ওরা আমার ছেলেকে হাসপাতালেও নিতে দিল না

‘রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে ছটফট করছিল আল আমীন। উদ্ধার করে আমরা রিকশায় করে হাসপাতালে নিতে চাইলে রাস্তায় আবারও আমার ছেলের ওপর হামলা করা হয়।সন্ত্রাসীরা আমার ছেলেকে হাসপাতালে নিতে দিল না। হাসপাতালে নিতে পারলে আমার ছেলে মরত না’, কথাগুলো আল আমীনের মা হোসপিয়ারা বেগমের।

হোসপিয়ারা বেগম বলেন, ‘ওরা আমার মেজ ছেলে জুয়েলকে হত্যা করতে এসেছিল। জুয়েল তখন মসজিদে নামাজ পড়ছিল। ভাইয়ের ওপর হামলা হবে শুনে এগিয়ে আসে আল আমীন। এরপর সন্ত্রাসীরা আল আমীনকে কুপিয়ে জখম করে। পরে মসজিদের ভেতরে ঢুকে জুয়েলকে কোপায় তারা।’

গতকাল বুধবার রাতে রাজধানীর বনানীর কড়াইল বস্তিতে আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় আল আমীনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে হামলায় তিন নারীসহ ছয়জন আহত হন। আর মসজিদের ভেতরে কোপানো হয় আল আমীনের ভাই জুয়েলকে। জুয়েল প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

ছয় ভাই, দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট আল আমীন। রাইয়ান হোসেন নামের তাঁর ছয় বছরের একটা ছেলে রয়েছে। রাইয়ান বুঝতে পারছে না তার বাবা মারা গেছে। হোসপিয়ারা বেগম বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা আমার ছোট্ট রাইয়ানকে এতিম করেছে। বাবার মরদেহের পাশে বসে সে বলছে, আমার বাবা ঘুমাচ্ছে।’

এলাকাবাসী বলছেন, আওয়ামী লীগের কমিটি দেওয়াকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটলেও এর পেছনে রয়েছে এলাকার নিয়ন্ত্রণ। আল আমীন ও তাঁর ভাই ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মফিজুর রহমানের অনুসারী। আর হামলাকারীরা আজাদ নামের আরেকজনের অনুসারী।

তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। গত কাউন্সিলর নির্বাচনে তিনি মফিজুর রহমানের কাছে হেরে যান। কড়াইল বস্তি এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে তাঁরাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে দাবি এলাকাবাসীর।

কড়াইল বস্তির বাসায় দাঁড়িয়ে কথা হয় আল আমীনের বোন আকলিমা আক্তারের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক মাস ধরে আমার ভাইদের হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল সন্ত্রাসীরা। ১৫ আগস্ট অনুষ্ঠানেও আমার ভাইদের ওপর হামলা করা হয়।’ কেন হুমকি দেওয়া হচ্ছিল জানতে চাইলে বলেন, আওয়ামী লীগের কড়াইল বস্তির উত্তর ইউনিটের কমিটি দেওয়া নিয়ে মোহাম্মদ আলী, নুরুসহ ওই গ্রুপের সঙ্গে তাঁর ভাইদের বিরোধ ছিল।

হামলাকারীদের হাত থেকে দুই ভাইকে রক্ষা করতে এগিয়ে এসে আহত হয়েছেন প্রতিবেশী তিন নারী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁদের একজন বলেন, ‘ওরা আমাদের বাড়িঘরেও হামলা চালিয়েছে। হামলায় একজন মারা গেলেও পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। খুনিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি আমরা।’

কাউন্সিলর মফিজুর রহমান বলেন, ‘এ হামলার পেছনে রাজনৈতিক কোনো না কোনো নেতার ইন্ধন রয়েছে। না হলে এত বড় ঘটনা ঘটত না। কোন নেতার ইন্ধনে ঘটেছে, তা আমি জানি। যেহেতু আমি রাজনীতি করি, তাই তার নামটা বলতে পারছি না।’

বাংলা ম্যাগাজিন / এমএ

Exit mobile version