ঢাকাবাংলাদেশবিনোদন

মিশা সওদাগর কথাটা বলার সময় ভেবে দেখেননি

বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের এই সময়ের অন্যতম সেরা অভিনেতা মিশা সওদাগর। বছরের পর বছর চলচ্চিত্রের ‘ভিলেন‘ চরিত্রটি দখলে রেখেছেন। এবং দর্শকের মন জয় করে নিয়েছেন।মিশা সওদাগর শুধু অভিনেতাই নন, তিনি অভিনেতাদের নেতা-ও।

দীর্ঘদিন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি ছিলেন।একজন সিনিয়র শিল্পী এবং শিল্পীদের নেতা হিসেবে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কথাবার্তায় তার কাছে আরো দায়িত্বশীলতা আশা করি আমরা। তিনি যে ঢালাওভাবে বলে দিলেন, ‘দিন দ্য ডে‘ মুক্তি পাওয়াতে তার এবং এই ইন্ডাস্ট্রির কোনো লাভ নেই, বিন্দুমাত্র লাভ হয়নি- এটা কি ভেবে চিন্তে বলেছেন?আমার ধারণা, মিশা সওদাগর কথাটা বলার সময় ভেবে দেখেননি- তিনি ওপরের দিকে থুথু ছিটাচ্ছেন।

এ কথা সত্য, ‘দিন দ্য ডে‘ মুভিতে তাকে কাস্ট না করায় ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি লাভবান হননি মিশা সওদাগর। কিন্তু সামগ্রীকভাবে এই ইন্ডাস্ট্রির কি কোনো লাভ হয়নি?অবশ্যই হয়েছে। ‘দিন দ্য ডে‘ এই চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকে বহুমুখী লাভ এনে দিয়েছে।প্রথমত, এমন বিগ বাজেটের মুভি যখন বানানো হয়, তখন ইন্ডাস্ট্রির অনেকেরই কর্মসংস্থান হয় এখানে। ‘দিন দ্য ডে‘ যতই বিদেশী পরিচালক এবং ক্রু দিয়ে বানানো হোক, কোনো না কোনোভাবে দেশী চলচ্চিত্রকর্মীরা সংশ্লিষ্ট থেকেছেন।

কাজ পেয়েছেন। তাদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হয়েছে।দ্বিতীয়ত, মুভিটি এমন সময়ে মুক্তি দেয়া হয়েছে, যখন দেশের সিনেমা হলগুলো আইসিইউতে ধুকছে। যে কোনো সময় প্রাণ যায় যায় অবস্থা। ‘দিন দ্য ডে‘ সেই অবস্থা থেকে সিনেমা হলগুলোকে বাঁচিয়ে এনেছে। একশ‘র বেশি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া ছবিটির সেল রিপোর্ট খুব ভালো ছিল। বিভিন্ন সিনেমাহল প্রায় দুই বছরের বিরতি, কর্মীদের বেকারত্বের অবসান ঘটিয়েছে এই ‘দিন দ্য ডে‘ মুক্তির কারণে।

একজন সংবাদকর্মী হিসেবে দেখেছি, করোনা মহামারীর সময় যখন সমস্ত সিনেমা হল বন্ধ তখন প্রেক্ষাগৃহকর্মীরা তাদের পরিবার নিয়ে কতটা অসহায় দিন কাটিয়েছেন। রাজধানীর জোনাকী হলের এক কর্মীকে একদিন দেখি রিকশা চালাচ্ছেন। আমাকে দেখে কেঁদে ফেললেন অঝোরে। হাতিরঝিলে কয়েকজন চলচ্চিত্রকর্মীকে দেখেছি খাবার প্যাকেটের জন্য ঠাঁয় দাড়িয়ে থাকতে। ওই সময় ধনবানরা হাতিরঝিলে খাবার প্যাকেট বিতরণ করতেন।দেশজুড়ে হাজার হাজার প্রেক্ষাগৃহকর্মী।

