সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ২০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে মিলমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। দাম বাড়ানোর এ প্রস্তাব ৩ আগস্ট বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে (বিটিটিসি) দিয়েছে সংগঠনটি।
দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের সঙ্গে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ব্যয়ের একটি বিবরণও তুলে ধরেছে।এ বছর বোতলজাত সয়াবিন তেল সর্বোচ্চ প্রতি লিটার ২০৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল, যা সম্প্রতি দুই দফায় ২০ টাকা কমিয়েছে তেল কোম্পানিগুলো। এর মধ্যে সর্বশেষ গত ২১ জুলাই লিটারপ্রতি দর ১৪ টাকা কমানো হয়।
অবশ্য বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এখন বলছে, টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ভোজ্যতেলের আমদানিমূল্য বেড়েছে। এ কারণে দাম সমন্বয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।এতে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৮০ টাকা, এক লিটারের বোতল ২০৫ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৯৬০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে।
ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান জানান, এর আগে ভোজ্যতেলের দাম যখন সমন্বয় করা হয়, তখন ডলারের দাম বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল। বিশ্ববাজারে দাম যতটা কমেছিল, দেশে সে অনুযায়ী দাম কমেনি।তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রস্তাব পর্যালোচনা করা যেতে পারে। তবে মাথায় রাখতে হবে যে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ চাপে রয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় চাপ আরও বাড়বে।
ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে প্রায় ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা আছে। এর মধ্যে প্রায় ১৮ লাখ টন আমদানি হয়।
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, ২০২০ সালে বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের টনপ্রতি দর ছিল গড়ে ৮৩৮ ডলার, যা গত মে মাসে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৯৬৩ ডলারে ওঠে। এর পর থেকে দাম কমছে। সর্বশেষ জুলাই মাসে টনপ্রতি দর নেমেছে ১ হাজার ৫৩৩ ডলারে। ট্যারিফ কমিশন বার্তা সংস্থা রয়টার্সের হিসাব ধরে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিদিন একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। সেই প্রতিবেদন বলছে, ২৩ মের তুলনায় ৩১ জুলাই সয়াবিন তেলের দাম ৩১ শতাংশ কম ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১–২২ অর্থবছরে দেশে প্রায় ৫ লাখ ১৫ হাজার টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে। আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৭৫ হাজার টন কম আমদানি হয়েছে ২০২১-২২ অর্থবছরে। অবশ্য একই সময়ে সয়াবিন বীজের আমদানি হয়েছে ১৩ লাখ ৩১ হাজার টন, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ২ লাখ ৩৭ হাজার টন বেশি। ২০২১–২২ অর্থবছরে পরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ১৫ হাজার টনের কিছু বেশি। আগের বছর কোনো পরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি হয়নি। ২০২১–২২ অর্থবছরে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ টন পাম তেল আমদানি হয়েছে।
শফিউল আথহার বলেন, ‘দাম নিয়ে ১৫ দিন পরপর পর্যালোচনা সভা হওয়া উচিত। সেটা হচ্ছে না। আমরা চাই সভাটি হোক।’
ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বিপণনকারী শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আথহার তাসলিম আরও বলেন, ‘আমদানির ব্যয় বেড়েছে বলে আমরা নতুন প্রস্তাব দিয়েছি। এখন সরকার বিবেচনা করবে। আমরা কত দামে আমদানি করেছি, ডলারের দাম কত পড়েছে, বিশ্ববাজারে দর কত—এসব বিবেচনা করে সরকারের যদি মনে হয় দাম বাড়ানো উচিত, তাহলে বাড়াবে। কমানোর সুযোগ থাকলে কমাবে।