জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির আঁচ লেগেছে বাজারে। পণ্য পরিবহন ব্যয় বাড়ায় নতুন করে অসহনীয়ভাবে বেড়েছে চাল, সবজি ডিম, মাংস, ফলসহ প্রায় সব পণ্যের দাম। গতকাল বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীতে ৫২ টাকার নিচে কোনো চাল মিলছে না। নতুন করে বেড়েছে ডিমের দাম।
সব ধরনের সবজি বিক্রি হচ্ছে আগের সপ্তাহের চেয়ে বেশি দামে। আমদানি করা ফল বিক্রি হচ্ছে রেকর্ড দামে। ডলারের মান বাড়া এবং জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দাম বেড়েছে আমদানি করা অনেক পণ্যের। চালের দাম বাড়ার পেছনে পরিবহন খরচ বাড়াকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।
কাওরান বাজারের মদিনা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আগে চাঁপাই নবাবগঞ্জ থেকে একটি ট্রাক আনতে ২৪ হাজার টাকা খরচ পড়তো। এখন তেলের দাম বাড়ায় ২৯ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে।
ফলে এই বাড়তি টাকা চালের দামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এ কারণে দাম বেড়েছে। বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম: বাজারে বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম। গত চার দিনে সবজি কেজিতে ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গত সপ্তাহে গাজরের কেজি ছিল ১২০-১৩০ টাকা, গতকাল বিক্রি হয়েছে ১৪০-১৫০ টাকায়।
তালতলা বাজারের ব্যবসায়ী মইনুল হোসেন বলেন, তেলের দাম হঠাৎ বাড়ার কারণেই সবজির দাম বেড়েছে। এখন সবজি পরিবহনে বেপারীদের অনেক বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে। যেখানে সবজির দাম ধীরে ধীরে কমার কথা, সেখানে গাড়ি ভাড়ার কারণে সবজির দাম বেড়েছে। নতুন করে বেড়েছে ডিম ও মুরগির দাম: বাজারে এখন এক ডজন মুরগির লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়।
টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা, আগের সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা। বরবটি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৭০-৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ৪০-৫০ টাকার শসার দাম ৬০-৭০ টাকা। দাম বাড়ার এ তালিকায় রয়েছে কাঁচা পেঁপে, পোটল, বেগুন, ঝিঙে, কাঁচকলা, করলাসহ অন্যান্য সবজি।
৫০-৬০ টাকা কেজির বেগুনের দাম বেড়ে ৭০-৮০ টাকা। কাঁচা পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ২০-২৫ টাকা। পোটলের দাম ছিল ২০-৩০ টাকা কেজি, বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে। ৪০-৫০ টাকার করলার দাম বেড়ে হয়েছে ৬০-৮০ টাকা। কচুর লতি, ঝিঙে, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০-৫০ টাকা। কাঁচামরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ২২০ টাকা।
জ্বালানি তেলের প্রভাবে মুরগির দামও বেড়েছে। গতকাল ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা, যা গত সপ্তাহেও ছিল ১৬০ টাকা কেজি। গত তিনদিনের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে গেছে।
মুরগি কিনতে আসা রেশমা খাতুন বলেন, দামের কারণে গরুর মাংস খাওয়া আগেই ছেড়ে দিয়েছি। মাঝে মধ্যে সন্তানদের জন্য ব্রয়লার মুরগি কিনি। কিন্তু মুরগির দামও যেভাবে বাড়ছে, মনে হচ্ছে সামনে সেটাও কপালে জুটবে না।
বাজারে আটা, ময়দা, চিনি, শুকনা মরিচ, আদা, পিয়াজ, দেশি রসুন ও লবণের দামও বেড়েছে। ৫০ কেজির প্রতি বস্তা আটায় বেড়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, ময়দায় বেড়েছে ৭০ টাকা, চিনিতে বেড়েছে ১৫০ টাকা। তিন দিন আগেও লবণ ৩৫, খোলা চিনি ৮০, প্যাকেট চিনি ৮৫ ও খোলা আটা ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে ফলের বাজারেও। গত চার দিনে বিভিন্ন ফলের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। আপেল ও কমলার কেজি ৩০০ টাকা ছাড়িয়েছে। আড়াইশো টাকা ছুঁয়েছে আমের কেজি। আর আঙ্গুরের দাম কেজিতে ৮০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৬০ টাকা দরে।
দাম বেড়েছে কমলা, মাল্টা, নাটফল, আনার ও আনারসেরও। জ্বালানির দাম বাড়ানোর পর কয়েকদিন খুচরা পর্যায়ে এসব ফলের দাম ৩০-১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সরজমিন দেখা যায়, খুচরা ব্যবসায়ীরা দক্ষিণ আফ্রিকার আপেলের (গ্রিন আপেল) কেজি বিক্রি করছেন ৩০০-৩২০ টাকা, যা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর আগে ছিল ২৪০-২৮০ টাকা।
গালা আপেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৯০ টাকা, যা আগে ছিল ২২০-২৪০ টাকা। ফুজি আপেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৬০ টাকা, যা আগে ছিল ১৮০-২০০ টাকার মধ্যে। মাল্টার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২১০ টাকায়, যা আগে ছিল ১৬০-১৮০ টাকা।
নাটফলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৬০ টাকা, যা আগে ছিল ২০০-২৪০ টাকার মধ্যে। কমলা বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৬০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ২৫০-৩০০ টাকার মধ্যে। আনারের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকা, যা আগে ছিল ২২০-২৫০ টাকা।
কয়েকদিন আগে ৫০ টাকা পিস বিক্রি হওয়া আনারস এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। ফলের দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ী আশরাফ বলেন, গত তিন দিনে ফলের দাম বেড়েছে। পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে এমন হয়েছে। ফলের দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।