বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন ছোটবেলা থেকেই দেখতাম। ভাইয়ের পাবলিকে পড়ার সুবাদে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে টুকটাক জ্ঞান ছিল আগে থেকেই। বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানার চেষ্টা করতাম সব সময়। একটা সময় খুব মোহ কাজ করত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি। ভাবতাম একবার সুযোগ পেয়ে গেলেই বুঝি জীবনের পূর্ণতা। তখন অবশ্য জনসাধারণের মধ্যে এমন ধারণা ছিল।
যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়এলাকার মানুষ, সমাজ, পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধবান্ধব—সবাই একটু আলাদা চোখে দেখে। ভাবে, তারা হয়তো ভালো কিছু করবে, এদের প্রতি চাওয়া–পাওয়ার শেষ নেই। ভেবেই নেয়, সুযোগ পেয়েছে মানে আহামরি কিছু করে ফেলতে পারবে। সুযোগ পাওয়া মানেই সার্থকতা। চাকরি সুনিশ্চিত। তারা মেধাবী। যদিও তারা বাস্তবতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার পর সব মোহ–আকাঙ্ক্ষা হারিয়ে গেছে। বড় হচ্ছি, বাস্তবতা উপলব্ধি করছি। মনে হয় সুযোগ না পেলেই ভালো হতো। এত প্রত্যাশা থাকত না কারও, কিছু একটা করে জীবন পার করে দিতে পারতাম। সারা জীবনের জন্য একটা অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা থেকে যেত। না পাওয়া সবকিছুই আসলে সুন্দর। যদিও ভালোকিছু করতে পারিনি, তারপরও একটু জায়গা পেয়েছি। এতেই আলহামদুলিল্লাহ।
এলাকার কেউ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের টি-শার্ট পরে ঘুরে বেড়াত, বারবার তাকিয়ে দেখতাম। পরে দেখতাম কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, কোন বিষয়ে পড়ে। ফেসবুকে যদি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া কারও আইডি পেতাম, সঙ্গে সঙ্গে রিকোয়েস্ট পাঠাতাম।
রিকোয়েস্ট গ্রহণ করলেই ভেতরে আলাদা অনুভূতি কাজ করত। ভাবতাম, আমিও যদি সুযোগ পেতাম, এভাবে ভার্সিটির টি-শার্ট পরে ঘুরে বেড়াতে পারতাম। নিজেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দিতে পারতাম।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আসলে বেকার তৈরি কারখানা। প্রতিবছর এখান থেকে শিক্ষিত বেকার যুবক ডিগ্রি নিয়ে বের হয়। হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় একটা সার্টিফিকেট, যা চাকরির বাজারে কোনো কাজে আসে না। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে প্রতিবছর ৫০ হাজারের মতো বেশি শিক্ষার্থী বের হয়।
অথচ এক বছরে বাংলাদেশে সরকারি–বেসরকারি মিলিয়ে সর্বোচ্চ মোট চাকরির সুযোগ পায় ২৫ হাজার মতো। মোট সনদধারীর অর্ধেক কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার সুযোগ পায়। অন্যদের কী অবস্থা হয় বা হবে, ভেবে দেখেছেন?এর অর্থ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বাকি অর্ধেকই বেকার থাকবে স্বাভাবিকভাবেই। তাদের সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আছে।
যেখানে চাকরিতে একটা শূন্য পদের বিপরীতে আবেদন করে ৩৫ থেকে ৪৫ হাজার, সেখানে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করা কতটা কঠিন। মামু-খালু, টাকার জোর যাদের আছে, তাদের ক্ষেত্রে আলাদা কথা। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি অবশ্য ফেয়ারভাবেই নিয়োগ হয়, কোটাবিহীন।
সরকারের উচিত নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি করা; সেই সঙ্গে ব্যাচেলর ডিগ্রিধারীদের উচিত চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়া, যাতে তাদের দ্বারা কিছু লোকের কর্মসংস্থান হয়। কিছু না হলেও ৫০ থেকে ১০০ জনের পরিবারে আল্লাহ আপনার দ্বারা রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। আপনি তাদের পরিবারে হাসি ফোটাতে পারলেন, সুখ-দুঃখের সঙ্গী হতে পারলেন—এতেই কম কী?
বাংলা ম্যাগাজিন / এমএ