যে কারনে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হচ্ছে । । গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বহিস্কৃত মেয়র এবং গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এবং গাজীপুরে সংগঠনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। গত ১৪ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। এই বৈঠকে বিভিন্ন জেলার সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়।
এই আলাপ-আলোচনার মধ্যেই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয় এবং সেই আলোচনায় জাহাঙ্গীরকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। উল্লেখ্য যে, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কটুক্তি এবং নানা রকম বিতর্কিত আপত্তিকর মন্তব্য অভিযোগে ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর দল থেকে প্রথমে বহিষ্কার করা হয়। ওই দিন অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এই বহিস্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছিলেন। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তে বলা হয়েছিল যে, জাহাঙ্গীর আলম যে অপরাধ করেছে তা অমার্জনীয় এবং অগ্রহণযোগ্য। যদিও জাহাঙ্গীর আলাম বারবার বলেছিলেন যে, নেতার বক্তব্য টেম্পারড করা হয়েছে এবং খণ্ডিতভাবে তার বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে। তাকে ফাঁসানোর জন্যই তথ্য বিকৃতি করা হয়েছে।
এই বহিস্কারাদেশের পর পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় জাহাঙ্গীর আলমকে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের পদ থেকেও অব্যাহতি দেন এবং তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও ঘোষণা করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুকে কটুক্তি করা কিংবা দুর্নীতির অভিযোগে কোনো মামলাই দায়ের করা হয়নি। বরং জাহাঙ্গীর আলম তার নিজস্ব গণ্ডির আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রেখেছেন। একাধিক সূত্র বলছে যে, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে জাহাঙ্গীর আলমের একটা প্রভাব বলয় রয়েছে এবং তার জনপ্রিয়তাও রয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে।
জাহাঙ্গীর আলম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হওয়ার আগে থেকেই এলাকায় আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করতেন এবং প্রচুর অর্থ ব্যয় করতেন। এ কারণে তার নিজস্ব একটি সমর্থক গ্রুপ তৈরি হয়েছিল। যেকারনে তার এলাকায় প্রভাব ছিল অত্যন্ত বেশি। আর এ কারণেই আজমত উল্লাহকে বাদ দিয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলমকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মনোনয়ন দেয়ার পর জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম অভিযোগ উঠেছিল।
তার প্রধান অভিযোগ হলো ক্ষমতার অপব্যবহার করা। আর এ প্রেক্ষিতেই একজন কর্মীর সঙ্গে তার কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়ে যায়। যে কথোপকথনের ভিত্তিতে তাকে সরে যেতে হয়। কিন্তু জাহাঙ্গীর আলাম সরে যাওয়ার পর গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন এবং আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকদের প্রয়োজন বলেও কেউ কেউ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তবে আওয়ামী লীগের অন্য একটি সূত্র বলছে, জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুকে কটুক্তি সংক্রান্ত যে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছিল তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হয়েছে এবং দেখা গেছে যে এই বক্তব্যকে বিকৃত করা হয়েছিল। কিছু কিছু শব্দ বাদ দিয়ে শব্দ সংযোজন বিয়োজন করে সুপার এডিটিং এর মাধ্যমে এটিকে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল। আর এ কারণেই জাহাঙ্গীর আলমকে এখন ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।
তবে কবে তাকে ফিরিয়ে আনা হবে সে সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি বলেই জানা গেছে।
বাংলা ম্যাগাজিন /এসপি