসুমে হিমাগারগুলোয় প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণের ভাড়া বাড়িয়ে ৫ টাকা ২০ পয়সা করেছে হিমাগার কর্তৃপক্ষ। সে হিসাবে ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা আলু সংরক্ষণ করতে দিতে হচ্ছে ২৬০ টাকা।

আগের বছর ৭০ কেজি ওজনের বস্তার ভাড়া দিতে হতো ২৫০ টাকা। বেশি দরে আলু সংরক্ষণ করেও জেলার প্রায় সব কটি হিমাগারে সংরক্ষণ করা আলু পচে গেছে। এতে চাষি-ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এতে তাঁরা কোনো কোনো ৫০ কেজির বস্তায় ২০ কেজির মতো আলু পাচ্ছেন। কিন্তু আলু পচে গেলেও চাষি-ব্যবসায়ীকে বস্তার ভাড়ার পুরোটাই দিতে হচ্ছে।

সদর উপজেলার শিবগঞ্জ এলাকার আলুচাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি গোবিন্দনগরের শাহী হিমাগারে ৩৯৬ বস্তা আলু সংরক্ষণ করেছিলাম। তার মধ্যে ১৫৭ বস্তা আলু পচে গেছে। এতে আমার দুই লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিপূরণ না দিলে আমি পথে বসে যাব।’

সদর উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের আলুচাষি নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এ কাদের হিমাগারে ৫ হাজার ৭০০ কেজি আলু রেখেছিলাম। বের করতে গিয়ে ৫০ কেজি বস্তার প্রতি বস্তায় পচা আলু বের হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ কেজি। এতে আমার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হিমাগার কর্তৃপক্ষ আমার আলু পচিয়ে দিলেও ভাড়া কিন্তু তারা পুরোটাই নিচ্ছে।’

রুহিয়া এলাকার আলুচাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, শহরের রাহবার হিমাগারে ৩০০ বস্তা আলু রেখেছিলেন। বের করতে গিয়ে দেখা গেল অর্ধেকের বেশি আলু পচে গেছে। হিমাগারে ২ লাখ ৪১ হাজার টাকার আলু সংরক্ষণের পর তিনি হাতে পান ৮৭ হাজার টাকা। পচে যাওয়া আলুর বস্তার ভাড়া মওকুফ করলেও সান্ত্বনা পেতেন।

বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন ঠাকুরগাঁওয়ের সভাপতি মো. আবদুল্লাহ বলেন, আলু নানা কারণেই পচতে পারে। খেত থেকে আলু তোলার পর রোদে পড়ে থাকলে, আলুর মান খারাপ হলেও পচে যায়। চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, হিমাগারের আলু কেন পচেছে, তা নিশ্চিত না হয়ে এটা বলা যাবে না।

ঘণ্টাব্যাপী অবরোধ কর্মসূচিতে জেলা আলুচাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতির উপদেষ্টা নুরুল হুদা, সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হক, আলুচাষি মোহাম্মদ হেলাল, নাসিরুল ইসলাম, আবুল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন। সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা এ অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেন।

বাংলা ম্যাগাজিন / এমএ

Back to top button