মিয়ানমারে জাতিসংঘের নবনিযুক্ত বিশেষ দূত নোয়েলীন হেইজার আজ মঙ্গলবার দেশটিতে সফর শুরু করেছেন। দুর্নীতির দায়ে মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চিকে জান্তার আদালতে আরও ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার এক দিনের মাথায় তাঁর এ সফর শুরু হলো।
গত মাসে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় দোষী সাব্যস্ত করে সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি পার্টির সাবেক আইনপ্রণেতা ফিউ জেয়া থ-সহ চার গণতন্ত্রপন্থীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে মিয়ানমারের জান্তা। এ নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে পড়ে তারা। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ থেকে জান্তার নিন্দা জানানো হয়। সে নিন্দা প্রস্তাবে জান্তামিত্র রাশিয়া ও চীনেরও বিরল সমর্থন ছিল।
গতকাল সোমবার রাতে জাতিসংঘ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ক্রমাগত অবনতির দিকে থাকা পরিস্থিতি মোকাবিলা, অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়াসহ তাঁর কাজের বিভিন্ন অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোকে আলোচনায় জোর দেবেন হেইজার।
হেইজার মিয়ানমারে সেনা সরকারের কোন কোন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলবেন, তিনি সু চির সঙ্গে কথা বলতে চাইবেন কি না, সে ব্যাপারে বিবৃতিতে বিস্তারিত কিছু উল্লেখ করা হয়নি।এদিকে মিয়ানমারে জান্তার পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে আজ থেকে হেইজারের সফর শুরু হওয়ার কথা নিশ্চিত করা হয়েছে, তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হয়নি।
গত বছর জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সিঙ্গাপুরের সমাজবিজ্ঞানী হেইজারকে মিয়ানমারের বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দেন। সুইস কূটনীতিক ক্রিস্টিন শ্রেনার বার্গেনারের স্থলাভিষিক্ত হন হেইজার।
মিয়ানমারে চলমান সংকট নিরসনে জাতিসংঘ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোটের (আসিয়ান) মধ্যস্থতায় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে। তবে এ ক্ষেত্রে খুব সামান্যই অগ্রগতি হয়েছে। বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন সেনা জেনারেলরা।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে। শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী সু চির বয়স এখন ৭৭ বছর। গতকাল জান্তার গোপন আদালতে সু চির বিরুদ্ধে আরও ছয় বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়। এর আগে দুর্নীতি, সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে উসকানি, করোনার বিধিনিষেধ লঙ্ঘন এবং টেলিকমিউনিকেশন আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তাঁর মোট ১১ বছরের কারাদণ্ড হয়। সব মিলে এখন পর্যন্ত সু চির বিরুদ্ধে ১৭ বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ‘খুব শক্ত পদক্ষেপ’ নেওয়ার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন শ্রেনার। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই তাঁকে নিয়ে আক্রমণাত্মক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হতো। মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের সেনা জেনারেলরা শ্রেনারকে মিয়ানমার সফর করতে দেননি। শ্রেনার মিয়ানমারে সু চির সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন।
ডিসেম্বরে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, মিয়ানমারে শ্রেনারের কার্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে জান্তা। নবনিযুক্ত দূত হেইজারকে সেখানে কার্যালয় খুলতে দেওয়া হবে কি না, তা এখনো জানা যায়নি।