কৃষি, প্রাণী ও পরিবেশচট্টগ্রামফেনীবাংলাদেশভিন্ন স্বাদের খবর

বড় ফেনী নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে কেন

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার বড় ফেনী নদীতে ইদানীং বেশ ইলিশ ধরা পড়ছে। নদীটিতে এত ইলিশ ধরা পড়ায় স্থানীয় জেলেরা বেজায় খুশি। তাঁদের এই খুশিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করছে বড় আকারের ইলিশ।সোনাগাজী উপজেলার আদর্শগ্রাম এলাকার জেলেদের জালে এই ইলিশগুলো ধরা পড়ে।

এই তো গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বড় ফেনী নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ে ৩ কেজি ও ২ কেজির ওজনের ৩৫টি ইলিশ। ওজন করে দেখা যায়, ৩৫টি ইলিশের মধ্যে ৫টির ওজন প্রায় ৩ কেজি করে। বাকি ৩০টি ইলিশের প্রতিটির ওজন ২ কেজির ওপরে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নদীকেন্দ্র চাঁদপুরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘বড় ফেনী নদীতে বেশি ইলিশ পাওয়াটা প্রাকৃতিক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। নদীটিতে যে স্বাভাবিকতা ফিরে আসছে, এটা তারই প্রমাণ।বড় ফেনী একটি সীমান্ত নদী। নদীটির উৎপত্তিস্থল ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তসংলগ্ন বাংলাদেশের খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলা।

স্থানীয় জেলে, মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও ইলিশগবেষকেরা বলছেন, বড় ফেনী নদীতে যে বেশি বেশি ও বড় বড় ইলিশ ধরা পড়ছে, তা অত্যন্ত আনন্দের খবর। কারণ, নদীটি তার হারানো সম্পদ ফিরে পেতে চলছে। কেননা, ১৫ থেকে ২০ বছর আগে নদীটিতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ত। সেই ইলিশের আকারও ছিল বড়। মাঝে কিছুকাল নদীটি তার এই রুপালি সম্পদ হারিয়ে ফেলেছিল। এখন তা ফিরে পাওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

দেশে কয়েক বছর ধরে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। ইলিশ তার আগের বিচরণক্ষেত্রগুলোয় ফিরে আসছে। এর পেছনে সরকারি নিষেধাজ্ঞার সুফলের কথা বলা হচ্ছে।প্রতিবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে। আবার অক্টোবরে ইলিশের প্রজনন মৌসুমে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকে। এসব নিষেধাজ্ঞা সুফল দিচ্ছে বলে খোদ জেলেরাই স্বীকার করছেন।

বড় ফেনী নদীতে এখন বড় আকারের ইলিশ ধরা পড়তে দেখা যাচ্ছে। এগুলোর কোনো কোনোটির ওজন দুই কেজির মতন, কোনোটি তিন কেজি।তিন কেজি ওজনের একটি ইলিশের বয়স অন্তত চার বছর বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক নিয়ামুল নাসের। তিনি বলেন, ‘এই ইলিশগুলো আগে যাওয়া-আসার পথে ধরা পড়েনি। তাই এগুলো এত বড় হতে পেরেছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ শাখার প্রধান মাসুদ আরা মমি বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে মোট ১৫ দিন জাটকা বন্ধের উদ্যোগ নিই। এ বছর সেটি দুই মাসে ১৫ দিন করে ৩০ দিন করা হয়েছে। এ বছর যে পরিমাণ কারেন্ট জাল ও বিহুন্দি জাল ধ্বংস করা হয়েছে, তা আগে কখনো হয়নি। এসব কঠোর পদক্ষেপের ফল আমরা পেতে শুরু করেছি।

অবশ্য বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নদীকেন্দ্র চাঁদপুরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, ইলিশ সারা বছর ধরেই ডিম ছাড়ে। তার অর্থ এই নয় যে সারা বছর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তার প্রজনন নিশ্চিত করতে হবে। অক্টোবরে যে ২২ দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে, তা ইলিশের প্রজননের জন্য যথেষ্ট। পাশাপাশি বছরের বিভিন্ন সময় মাছ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তো থাকছেই। তাই বিধিনিষেধের বাইরের সময় বড় ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে জেলেদের মানা করার কিছু নেই।

Back to top button