তেলাপিয়া, পাঙ্গাস মাছও কম আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে

তালতলা বাজারে মাছ কিনতে আসা গার্মেন্টস কর্মী শহিদুল ইসলাম বলেন, এতদিন কিছুটা কম দামে পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া, কই মাছ কিনতে পেরেছি। এখন কোনো মাছই আমাদের সাধ্যের মধ্যে নাই। পাঙ্গাশ কয়েক দিন আগেও ১২০ টাকা কেজিতে কিনে খেতে পারতাম কিন্তু এখন সেই মাছের দাম ১৮০ টাকা। তেলাপিয়ার কেজি কিছুদিন আগে ১৬০ টাকা ছিল। সেই মাছ এখন ২২০ টাকা।

শ্যামলীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গাড়ি চালিয়ে মাসে ১২ হাজার টাকা বেতন পান আজগর হোসেন। অন্যান্য আয় মিলিয়ে মাসে তার হাতে আসে প্রায় ১৮ হাজার টাকা। গত পাঁচ বছরে বাজারদরে দফায় দফায় উল্লম্ফন ঘটলেও আজগরের আয় একই রয়ে গেছে। ফলে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।

মাছ ও মাংস খাওয়া তার জন্য বর্তমানে স্বপ্নের মতো। মাস টানেন কিছুটা কম দামের তেলাপিয়া, পাঙ্গাশ মাছ দিয়ে। তবে গত কিছুদিন ধরে তেলাপিয়া-পাঙ্গাশও তার নাগালের বাইরে চলে গেছে। আজগর বলেন, পাঁচ বছর ধরে ঢাকা শহরে গাড়ি চালাচ্ছি। আয় এক টাকাও বাড়েনি। তবে খরচ বেড়েছে অনেক।

এতদিন পাঙ্গাশ-তেলাপিয়া দিয়ে মাছের চাহিদা মিটিয়েছি। বর্তমানে এসব মাছও আমাদের নাগালে নেই। এখন কেজিতে তেলাপিয়া-পাঙ্গাশ মাছের দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা  বেড়েছে। এভাবে সব কিছুর দামই বাড়তে থাকলে মানুষ খাবেটা কি?  বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাঙ্গাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজিতে।এ ছাড়া তুলনামূলক বড় ও তাজা পাঙ্গাশ ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে মাঝারি সাইজের তেলাপিয়া প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। চাষের কই মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়।

বিএনপি বাজারে মাছ কিনতে আসা রিনা বেগম বলেন, ২৫০ গ্রাম ওজনের একটি তেলাপিয়া মাছ ৬০ টাকা দিয়ে কিনেছি। এক কেজি তেলাপিয়া মাছ ২৪০ টাকা দিয়ে কেনার সাধ্য আমাদের নেই। পোলাপানকে আর কতোবার শাক-সবজি খাওয়ায়ে রাখবো।

মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাই। স্বামী রিকশা চালায়। পাঁচ জনের পেট চালাতে দুই জনের আয়ে হিমশিম খেতে হয়। আগে থেকে বাজারের তালিকা কমিয়ে এনেছি। কয়েকদিন আগেও পাঙ্গাশ মাছ ১২০ টাকা কেজিতে কিনে খেতে পারতাম। এখন সেই মাছের দাম ১৮০ টাকা। তেলাপিয়ার কেজি ছিল ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। সেই মাছ এখন ২৪০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

রাজধানীর বিএনপি বাজারে তেলাপিয়া মাছের দোকানের সামনে হাতে ব্যাগ নিয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন আমিরুল ইসলাম। কিছুক্ষণ দরদামের পর শূন্যহাতে ফিরে যাচ্ছিলেন তিনি। বলেন, মাছ কিনতে চেয়েছিলাম। তবে মাছের দাম অনেক বেড়েছে। এত টাকা দিয়ে মাছ কিনতে গেলে চাল, ডাল, তেল কিনতে পারবো না।

কয়েক দিন আগেও এসব মাছের দাম কম ছিল। এখন কেজিতে এসব মাছের দাম বেড়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এসব মাছের দাম হঠাৎ কেন এত বেড়ে গেল? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি বাজারের মাছ ব্যবসায়ী জাহিদুর রহমান বলেন, হঠাৎ করে নয়, বেশ কিছু দিন হলো এসব মাছের দাম বাড়ছে।

মূলত মাছের ফিডের (খাওয়ার) দাম অনেক বেড়ে গেছে। ফলে মাছ চাষিদের খরচ বেড়ে গেছে। তাছাড়া এসব মাছ দূর-দূরান্ত থেকে ঢাকায় আসে। ট্রাকের খরচও আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে। আমাদেরও পাইকারি আড়ত থেকে আগের চেয়ে বেশি দামে মাছ কিনতে হচ্ছে। তাই খুচরা বাজারে আমাদেরকেও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

কাজী অফিস বাজারের মাছ বিক্রেতা কবির হোসেন বলেন, অন্য সব ধরনের মাছের দাম বাড়তি হওয়ার কারণে অনেকে পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া, চাষের মাছ কেনেন। কিন্তু বর্তমান বাজারে এসব মাছের দামও অনেক বাড়তি। ৫০ থেকে ৮০ টাকা প্রতি কেজিতে বেড়েছে। তিনি বলেন, এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। পাইকারি বাজারে আমাদের কেনা দাম বেশি পড়ছে, সেটার প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাজারগুলোতে।

Exit mobile version