ঝালকাঠির রাজাপুরে নিজ বাড়ির ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন একটি কক্ষ থেকে স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করেছেন স্থানীয় লোকজন। এ ঘটনায় একই পরিবারের আরও তিনজনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার সাতুরিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ তারাবুনিয়া গ্রাম থেকে তাঁদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
লাশ উদ্ধারের সময় ওই কক্ষের শীতাতপনিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্র থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। পুলিশ ধারণা করছে, রাতে এসি থেকে নির্গত ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন ফোরকান হাওলাদার (৪৫) ও তাঁর স্ত্রী মাহিনুর বেগম (৪০)। ফোরকান হাওলাদার ওই গ্রামের মৃত জহিরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে। এ ঘটনায় ফোরকানের ছেলে মাইনুল ইসলাম (১৫), তাঁর ভাইয়ের স্ত্রী মাহফুজা বেগম (৩৪) এবং মাহফুজার চার বছরের মেয়ে সারা মণিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনকে রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
ফোরকানের বড় ভাই সেলিম হাওলদার বলেন, গতকাল রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটর দিয়ে এসি চালানো হচ্ছিল। পরে রাতের কোনো এক সময় এসি থেকে ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। আজ দুপুর পর্যন্ত ওই কক্ষ থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, স্থানীয় আমতলা বাজারে ফোরকানের একটি মুদিদোকান আছে। তাঁর ভাই রুবেল হাওলাদার ঢাকায় ব্যবসা করেন। রুবেল নিজ বাড়িতে একটি একতলা পাকা বাড়ি নির্মাণ করেন। গতকাল রাতে ফোরকান ও তাঁর স্ত্রী এসি লাগানো কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। ওই বাড়ির অন্য একটি কক্ষে মাইনুল ইসলাম এবং আরেকটি কক্ষে মাহফুজা ও তাঁর মেয়ে ঘুমাচ্ছিলেন।
খবর পেয়ে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী, পুলিশ সুপার ফাতিহা ইয়াসমিনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. হুমায়ুন কাজী বলেন, বেলা ১১টার পরও ওই বাড়ি থেকে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। ঢাকা থেকে রুবেল হাওলাদার বারবার মুঠোফোনে কল দিলেও কেউ সাড়া দিচ্ছিল না। পর রুবেল প্রতিবেশীদের কাছে কল করে বিষয়টি জানান।
পরে প্রতিবেশীরা ভবনের ছাদে উঠে সিঁড়ির দরজা ভেঙে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় তাঁরা একটি কক্ষে স্বামী-স্ত্রীকে মৃত অবস্থায় পান। ওই কক্ষের এসি থেকে তখনো ধোঁয়া বের হচ্ছিল। পরে অপর দুটি কক্ষ থেকে তিনজনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে রাজাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুলক চন্দ্র রায় বলেন, স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধারের ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। যে কক্ষ থেকে লাশ উদ্ধার হয়েছে, ওই কক্ষের এসি থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। এসি থেকে সৃষ্ট গ্যাসের কারণে দম বন্ধ হয়ে তাঁদের মৃত্যু হতে পারে।
তবে তাঁদের রাতের খাবারও পরীক্ষা করা হবে। নিহত ব্যক্তিদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা আমির সোহেল বলেন, বদ্ধ ঘরে ধোঁয়া সৃষ্টি হওয়ায় দম বন্ধ হয়ে ফোরকান ও তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আহত ব্যক্তিরাও ওই ধোঁয়ার কারণে অচেতন হতে পারেন। তাঁরা বর্তমানে অনেকটা আশঙ্কামুক্ত।
বাংলা ম্যাগাজিন / এমএ