অন্যান্যবাংলাদেশ

‘তেলের দাম বাড়ার লগে বেবাক জিনিসের দাম বাড়ছে,মাছ-ডিম খাওয়া ছাইড়া দিছি

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া পৌরসভার গোরস্থান সড়কের বাসিন্দা আবুল হাশেম (৬৮)। পেশায় গোরখোদক ও ঘটক। মাসিক আয় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। পাড়ার মুদিদোকানে এসেছেন আলু কেনার জন্য। এক কেজি আলু ৩০ টাকা ও ২৫০ গ্রাম মসুর ডাল ৩০ টাকায় কেনেন।

এ সময় মনে পড়ল, ঘরে পেঁয়াজ নেই। বাকিতে আধা কেজি পেঁয়াজ নিলেন। আবুল হাশেম বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ার লগে বেবাক জিনিসের দাম বাড়ছে। মাছ-ডিম খাওয়া ছাইড়া দিছি। আলুভর্তা বেশি খাই।’তিনি বলেন, ‘ইলিশ মাছ কবে খেয়েছি মনে পড়ে না। এক বছর তো হবেই।

মাঝেমধ্যে ডিম, পাঙাশ, তেলাপিয়া কিনে খেতাম। মাছ ও ডিমের দাম বেড়েছে। তাই এক সপ্তাহ ধরে আলুভর্তা খাচ্ছি। আলুভর্তার সঙ্গে কখনো পাতলা ডাল থাকে।’ কারণ হিসেবে আবুল হাশেম বলছেন, আয় বাড়েনি কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে।

আবুল হাশেম ও মো. ইব্রাহিমের কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে মুদি দোকানদার কাওসার হোসেন বলেন, ‘চালের দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। আগে প্রতি হালি মুরগির ডিম ৩০ থেকে ৩২ টাকায় বিক্রি করতাম। এখন ডিমের হালি ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। ডিমের দাম বাড়ায় ক্রেতারা ডিম কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। আগে প্রতি সপ্তাহে এক হাজার ডিম বিক্রি করতাম। এ সপ্তাহে তা কমে ৪০০–তে নেমে এসেছে। ক্রেতা না কমলেও ক্রেতারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছেন।’

আবুল হাশেমের সঙ্গে কথা বলার সময় সেখানে কেনাকাটা করতে আসেন টমটমচালক মো. ইব্রাহিম (৩০)। তিনি বলেন, ‘আমার মাসিক আয় ১০ হাজার টাকা। চারজনের সংসার। ১০-১২ দিন ধরে সবকিছুর দাম বাড়ছে। চালের দাম বাড়ছে। ভাত তো আর কম খাওয়া যায় না।

এখন মাছ, ডিম ও সবজি খাওয়া কমাইয়া দিছি। আলু খাওয়া পড়ে বেশি। আগে মাসে পাঁচ কেজি আলু কেনা হতো। এখন সপ্তাহে দুই কেজি আলু কেনা হয়। তেল ও পেঁয়াজ কেনা কমাইয়া দিছি। সপ্তাহে এক দিন মাছ কিনি। দাম বাড়ার পর ডিম কেনা বন্ধ করে দিছি। মাংস খাওয়ার কথা ভাবতেও পারছি না।’

নরসুন্দর সুভাষ শীল (৫৫) বলেন, ‘আমাদের আয় বাড়েনি। কিন্তু ব্যয় বেড়েই চলছে। মাসে ১৫ হাজার টাকা আয় করে প্রতি মাসে দুই-তিন হাজার সঞ্চয় করতাম। মাসের অর্ধেক শেষ। জিনিসপত্রে দাম বাড়ায় এক টাকাও সঞ্চয় করতে পারিনি।’

পৌরসভার কলেজ সড়কের বাসিন্দা সরকারি চাকরিজীবী এক নারী (৩৫) বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে কাঁচামরিচ, সবজি, চাল, আটা, ডিম, মাছ, মাংস সবকিছুর দাম বেড়েছে। বেতন তো বাড়েনি। সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। বাধ্য হয়ে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনেছি। আগে চিকন চাল খেতাম। এখন মোটা চাল কিনছি। সকালে ডিম, রুটি, চা খেতাম। এখন শুধু চা-রুটি খাচ্ছি। মাছ-মাংস খাওয়া কমিয়ে দিয়েছি। অফিসে রিকশায় যেতে হয়। রিকশার ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় যাতায়াতের খরচ বেড়েছে।’

দক্ষিণ বন্দর কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা নয়ন মিস্ত্রি বলেন, যশোর ও খুলনা থেকে ট্রাকে করে সবজি আসে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর ট্রাকের ভাড়া ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে। এ কারণে সবজির দাম বেড়েছে।

মঠবাড়িয়ার শহরের বিসমিল্লাহ ভান্ডার মুদিদোকানের মালিক নূর হোসেন বলেন, পণ্য পরিবহনের খরচ বাড়ার সঙ্গে পণ্যের দামও বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে।

বাংলা ম্যাগাজিন / এমএ

একটি মন্তব্য

Back to top button