দুই কোটি বছরের পুরোনো হাঙরের দাঁত খুঁজে পেল স্যামি
ছুটির দিন। সকাল থেকেই বোডসি সৈকতে বেড়াতে আসছে মানুষজন। বাবার সঙ্গে ছয় বছর বয়সী স্যামি শেল্টনও এসেছে। স্যামির বাবা পিটার সৈকতে গা এলিয়ে দিলেন। স্যামি কি আর বসে থাকার পাত্র! সমুদ্রের তীরে ছোটাছুটি করতে করতে কুড়াতে লাগল শামুক, ঝিনুক, পাথর, আরও কত কী। এত দূর পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু হুট করে বালুকাবেলায় একটা দাঁত খুঁজে পেল স্যামি!
দাঁতটা নিয়ে তাই বাবার কাছে ছুটে গেল স্যামি। জানতে চাইল, এটা কী? পিটার আগে হাঙরের দাঁত দেখেছেন। তবে এত বড় কখনো দেখেননি। আর জিনিসটা ফসিল। ফসিল কী জানো তো? সহজ ভাষায় ফসিল বা জীবাশ্ম হলো, হাজার হাজার বছর আগের কোনো প্রাণীর পাথর হয়ে যাওয়া হাড় বা দাঁত। জিনিসটা ঠিকঠাক চিনতে না পারলেও পিটার বুঝতে পেরেছিলেন, গুরুত্বপূর্ণ কিছু খুঁজে পেয়েছে তাঁর পুত্র।
অধ্যাপক বেন গ্যারোডের শরণাপন্ন হলেন তিনি। ছবি পাঠালেন, এই জীববিজ্ঞানীর কাছে। এবার গ্যারোডের হতবাক হওয়ার পালা। এ যে মেগালোডনের দাঁত। দুই কোটি বছর আগে পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে গেছে এই প্রাগৈতিহাসিক হাঙর। কোথায় হারাল? আর এখনকার হাঙরদের সঙ্গে ওদের পার্থক্যই বা কোথায়?
ছোটবেলা থেকেই এই জিনিস খুঁজে বেড়াচ্ছেন বেন গ্যারোড। আর কী কপাল দেখুন, না চাইতেই স্যামির কাছে সেধে এসে ধরা দিয়েছে এই জিনিস। ইংল্যান্ডে মেগালোডনের দাঁত ভীষণ বিরল। কারণ, ইংল্যান্ড থেকে অনেক দূরের অ্যান্টার্কটিকায় ছিল এগুলোর বিচরণ। বোডসি সৈকতে কীভাবে এলো, খোদাই মালুম।
আরেকটা দারুণ ব্যাপার হলো, মেগালোডনের এই দাঁতটা অক্ষত। দাঁতের অ্যানামেল বা ওপরের স্তর এবং গোড়াটা একদম ঠিকঠাক। কোনো অংশ ভেঙেও যায়নি। মজার ব্যাপার হলো, সপ্তাহ তিনেক পরপর বদলে যেত মেগালোডনের দাঁত। অনেকটা আমাদের দুধদাঁত পড়ে যাওয়ার মতো। এমন মহামূল্যবান ‘রত্ন’ পেয়ে দিকে দিকে কথাটা ছড়িয়ে দিলেন গ্যারোড। রাতারাতি বড় তারকা বনে গেল ছোট্ট স্যামি।
টিভিতে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক কিংবা ডিসকভারি চ্যানেলে গভীর সমুদ্রের হাঙর দেখেছেন নিশ্চয়। নীল পানির এই হিংস্র মাংসাশী প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত গ্রেট হোয়াইট শার্ক। অথচ মেগালোডনের কাছে এরা নিতান্ত শিশু! ২ কোটি বছর আগে সমুদ্র দাপিয়ে বেড়াত এই হাঙর। ২৫৬টা দাঁত আর ৮০ ফুট লম্বা শরীর। সর্বকালের সবচেয়ে জোরদার কামড় বসানোর রেকর্ডও এগুলোর দখলে। এমনকি ভয়াবহ ডাইনোসর টি-রেক্সও পিছিয়ে আছে মেগালোডনদের কাছে।
পত্রপত্রিকায় স্যামিকে নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে ব্যাপক। বিজ্ঞানী মহলেও আলোচনার কমতি নেই। কিন্তু এই খ্যাতি স্যামিকে তেমন একটা স্পর্শ করেনি। কুড়িয়ে আনা শামুক ও ঝিনুকের সঙ্গে মেগালোডনের দাঁতটাও স্কুলের বন্ধুদের দেখাতে নিয়ে গেছে ও। বাড়তি আনন্দ হিসেবে যোগ হয়েছে স্কুলের ক্লাব থেকে পাওয়া এক্সপ্লোরার ব্যাজ। দিনকাল স্যামির মন্দ যাচ্ছে না।
স্যামির মতো আপনিও এরপর সমুদ্রপাড়ে বেড়াতে গেলে চোখ-কান খোলা রাখবেন। পাইলেও পাইতে পারেন প্রাগৈতিহাসিক কোনো অমূল্য রতন!