বহু বছর ধরেই দেশের চলচ্চিত্রের অবস্থা নাজুক। মিশা সওদাগররা যত শক্তিশালী অভিনেতাই হোন, দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের পতন ঠেকাতে পারেননি। তিনি যত বড় নেতা-ই হোন না কেন, চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হাজারো কর্মীর দুবেলা অন্নের নিশ্চয়তা দিতে পারেননি।সেখানে অনন্ত জলিল চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তার চেষ্টার কারণেই থমকে যাওয়া চলচ্চিত্রাঙ্গণে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।

প্রেক্ষাগৃহ মালিক এবং সেখানে কর্মরত কর্মীরা আবার বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন। এ কথা অমোঘ সত্য, ‘দিন দ্য ডে‘ আলোচনা তৈরি করতে পেরেছে বলেই পরের ‘পরাণ‘ এবং ‘হাওয়া‘র সাফল্য পাওয়া সহজ হয়েছে।ওই ইন্টারভিউতে মিশা সওদাগর বলেছেন- অনন্ত ব্যবসায়ী মানুষ এবং সৌখিন অভিনেতা। আট বছর পর এমন ‘দিন দ্য ডে‘ আমাদের কাছে ডেজার্টের মত। অর্থাৎ মিষ্টি জাতীয় খাবার। এটা আট বছর পরপর খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু আমাদের দরকার ভাত-ডাল-আলু ভর্তা।

পরাণ- এর মত ভাত ডাল দরকার।তিনি আবারো জোর দিয়ে বলেন- দিন দ্য ডে ইন্ডাস্ট্রির বিন্দুমাত্র কাজে আসেনি।এমন অসাড় কথা মিশা সওদাগরের মতো গুণী অভিনেতা কিভাবে বলেন ভেবে পাচ্ছি না। অনন্ত জলিল হয়তো তার মতো এতটা শক্তিশালী অভিনেতা নন। হয়তো তিনি প্রচলিত ঘরানার মুভি বানান না। কিন্তু যা বানান তা ইন্ডাস্ট্রির কোনো কাজে আসে না- এমন অযৌক্তিক কথা কোনো মূর্খও বলতে পারবে না।

‘দিন দ্য ডে‘ কত টাকা দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে তা আলোচনার দরকার আছে বলে মনে করি না। মুভিটা কেমন হয়েছে, সেটা আলোচনা হতে পারে। মিশা সওদাগর এখানেও ‘দিন দ্য ডে‘ কে আস্তাকুড়ে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। অথচ মুভিটি নিয়ে দেশের আপামর মানুষের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখেছি আমরা। বলা বাহুল্য, বেশিরভাগই মুভিটির প্রশংসা করেছেন।অনন্ত জলিলকে উদ্দেশ্য করে মিশা সওদাগরের বলা– ‘উনি তো সিআইপি, ব্যবসায়ী মানুষ।

প্রফেশনাল অ্যাক্টর নন‘ — এই কথাতে এক ধরণের অহংবোধ আছে। তা থাকতেই পারে।তাহলে মিশা সওদাগরকে একটা প্রশ্ন করি।আপনি তো প্রফেশনাল অ্যাক্টর। এবং এই ইন্ডাস্ট্রি থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামাই করেছেন। কখনো ভেবেছেন, ইন্ডাস্ট্রির দুর্দিনে এখানে বিনিয়োগ করা দরকার? একথা কি ভেবেছেন, মুভি প্রযোজনা করলে কিছু চলচ্চিত্র কর্মী, প্রেক্ষাগৃহ কর্মীদের দুবেলা অন্ন সংস্থান হবে?

মিশা সওদাগর, আপনি অনন্ত জলিলের চেয়ে অনেক । তাকে সকাল-বিকেল অভিনয়ভালো অভিনেতাশেখাতে পারবেন। কিন্তু ভুলে যাবেন না, অনন্ত জলিলের কাছে আপনারও অনেক কিছু শেখার আছে।

Back to top button