ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পরিবর্তন হলেই ‘কল্যাণকর বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, দেশে একের পর এক গুমের কাহিনি, এটা শেষ হওয়ার নয়। এর পরিবর্তন দরকার। সে জন্য বর্তমান সরকারের পরিবর্তন ও আয়নাঘরকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেওয়া দরকার।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের তুলে নিয়ে ‘আয়নাঘর’ নামে গোপন স্থানে আটকে রাখাসংক্রান্ত একটি তথ্যচিত্র সম্প্রতি একটি অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হয়েছে। সে প্রসঙ্গ তুলে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আজকে দেশে কত আয়নাঘর আছে, তা আমরা জানি না। দেশে যে একের পর এক গুমের কাহিনি, এটা শেষ হওয়ার নয়। এর পরিবর্তন দরকার।’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘গুম ও সাদাপোশাকে গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণা ও ছাত্র-জনতার সমাবেশ’ শীর্ষক এক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী এসব কথা বলেন। গুমের শিকার সব নাগরিককে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া, সব ‘রাজবন্দীর’ মুক্তি ও জাতিসংঘের অধীনে নিরপেক্ষ কমিটি করে গুমের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এই সমাবেশের আয়োজন করে।
বিএনপিরও সমালোচনা করেছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি একবারও বলছেন না যে তারা ক্ষমতায় এলে সব আয়নাঘর ভেঙে চুরমার করে দেবেন এবং যাঁরা গুম হয়েছেন, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেবেন। তারা একটা ভুল করছে।
সব বিরোধী দলকে সমবেত কণ্ঠে পুলিশের উদ্দেশে বলতে হবে, এটা বন্ধ না করলে প্রতিটি পুলিশের বিচার হবে। যাঁরা গুম ও অত্যাচারিত হয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাঁদের শিক্ষা দেওয়া হবে, যাতে তাঁরা বিদেশে যেতে পারে। এর জন্য দরকার সরকারের পরিবর্তন, আয়নাঘরকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেওয়া দরকার।’
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া কোনো পথ নেই বলে মন্তব্য করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ভয় পাবেন না। আপনি হারতেও পারেন, জিততেও পারেন। তবে আপনার প্রতি অন্যায় হবে না। আপনি খালেদা জিয়াকে জামিন দিন। ছাত্রদের কথা শুনুন, উপকৃত হবেন।
জিঘাংসা, হিংসা বাদ দিন। প্রতিহিংসা হবে না। আপনার কোনো লোকের গায়ে হাত উঠবে না। আপনার প্রতি কেউ অন্যায় করবে না।কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার, সুশাসন দরকার এবং নির্বাচনের আগে একটা নিরপেক্ষ সরকার বা জাতীয় সরকার দরকার। এবার ২০১৪ ও ২০১৮ সালের খেলা চলবে না, ইভিএমের চালাকি চলবে না। একই চালাকি বারবার করা যায় না।’
এই সরকারের পরিবর্তন হবেই বলে মনে করেন পেশাজীবী নেতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এই ধারণার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, এভাবে কোনো ‘ফ্যাসিস্ট সরকার’ বেঁচে থাকতে পারে না৷ কিন্তু দুর্ভাগ্য যে বিএনপি তার নেতা চেনে না। তাদের নেতা হবেন খালেদা জিয়া, তারেক রহমান নন। আজকে খালেদা জিয়ার জামিন হলে তিন-চার মাসের মধ্যে পরিবর্তনের জোয়ার বইবে। তাঁকে দিয়েই প্রতিটি গুমের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি তুলতে হবে।
এ সময় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরতে গিয়ে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘শেখ সাহেবের (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) আমলে আমিও কয়েক দিনের জন্য গুম হয়েছিলাম। খুব বেশি সময় নয়, অল্প সময়। সাদাপোশাকে থাকা সেই কর্মকর্তা আমাকে তাঁর পরিচয় দিয়েছিলেন। অত্যাচার করা হয়েছিল আধুনিক কায়দায়। দুই হাজার ওয়াটের বাতি আমার দুদিকে লাগিয়ে দিয়ে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছিল।’
ছাত্র অধিকারের নেতা সালেহউদ্দিন সিফাত ও জাহিদ আহসানের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক তারেক রহমান ও শাকিল উজ্জামান, ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি তারেকুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হুসাইন, রাষ্ট্রচিন্তার সংগঠক দিদারুল ভূঁইয়া, ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অর্থ সম্পাদক আরমানুল হক প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে