দিব্যি জমিয়ে মাংসটা কষার পর প্রেশার কুকারে সেদ্ধ হতে দিয়েছেন। ভাবছেন, মাংস সেদ্ধ হতে-হতে কোন-কোন কাজ সেরে ফেলবেন। এমন সময় কুকারে ‘সিটি’ দিতেই মাথায় বাজ ভেঙে পড়ল আপনার! প্রেশার কুকারের ঢাকনার আশপাশ দিয়ে ফসফস করে হাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে একগাদা ঝোল কীভাবে যেন বেরিয়ে আপনার রান্নাঘরের বারোটা বাজিয়ে দিল!
প্রেশার কুকার ওভার ফ্লো করে এমন অবস্থার মধ্যে আমাদের সবাইকে হামেশাই পড়তে হয়। বিশেষ করে ঝোল বা জল যদি বেশি হয়ে যায়, তাহলে এমন কাণ্ড প্রায়শই ঘটে থাকে। কিন্তু আজকের বলবো এমন কিছু টিপসের কথা, যেগুলি জানা থাকলে আপনার প্রেশার কুকার ওভার ফ্লো করবে না, আর রান্নাঘরও থাকবে নিট-অ্যান্ড-ক্লিন!
১ঃপ্রেশার কুকার যখন কিনবেন, তখন দেখবেন, ওর সঙ্গে একটি ছোট বই থাকে। এই বইটিতে আপনি আপনার প্রেশার কুকারের মডেল সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য এবং রান্নার টিপস পেয়ে যাবেন। অনেকেই এই বইটিকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না। এই বইতে কিন্তু আপনি আপনার প্রেশার কুকারে কীরকম রান্না করতে পারবেন, কী পরিমাণ জল তাতে দেওয়া বাঞ্ছনীয়, সে সংক্রান্ত সব তথ্যই পেয়ে যাবেন। ভাল করে একবার অন্তত এই বইটি পড়ে নিলে এবং মাপের আন্দাজ হয়ে গেলে দেখবেন, ওভার ফ্লো আটকানো খুব একটা কঠিন হচ্ছে না।
২ঃপ্রেশার কুকার ব্যবহার করার সময় ওয়াশারটি অনেকসময় আমরা আলগা করে লাগিয়ে রাখি। মনে রাখবেন, ওয়াশারটিকে ঠিক করে সেট করে না আটকালে কিন্তু রান্নার সময় ভিতর থেকে ঝোল, জল ইত্যাদি ওভার ফ্লো করতে পারে। তাই যখনই দেখবেন ওয়াশার পুরনো হয়ে গিয়েছে, বা ওয়াশারটিকে ভাল করে টাইট করে আটকানো যাচ্ছে না, তখনই নতুন ওয়াশার কিনে নিন। প্রতিবার ব্যবহারের পর ওয়াশারটিকেও ভাল করে ধুতে ভুলবেন না। ধোওয়ার পর ওয়াশারটিকে ফ্রিজে রেখে দিন। দেখবেন, ওটি টাইট থাকছে।
৩ঃপ্রত্যেকবার ব্যবহারের পর প্রেশার কুকারটিকে ভাল করে ধোওয়া কিন্তু অত্যন্ত জরুরি। কুকার থেকে সব স্টিম বেরিয়েছে কিনা, সেদিকে খেয়াল রাখুন। স্টিম ভালভগুলিকে নিয়ম করে পরিষ্কার করুন। নয়তো কিন্তু ময়লা জমে প্রেশার কুকার ফেটে গিয়ে নানা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এর জন্য হালকা গরম জল করে সাবান গুলে তাতে প্রেশার কুকার মিনিট পনেরো ভিজিয়ে রেখে দিন। তাহলে পরিষ্কার করা সহজ হবে।
৪ঃপ্রেশার কুকার ব্যবহার করার সময় ওয়াশারটি অনেকসময় আমরা আলগা করে লাগিয়ে রাখি। মনে রাখবেন, ওয়াশারটিকে ঠিক করে সেট করে না আটকালে কিন্তু রান্নার সময় ভিতর থেকে ঝোল, জল ইত্যাদি ওভার ফ্লো করতে পারে। তাই যখনই দেখবেন ওয়াশার পুরনো হয়ে গিয়েছে, বা ওয়াশারটিকে ভাল করে টাইট করে আটকানো যাচ্ছে না, তখনই নতুন ওয়াশার কিনে নিন। প্রতিবার ব্যবহারের পর ওয়াশারটিকেও ভাল করে ধুতে ভুলবেন না। ধোওয়ার পর ওয়াশারটিকে ফ্রিজে রেখে দিন। দেখবেন, ওটি টাইট থাকছে।
৫ঃপ্রেশার কুকারে রান্নার উপাদানগুলি দেবার পর দেখবেন ভিতরে যেন অন্তত এক তৃতীয়াংশ জায়গা ফাঁকা থাকে। না হলে ভিতরের স্টিম বাইরে বেরতে পারবে না। ফলে জল বেরিয়ে ওভার ফ্লো করার সম্ভাবনা তৈরি হবে।এছাড়া এমনটি হলে প্রেশার কুকার ফেটে বিপত্তিও ঘটতে পারে। তাই একেবারে ঠেসে-ঠেসে জিনিস একেবারেই দেবেন না। এছাড়া প্রয়োজনীয় জলের চেয়ে বেশি মাত্রায় জল দিলেও ওভার ফ্লো হতে পারে।
৬ঃডাল রান্নার সময় প্রেশার কুকারে তা দিলে ‘সিটি’ দিলেই কি সব ডাল ওভার ফ্লো করে? ডাল রান্নার সময় প্রেশার কুকারে বাড়তি জল না দেওয়াই ভাল। এবং ডাল সেদ্ধর সময় ৩-৪ চামচ তেল জলের সঙ্গে দিয়ে দিন। দেখবেন, ডাল ওভার ফ্লো করছে না, আর ডালের উপরে ফেনাও তৈরি হচ্ছে না। আর ডাল রান্নার সময় কুকার সবসময়েই কম আঁচে গ্যাসে বসিয়ে রাখুন। এছাড়া ডাল বা ঝোল যাতে খুব ঘন না হয়, সেদিকে নজর রাখুন।
৭ঃঅনেকসময় দেখবেন, কুকারের ঢাকনার ফাঁক দিয়ে স্টিম বেরিয়ে যাচ্ছে।অনেকসময় ভালভে খাবারের টুকরো, ময়লা দীর্ঘদিন ধরে জমতে থাকলে তখন স্টিম ভালভ দিয়ে বেরতে না পেরে ঢাকনার ফাঁকফোকর দিয়ে বেরতে শুরু করে। এমন হলে রান্নাও ঠিক করে হয় না, এবং অনেক সময় লাগে। তাই প্রত্যেকবার ব্যবহারের পর ভালভটি ভাল করে পরিষ্কার করুন। যদি খুব পুরনো হয়ে যায়, তাহলে নতুন একটি ভালভ কিনে নিন।
এই নিয়মগুলি মেনে চলুন এবং আপনার প্রেশার কুকারের যথাযথ যত্ন নিন, দেখবেন ওভার ফ্লো আটকানো খুব সহজেই সম্ভব হচ্ছে।আর আপনার রান্না বান্নাও হয়ে যাচ্ছে খুব অল্প সময়ে এবং খুবই সহজে।