সহায়তার নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার্থীদের থেকে অন্তত ৯টি ফোন হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে আজ সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয় ও ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদভুক্ত সব বিভাগ নিয়ে গঠিত ‘এ’ ইউনিটের মধ্যে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে ঢোকার নির্ধারিত সময় ছিল পৌনে ১০টা। তাই সকাল সাড়ে ৯টা বাজতেই সমাজবিজ্ঞান অনুষদের কেন্দ্রের সামনে ভর্তি পরীক্ষার্থীরা ভিড় করতে থাকেন।
এ সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লেখা কয়েকটি টোকেন নিয়ে অনুষদের সামনের রাস্তায় দাঁড়ান এক যুবক। হাতে ছিল বিশাল ব্যাগ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভেতরে ফোন নেওয়া নিষেধ করেছে, এমন কথা বলে ওই যুবক ভর্তি পরীক্ষার্থীদের তাঁর কাছে ফোন জমা রাখতে বলেন। যাঁরা ফোন জমা দিয়েছেন, তাঁদের সবাইকে একটি করে টোকেন দিয়েছেন। এই টোকেনেও লেখা ছিল ‘মোবাইল নিয়ে প্রবেশ নিষেধ, আদেশক্রমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।’
অভিযোগ দেওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল থানার মো. আবু হাসান, বগুড়ার সদর উপজেলার মেহেদী হাসান মুন্না, যশোর জেলার এহসানুল আজম, মেহরাব হোসেন, অফিফা আখতার, অভিজিৎ দেবনাথ ও সরোজ রাজ। এর বাইরেও অজ্ঞাতনামা দুজন প্রক্টর কার্যালয়ে ফোন খোয়ানোর অভিযোগ দিয়েছেন।
জানতে চাইলে সহকারী প্রক্টর শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ফোন হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে ৯ জন তাঁদের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে মুঠোফোনের নম্বরগুলো দেওয়া হয়েছে। তারা ট্র্যাক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। খুব শিগগির ওই প্রতারককে শনাক্ত করে আটক করা হবে।
আজ বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন করেন উপাচার্য শিরীণ আখতার। এ সময় সহ-উপাচার্য রেনু কুমার দে, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান, প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন মোহাম্মদ নাসিম হাসান উপস্থিত ছিলেন।
কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে উপাচার্য শিরীণ আখতার বলেন, পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে। কোনো ধরনের জালিয়াতি ও অনিয়ম হওয়ার সুযোগ নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নজরদারিতে রাখছেন। ক্যাম্পাসের বাইরে হাটহাজারী সরকারি কলেজের কেন্দ্র করা হয়েছে। ওই জায়গায় প্রায় চার হাজার ভর্তি–ইচ্ছুক পরীক্ষা দিচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, এ ইউনিটে মোট আসন রয়েছে ১ হাজার ২১২টি। বেলা ১১টায় প্রথম পালায় অংশ নিয়েছেন ২৭ হাজার ৫৩ জন ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থী। দ্বিতীয় পালায় বেলা সাড়ে ৩টায় অংশ নেবেন আরও ২৭ হাজার ৫৩ জন। ফলে এই ইউনিটে এক আসনের বিপরীতে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রায় ৪৫ জন।
আজ থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। চলবে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত।শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত বিভাগ নিয়ে গঠিত সি ইউনিটের পরীক্ষা। এই ইউনিটে পরীক্ষা দেবেন ১১ হাজার ৬০ জন শিক্ষার্থী। এতে আসন রয়েছে ৪৪১টি।
শনিবার কলা ও মানববিদ্যা অনুষদভুক্ত সব বিভাগ ও ইনস্টিটিউট নিয়ে গঠিত বি ইউনিটের পরীক্ষা হবে। সকাল-বিকেল দুই পালায় মোট পরীক্ষা দেবেন ৩৫ হাজার ৭৯৯ জন। এই ইউনিটে আসন রয়েছে ১ হাজার ২২১টি। ফলে একটি আসনের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ২৯ জন।
২২ আগস্ট সমাজবিজ্ঞান ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের সব বিভাগ, আইন অনুষদের আইন বিভাগ, শিক্ষা অনুষদের ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগ, জীববিজ্ঞান অনুষদের ভূগোল, পরিবেশবিদ্যা ও মনোবিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে গঠিত ডি ইউনিটের পরীক্ষা হবে। ১ হাজার ১৬০টি আসনের এই ইউনিটে দুই পালায় পরীক্ষা দেবেন ৩৯ হাজার ৩৯২ জন। এক আসনের বিপরীতে এই ইউনিটে লড়বেন ৩৪ জন।
এ ছাড়া ২৪ আগস্ট সকালে কলা ও মানব বিদ্যা অনুষদের চারুকলা ইনস্টিটিউট, নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের নিয়ে গঠিত বি-১ উপ-ইউনিটের পরীক্ষা হবে। ১২৫ আসনের এ ইউনিটে পরীক্ষা দেবেন ১ হাজার ৫৭৯ জন। ফলে এই ইউনিটে এক আসনে লড়ছেন ১২ জন।
একই দিন বিকেলে ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগে নিয়ে গঠিত ডি-১ উপ-ইউনিটে পরীক্ষা হবে। ৩০টি আসনের বিপরীতে এই ইউনিটে পরীক্ষা দেবেন ১ হাজার ৮১১ জন। এক আসেন বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ৬০ জন।