বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ আজ দেশের অর্থনীতির যে দুরবস্থা, সবকিছুর মূলে হচ্ছে সরকারের দুর্নীতি। তিনি বলেন, সরকারের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে।আজ বুধবার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবনের যে কী অবস্থা, তা তুলে ধরতেই বিএনপি এ সংবাদ সম্মেলন করে। এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের কিছু সুবিধাভোগী দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী চক্রের হাতে দৈনন্দিন ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনা জিম্মি হয়ে আছে। মূল্যবৃদ্ধির এই দুর্নীতিবাজ চক্রের শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে সরকারের চালিকা শক্তিরাই। শর্ষেতে ভূত থাকলে ভূত তাড়াবে কে? রক্ষক যখন ভক্ষক হয়, তখন যা হওয়ার তাই হচ্ছে বাংলাদেশে।
তিনি বলেন, এখানকার যে মূল্যস্ফীতি, এখানে যে অর্থনৈতিক দুরবস্থা—এর সবকিছুর মূলে হচ্ছে সরকারের দুর্নীতি। এই দুর্নীতির কারণেই দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, তাদের দুর্নীতির কারণেই আজকে পণ্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার দাপটে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও হতদরিদ্ররা পিষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সরকারের দুর্নীতি, টোটাল ফেইলিউর, অব্যবস্থাপনার কারণে আজকে এ অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জ্বালানিতে দেখেছেন, তেলের বেলায় কী দুর্নীতি করেছে। বিপিসি একইভাবে দুর্নীতি করেছে। বিদ্যুতের বেলায় দেখেছেন, তারা হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। দুর্নীতির কারণেই দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। হয়তো বিশ্ববাজারের কারণে সহনীয় পর্যায়ের কিছু হতে পারত। কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে, সেটা সম্পূর্ণভাবে দুর্নীতির কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৭৪ সালে তারা এভাবে দুর্নীতি করেছে, আজকেও একইভাবে তারা দুর্নীতি করছে।’
বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সরকারকে দায়ী করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, যেখানে সরকারের বিনিয়োগ করার প্রয়োজন নেই, সরকার সেখানে টাকা দিচ্ছে। ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু ৩০ হাজার কোটি টাকার ওপরে নিয়ে গেল। কিছুদিন আগে দেখেছেন যে এয়ারপোর্টের রাস্তার সমস্যা। এখানে প্রতি কিলোমিটারে ২১৩ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ কী অবস্থা? ১০ বছরে এখন পর্যন্ত এই অবস্থায়ই পড়ে আছে। অর্থাৎ এসবের মূল কারণটাই হচ্ছে দুর্নীতি।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের আরেক দফা মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর ইঙ্গিত, ওয়াসার পানির মূল্য আবারও বৃদ্ধির উদ্যোগের সমালোচনা করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, মানুষ যখন চরম দুরবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করছে, তখন সরকারের মন্ত্রীদের আবোলতাবোল বক্তব্য কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতোই মনে হয়। মানুষের দুরবস্থা নিয়ে মন্ত্রীরা তামাশা করছেন।
তিনি বলেন, পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, অভাবের তাড়নায় প্রাণপ্রিয় সন্তানকে বিক্রি করতে খাগড়াছড়ির এক হাটে তুলেছেন মা সোনালি চাকমা। ছয় বছরের সন্তান রামকৃষ্ণ চাকমার বিনিময়ে ১২ হাজার টাকা দাম চেয়েছেন তাঁর মা। কী নিদারুণ অভাব আর কষ্টে থাকলে একজন মা সন্তানকে বাজারে বিক্রির জন্য আনতে পারেন। দেশের মানুষ এই দুঃশাসন থেকে মুক্তি চায়।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও মূল্যস্ফীতির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, সরকারি হিসাবেই গত জুন মাসের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত ৯ বছরে সর্বোচ্চ রেকর্ড। বর্তমানে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনেক কমে গেছে। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষ নানাভাবে ব্যয় কমিয়ে টিকিয়ে থাকার চেষ্টা করছেন। নিজের আয় দিয়ে আর চলতে না পারায় স্ত্রীকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে অনেকেই বাসা ছেড়ে মেসে উঠেছেন। মানুষ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন।
যখন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর করছে, তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বিরোধী দলের কোনো আন্দোলন দমন করা হবে না, তাদের গ্রেপ্তার করা হবে না। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য বিএনপি বিশ্বাস করে কি না, প্রশ্ন করলে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কখনোই ওনার (প্রধানমন্ত্রী) কোনো কথায় বিশ্বাস করি না। এটা একটিমাত্র কারণে যে তারা যা বলে তা করে না। আমরা বলেছি যে তাদের সমস্ত কথাবার্তায় প্রতারকের ভূমিকা পালন করে ওরা।’
জ্বালানি তেল ও ইউরিয়া সারের মূল্যবৃদ্ধি এবং পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে ২৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার সারা দেশে আধা বেলা হরতাল ডেকেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। এ হরতালে বিএনপির সমর্থন আছে কি না, জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বলেছি যে, যেকোনো দলের যেকোনো ন্যায়সংগত দাবির আন্দোলন-সংগ্রামে আমরা সমর্থন করি সব সময়।’
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আন্দোলন বলতে যদি বোঝেন যে হরতাল, অবরোধ—এ ধরনের বিষয়গুলো কিন্তু আন্দোলন নয়। মানুষকে আস্তে আস্তে তৈরি করে রাস্তায় নামানো হচ্ছে আন্দোলন। সেটা আমরা করছি। আপনারা লক্ষ করেছেন যে এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন সহ্য করেও মানুষ এখন আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসছে। যখন মানুষ বেরিয়ে এসে রাস্তা দখল করবে, তখনই আন্দোলন চরম পর্যায়ে যাবে।’