পাসপোর্টের দাবিতে ইতালির রাজধানী রোমের বাংলাদেশ দূতাবাসে দিনভর বিক্ষোভ করেছেন প্রবাসীরা। সংক্ষুব্ধ শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি চ্যান্সরি কমপ্লেক্সে ঢুকে পড়েন। তারা সেখানে ব্যাপক ভাংচুর চালান। এতে প্রধান ফটকের দু’টি দরজা এবং মূল্যবান আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবশ্য তৎক্ষণাৎ ইতালির পু্লিশ এসে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
পরবর্তীতে রাষ্ট্রদূতসহ দূতাবাস কর্মকর্তাদের সঙ্গে টানা সাড়ে ৪ ঘণ্টার দেন দরবার শেষে বিক্ষোভকারীরা ১৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট না পেলে দলবদ্ধ আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে স্থানত্যাগ করে। তারা বাংলাদেশের সরকার প্রধান বরাবর দু’টি স্মারকলিপিও দিয়েছেন।
আবেদনকারী ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশিদের বয়স কমানোর দাবির বিষয়টি দূতাবাস বাংলাদেশ সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে উত্থাপন করছিল, যার প্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত বয়স কমানোর বিশেষ সুবিধা দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেই সুযোগও নিতে পারেননি বর্তমানে বিক্ষোভরত বাংলাদেশিরা।
তাছাড়া সেই বিশেষ সুবিধার মেয়াদও গত ২৭ এপ্রিল শেষ হয়ে গেছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, আবেদনকারীদের প্রতি দূতাবাস সহানুভূতিশীল, কিন্তু অনেকে ৬-১২ বছর পর্যন্ত বয়স কমাতে চান, যা অসম্ভবই বটে। তারপরও তাদের দাবিনামা এবং স্মারকলিপি গ্রহণ করা হয়েছে এবং মানবিক বিবেচনায় সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে তা উত্থাপনের আশ্বাস দিয়ে আপাতত বিক্ষোভকারীদের ক্ষ্যন্ত করা গেছে।
রোমে নিযুক্ত বাংলাদেশর রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান (সচিব পদমর্যাদার গ্রেড-১ অ্যাম্বাসেডর) ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে রাতে তিনি বলেন, বয়সসহ পাসপোর্টের তথ্য সংশোধনে দীর্ঘদিন ধরে কয়েক হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি অনিয়মিতভাবে চ্যান্সরি কমপ্লেক্স এলাকায় বিক্ষোভ করে আসছেন। তাদের অন্তত ৭০ শতাংশের বয়স ৬-১২ বছর কমানোর আবেদন রয়েছে। যা সরকারের বিদ্যমান নীতিমালা এবং সিস্টেমে কভার করে না।
ওদিকে ‘ইতালি প্রবাসী কয়েক হাজার প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট (এম আর পি) জটিলতায় আটকে আছে, তাদের এই জটিলতা নিরসন করে পাসপোর্ট প্রদান করার আবেদন’ বিষয়ক পৃথক স্মারকলিপিতেও ভুক্তভোগীরা ১৫ দিনের মধ্যে কয়েক হাজার প্রবাসী বাংলাদেশির এম আর পি জটিলতা নিরসনের দাবি জানান। অন্যথায় তারা গণহারে আত্মাহুতির হুমকি দিয়ে যান।
‘ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশিদের তথ্য পরিবর্তন/ সংশোধনের আবেদন গ্রহণের সময়সীমা বাড়ানোর অনুরোধ’ শীর্ষক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর প্রেরিত স্মারকলিপিতে বিক্ষোভকারীরা লিখেন- “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাদের সালাম গ্রহণ করবেন। বিনীত নিবেদন এই যে, আমরা পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে ইউরোপের উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করি।
মধ্যস্থতাকারীরা আমাদের পাসপোর্টের তথ্য পরিবর্তন করে আমাদের ঠিকই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। আমরা বন-জঙ্গল এবং সাগর পথে মৃত্যুর হাতছানিকে উপেক্ষা করে অবশেষে কাঙ্খিত স্থানে এসে পৌঁছাতে পেরেছি ঠিকই, কিন্তু তথ্য পরিবর্তনের সেই ভুলের কারণে আমরা আজ পাসপোর্ট পাচ্ছি না । ফলে আমরা অবৈধ হয়ে যাচ্ছি।
আমাদের পাসপোর্ট থাকলে আমরা এখন বৈধতা অর্জন করতে পারি। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এ রকম প্রায় ১০/১২ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন এই পাসপোর্ট জটিলতায়। আমরা চরম দুর্ভোগ এবং হতাশায় নিমজ্জিত। দেশে আমাদের পরিবার ঋণগ্রস্ত। অনেকের বাবা-মা গুরুতর অসুস্থ। কারো কারো মা-বাবার মৃত্যু ঘটেছে দেখারও সুযোগ পায়নি।
পাসপোর্ট থাকলে আমরা বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠাতে পারি, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে আমরা বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠাতে পারছি না। পাশাপাশি আমরা কাজ-কর্ম হারিয়ে দিনে দিনে বেকার হয়ে পড়ছি। এর কুফল গিয়ে পড়ছে দেশে থাকা আমাদের পরিবারের উপর। দারিদ্র্যতা বাড়ছে, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমাদের ছোট ছোট ভাই-বোনদের লেখাপড়া।
তাই আমরা আজ বিশেষ আর্জি নিয়ে এসেছি আপনার কাছে, যদি আমাদের (১০/১২ হাজার ) পাসপোর্ট সংশোধন করার সুযোগ দেয়ার কোন পদক্ষেপ না নেয়া হয় তবে আমরা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দূতাবাসের সামনে আসব এবং ধুকে ধুকে না মরে দলবদ্ধভাবে স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করবো।”