ঢাকা ওয়াসা বছরে কী পরিমাণ বেতন বোনাস নিয়েছেন জানতে চান হাইকোর্ট
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে তাকসিম এ খানকে গত ১৩ বছরে কী পরিমাণ বেতন–বোনাস ও টিএডিএসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হয়েছে, সে তথ্য জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। প্রতিবেদন আকারে ৬০ দিনের মধ্যে ঢাকা ওয়াসা বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওই সব তথ্য আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সার্কুলার ও সার্ভিস (বেতন ও সুবিধাদি) অর্ডার লঙ্ঘন করে ওয়াসার এমডিকে অযৌক্তিক ও উচ্চ বেতন দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কনজ্যুমার অ্যাসেসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পক্ষে স্থপতি মোবশ্বের হোসেন গত মাসে ওই রিট করেন।
নিউজ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পানির দাম ও এমডির বেতন’ শিরোনামে প্রতিবেদন এবং “‘ভিক্ষায় চলা’ ওয়াসার এমডির বেতন কেন সোয়া ছয় লাখ টাকা” শিরোনামে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ রিটে সংযুক্ত করা হয়।স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকা ওয়াসা বোর্ড, ঢাকা ওয়াসার চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়। পরে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ঢাকা ওয়াসার এমডিকে অপসারণে পদক্ষেপ নিতে নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। বিগত দিনে তাঁকে দেওয়া মাত্রারিক্ত বেতন কেন তাঁর কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করা হবে না এবং তাঁকে অপসারণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না—তাও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।
পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯ সালের অক্টোবরে তাকসিম এ খান ওয়াসার এমডি হিসেবে ৩ বছরের জন্য চুক্তিতে নিয়োগ পান। ওয়াসা সূত্র জানায়, তখন তাঁর মোট মাসিক বেতন ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এর মধ্যে মূল বেতন ছিল ৬০ হাজার টাকা। অন্যান্য খাতের মধ্যে বাড়িভাড়া ২০ হাজার, উৎসব ভাতা ১০ হাজার, মেডিকেল ও বিনোদন ভাতা ৪ হাজার এবং বিশেষ ভাতা ২২ হাজার টাকা। তার সঙ্গে চুক্তিতে বলা ছিল, বেতন বাবদ প্রদেয় আয়কর তাকসিমকেই দিতে হবে। এরপর ২০১০ সালে ওয়াসার এমডির বেতন ২ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঢাকা ওয়াসার পানিসংকট নিয়ে নগরবাসীর অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সংস্থার অন্যান্য সেবা নিয়েও আছে বিস্তর অভিযোগ। কিন্তু তারপরও গত ১৩ বছরে ১৪ বার পানির দাম বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ানো হয়েছে সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের বেতনও।
সর্বশেষ করোনা মহামারির মধ্যে এক লাফে ওয়াসার এমডির বেতন বাড়ানো হয়েছে পৌনে ২ লাখ টাকা। এই বৃদ্ধির পর ওয়াসার এমডি হিসেবে তাঁর মাসিক বেতন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এ হিসাবে গত ১২ বছরে তাকসিম এ খানের মাসিক বেতন বেড়েছে ৪২১ শতাংশ। এদিকে তাকসিমের পরে যাঁরা ওয়াসার এমডি হবেন, তাঁরা যেন এই পরিমাণ বেতন না পান, সেটিও নিশ্চিত করেছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।
একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার রুলসহ এ আদেশ দেন।