রাজনীতির মাঠে একরকম যুদ্ধ হচ্ছে, পর্দার আড়ালে যুদ্ধটা অন্যরকম। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ কে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। রাজনীতির মাঠে নিঃসন্দেহে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি। বিএনপি-আওয়ামী লীগের কথার লড়াই প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে এবং এই লড়াই ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ এখন কোনো ভাবেই বিএনপি নয়। বরং বিএনপি এ সমস্ত কথার লড়াই দিয়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ হলো দেশের সুশীল সমাজ। গত কিছুদিন ধরেই সুশীল সমাজ অত্যন্ত সোচ্চার হয়েছে, সরব হয়েছে এবং অনেকেই মনে করে কিছু কিছু বিষয়ে সুশীলরা সরকারকে চাপে ফেলতেও সক্ষম হয়েছে। সুশীল সমাজের কারণেই আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ নানা ইস্যুতে চাপে পড়ছে বলে অনেকেই মনে করেন।
যেসব ইস্যুতে সুশীলরা সরকারকে চাপে ফেলতে চাইছে তা হলো:
১. সুশাসন, গণতন্ত্র এবং নির্বাচন: সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা গত তিন বছর নিরন্তর প্রচারণায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এটা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে যে বাংলাদেশে সুশাসনের অভাব রয়েছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র কম ক্রিয়াশীল এবং আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হওয়া নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে এবং পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এটি এখন রীতিমত বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। বিভিন্ন মহল মনে করে যে এই প্রচারণা যতটা না বিরোধীদল করেছে তার চেয়ে বেশি করেছে সুশীল সমাজ। এই কারণেই এখন সরকারের ওপর নানা রকম চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন।
২. সুশীল সমাজ মানবাধিকার ইস্যুতে সরকারকে চাপে ফেলেছে: জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে ঢাকায় এলেও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বৈঠকে সুশীল সমাজ একগাদা নালিশ করেছে সরকারের বিরুদ্ধে। মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার এটি কতটুকু আমলে নিয়েছেন বা নেননি সেটা পরের বিষয়, কিন্তু এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে মানবাধিকার ইস্যুটিকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সুশীল সমাজ নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। এইটি সরকারের জন্য আরেকটি বড় ধরনের চাপ।
৩. অর্থনৈতিক সঙ্কট নিয়ে প্রচারণা: সুশীল সমাজ সাম্প্রতিক সময়ে সরকারকে সবচেয়ে বড় চাপে ফেলেছে অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে নানামুখী প্রচারণায়। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ, বাংলাদেশের সামনের দিনগুলোতে আরো সংকটে পড়বে ইত্যাদি সুশীল সমাজের প্রচারণাগুলো এখন জনগণের মধ্যে সঞ্চারিত হচ্ছে এবং কোনো কোনো মানুষ এগুলো বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন। এই ধারা যদি সামনের দিকে অব্যাহত থাকে তাহলে বিরোধী দলকে কিছু করতে হবে না। লক্ষণীয় ব্যাপার যে সুশীল সমাজরা যে সমস্ত তথ্য দিচ্ছেন, সেই সমস্ত তথ্যগুলি বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলো প্রচার করছে। আর এ কারণেই অনেকে মনে করছে যে, অর্থনৈতিক সংকটের ব্যাপারে জনগণকে শংকিত করার ক্ষেত্রে সরকারকে রীতিমতো চাপে ফেলেছে সুশীল সমাজ।
৪. গণমাধ্যম: সুশীল সমাজ গণমাধ্যমকে সরকারের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাতে অনেকটাই সক্ষম হয়েছে। হাতে গোনা দুই একটি পত্রিকা ছাড়া সবগুলো পত্রিকাই এখন সরকারবিরোধী পত্রিকায় রূপান্তরিত হয়েছে এবং সুশীল সমাজ যে তথ্য-উপাত্তগুলো দিচ্ছে সেগুলোর উপর নির্ভর করে প্রতিদিন অর্থনৈতিক সংকট সহ বিভিন্ন সংকটের কথা প্রচার করছে। যে সমস্ত প্রচেষ্টার ফলে সরকারের একটি নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হচ্ছে।
৫. আওয়ামী লীগের মধ্যেই বিভক্তি সৃষ্টি করা: সুশীল সমাজের একটি অংশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে এবং এই ঘনিষ্ট যোগাযোগের ফলে আওয়ামী লীগের একটি অংশ গোপনে সুশীল প্রেমিক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। যারা সুশীলদের প্রকাশ্য সমালোচনা করছেন না এবং সুশীলদের বক্তব্যগুলোকেই গ্রহণযোগ্য মনে করছেন। এর ফলে আওয়ামী লীগও বিভ্রান্ত হচ্ছে।
আর এই সব ইস্যুতে সরকারকে চাপে ফেলছে সুশীল সমাজ এবং সুশীল সমাজের এই চাপ থেকে যদি আওয়ামী লীগ মুক্ত না হতে পারে তাহলে সামনে আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন বাস্তবতা অপেক্ষা করছে বলেই অনেকে মনে করেন।
বাংলা ম্যাগাজিন /এনএইচ