খুনোখুনি, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, মানবপাচারসহ ১৪ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে বসবাসরত রোহিঙ্গা অপরাধীরা।
এসব অপরাধ এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত পাঁচ বছরে শিবিরগুলোতে ৯৮টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, তা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, রোহিঙ্গারা খুনোখুনি, অপহরণ,ধর্ষণ, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, মানবপাচার ও অগ্নিসংযোগসহ ১৪ ধরনের অপরাধে জড়িত। এসব অপরাধের দায়ে ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত থানায় এক হাজার ৯০৮টি মামলা হয়েছে ।
আর এ সময়ের মধ্যে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৯৮টি।গত বছর ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা ও তাদের অধিকার আদায়ের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস এর চেয়ারম্যান মুহিব উল্লাহকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর থেকে নিহতের পরিবারের সদস্যরা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরসা’কে দায়ি করে আসছিল। এরপর ২২ অক্টোবর ১৮ নম্বর ক্যাম্পের একটি মাদ্রাসায় সশস্ত্র হামলা চালিয়ে গুলি করে একটি মাদ্রাসার ছয়জন ছাত্র-শিক্ষককে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এসব বড় ঘটনার পরেও একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটলেও তা ঠেকানো যাচ্ছে না।
এমনকি রোহিঙ্গা শিবিরে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির (আরসা) উপস্থিতির বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ওঠে এলেও এত দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা সরকারের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়।সর্বশেষ ১৩ জুন পুলিশের দেওয়া রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে শরণার্থী শিবিরে আরসা সদস্যদের উপস্থিতি স্বীকার করে পুলিশ।
ওই তদন্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়, মুহিব উল্লাহ আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীর নির্দেশে হত্যা করা হয় এবং মুহিব উল্লাহ আরসা প্রধানের চেয়ে জনপ্রিয় নেতা হয়ে যাচ্ছিলেন বিধায় তাঁকে হত্যা করে আরসার সদস্যরা। মুহিব উল্লাহর সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের কারণে আরসার কার্যক্রমে বাঁধা সৃষ্টি হচ্ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।সাধারণ রোহিঙ্গাদের ভাষ্য, রোহিঙ্গা শিবিরে আরসা সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সাধারণ রোহিঙ্গারা।
শিবিরে ডাকাতি,চাঁদাবাজি,খুন,ধর্ষনসহ এমন কোন অপরাধ নেই যেখানে আরসা জড়িত নয়। তাদের মতে, নানা অপরাধের পাশাপাশি আরসা সন্ত্রাসীরা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিপক্ষে কাজ করে আরসা।জঙ্গি সংগঠনটি ২০১৬ সালের অক্টোবরে এবং ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালায়।
এই হামলার জবাবে সর্বাত্মক ও নিষ্ঠুর সামরিক অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী ও রাখাইনেরা। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে কয়েকদিনের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। তাঁদের এখনও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার সরকার।প্রসঙ্গত সরকারি হিসাবে কক্সবাজার জেলার উখিয়া, টেকনাফ ও নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরসহ প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।
যাদের আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার সহায়তায় খাবারসহ মানবিক সেবা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এসব রোহিঙ্গা আগমনের প্রায় পাঁচ বছর হলেও এখনও একজনকে ফেরত নেয়নি মিয়ানমার।