অপরাধঢাকাবাংলাদেশরাজধানী

তারা শুধুমাত্র সুজুকি জিক্সার মডেলের মোটরসাইকেল চুরি করতেন

পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সুজুকি জিক্সার মডেলের মোটরসাইকেল চুরি করতেন নুর মোহাম্মদ ও তাঁর চক্রের সদস্যরা। চুরির জন্য চক্রটি বিশেষভাবে মাস্টার কি (নকল চাবি) তৈরি করত। সুযোগ বুঝে সেই নকল চাবি দিয়ে মোটরসাইকেল স্টার্ট করে সেটি নিয়ে পালিয়ে যেতেন তাঁরা।

এভাবে পুরান ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে গত আট বছরে অন্তত ৫০০ মোটরসাইকেল চুরি করে চক্রটি। এরপর এগুলো কম দামে বিক্রি করতেন তাঁরা। অল্প সময়ে দ্রুত ধনী হতে তাঁরা এই পথ বেছে নেন বলে জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শনির আখড়া ও ধলপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে নূর মোহাম্মদ ও তাঁর চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ১৩টি চোরাই মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। আজ বুধবার নগরের মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় ডিবি।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সম্মেলনে বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ধনী হওয়ার নেশায় গত আট বছরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচ শতাধিক মোটরসাইকেল চুরি করেছেন। চুরি করা মোটরসাইকেলগুলোর অধিকাংশই সুজুকি ব্র্যান্ডের জিক্সার মডেলের।

রাজধানীর ওয়ারী ও গেন্ডারিয়া থানায় দুটি মোটরসাইকেল চুরির মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ঘটনাস্থলের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় এ পাঁচ সদস্যকে শনাক্ত করা হয়। উদ্ধার করা মোটরসাইকেলের মধ্যে সুজুকি ব্র্যান্ডের জিক্সার মডেলের মোটরসাইকেল বেশি।গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন চক্রের মূল হোতা নূর মোহাম্মদ (২৬) ও তাঁর সহযোগী রবিন (২৩), সজল (১৮), মনির (২২) ও আকাশ (২২)।

হারুন অর রশীদ বলেন, চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রি করার জন্য ঢাকার দোহারে সজলকে তাঁদের চক্রের সদস্য হিসেবে যুক্ত করা হয়। রাজধানী থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে চক্রটি পোস্তগোলা ব্রিজ পার হয়ে মাওয়া রোডের শ্রীনগর বাইপাস হয়ে মেঘুলা বাজার ও দোহারে যেত।

আবার পুরান ঢাকার বাবুবাজার ব্রিজ পার হয়েও কেরানীগঞ্জ, জয়পাড়া ও দোহার এলাকায় যেত। সজল ও মনির দোহারের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রি করে আসছিলেন।সজলকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিবি কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ বলেন, তিনি (সজল) বড়লোক হওয়ার নেশায় দোহারের মেঘুলা বাজারের এক বেকারি ব্যবসায়ীর মেয়েকে পালিয়ে বিয়ে করেন। কিন্তু সেই বিয়ে টেকেনি।

সজল হতাশ হয়ে ধনী হওয়ার নেশায় নূর মোহাম্মদ ও রবিনদের চক্রে যোগ দেন। সজল, মনির ও আকাশদের মূল কাজ ছিল দোহার ও আশপাশের এলাকা থেকে চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রির জন্য ক্রেতা খুঁজে বের করা। প্রতিটি চোরাই মোটরসাইকেল তাঁরা ৪০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন। বিক্রির টাকা নূর মোহাম্মদ ৪০ শতাংশ, রবিন ৩০ শতাংশ ও অন্য সদস্যরা ৩০ শতাংশ পেতেন।ডিবি জানায়, নুর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা, রবিনের বিরুদ্ধে তিনটি ও অন্য তিনজনের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

চক্রের হোতা নূর মোহাম্মদের বিষয়ে ডিবির কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ বলেন, তিনি মূলত জুরাইন এলাকায় একটি কাঠের দোকানে নকশার কাজ করতেন। আগে তাঁর বাসা ছিল ঢাকার কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায়। সেখানে এক চায়ের দোকানে রবিনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। দুজন মিলে পরিকল্পনা করেন, কীভাবে দ্রুত সময়ে বড়লোক হওয়া যায়।

নূর মোহাম্মদ রবিনকে বলেন, তাঁর কাছে করাত ধার দেওয়ার রেত আছে, যা দিয়ে মোটরসাইকেলের চাবি পাতলা করে ‘মাস্টার কি’ বানানো যাবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী রবিনের জিক্সার মোটরসাইকেলের চাবি রেত দিয়ে ঘষে পাতলা করে পুরান ঢাকার সোয়ারীঘাটে পার্ক করা একটি জিক্সার মোটরসাইকেল পরীক্ষামূলকভাবে চুরি করেন। এর পর থেকে এ চাবিকেই ‘মাস্টার কি’ হিসেবে ব্যবহার করে দুই বন্ধু দীর্ঘদিন ধরে মোটরসাইকেল চুরি করে আসছেন।

Back to top button