তার আগে বলে নিই, আপনারা তো জানেন আমার একটা ছবি সেন্সর বোর্ডে আটকে আছে। সাড়ে তিন বছর। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সেন্সর বোর্ডে। যে রাষ্ট্রের বুকের ভেতর আমি হাসি, খেলি, বিজ্ঞাপন বানাই, সংসার করি, আমার কন্যার সাথে খেলা করি, ষোলোই ডিসেম্বর আসলে গাই “এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি”!সে রাষ্ট্রের সেন্সর বোর্ড নামে একটা অফিস আছে সেগুনবাগিচায়।
সেখানে আটকে আছে আমার ছবি, আটকে আছি আমি। সেগুন আমার প্রিয় গাছ। বাগিচা আরও প্রিয়। এই বাগিচায় আমি আটকে আছি সাড়ে তিন বছর। বাগিচায় শুয়ে শুয়ে আমার নিজেকে ইঁদুর মনে হয়। কলে আটকা যাওয়া নিরীহ ইঁদুরের কথা মনে করে নিজের জন্য নিজেরই খুব মায়া হয়।অনেকে মায়া করে আমাকে বলেন, মুভ অন! একটা ছবিইতো আটকেছে। কি আর এমন বড় সমস্যা। এটা ভুলে গিয়ে পরের ছবিতে মন দিলেইতো হয়।
আমিও তাদের মতো চেয়েছি ভুলে গিয়ে পরের কাজে মন দিতে। ল্যাপটপ খুলে বসে থেকেছি আর দেখেছি কী করে ব্যাকস্পেস হয়ে ওঠে আমার চেয়েও বড় স্ক্রিপ্ট রাইটার। আমার ল্যাপটপের উপরের দিকের কোনায় প্রায় অলক্ষ্যে থাকা বাটনটার দিকে আমি প্রায়ই নিরীহ ইঁদুরের মতো তাকিয়ে থাকি। আর হাসি, খেলি, বিজ্ঞাপন বানাই, গাই “সারে জাঁহা সে আচ্ছা”!জাস্ট একটা ব্যাকস্পেস আপনার জীবনকে কী দুর্বিষহ করতে পারে সেটা আপনি বুঝতেও পারবেন না খুব খেয়াল না করলে।
আপনি ভাববেন আপনি ঠিকই আছেন, ঠিকই ভাবছেন, ঠিকই লিখছেন! কিন্তু আদতে আপনার হয়ে ভাবছে, বলছে, লিখছে ব্যাকস্পেস।ব্যাকস্পেস আমাকে বলে, তুমি কেনো তার চেয়ে বরং বানাও না কোনো কল্পজগতের গল্প? আমি অসহায়ের মতো বলি, আমি তো কেবল আমার চারপাশের গল্পই বলতে জানি মহাশয়!সকাল-সন্ধ্যা-দুপুর অসহায়ের মতো নদীর পাড়ে বসে থেকে দেখি স্রোতেরা নেচে নেচে যায় সুদূরের পানে।
আর আমি বুকের ভেতর জাপটে ধরে থাকি ব্যাকস্পেস। পিতল রংয়ের ঝনঝনে ব্যাকস্পেস।
বাংলা ম্যাগাজিন /এনএইচ