আমেরিকাএক্সক্লুসিভএশিয়াডিফেন্স খবরবিশ্ব সংবাদ

চীনের অস্ত্র সম্ভার নিয়ে বিশ্বে জল্পনা কল্পনা

বিশ্বের সামরিক বিশেষজ্ঞ শুরু করে কৌতুহলীদের চোখ এখন চীনের দিকে। যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধির সফরের পর সত্যিই কী তাইওয়ানে হামলা করবে চীন। শুধু তাই নয়, চীনের কাছে কী কী অস্ত্র আছে তা নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। চীনের হাতে কী কী অস্ত্র আছে তা জানার চেষ্টা করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে বাজছে নতুন যুদ্ধের দামামা। যে কোনো সময় যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে পারে চীন ও তাইওয়ান। আজ সোমবার থেকে তাইওয়ানের চারপাশে সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্টের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর নিয়ে উত্তেজিত হয়। এ মহড়া তথা যুদ্ধ যুদ্ধাবস্থা সে কারণেই।

সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, হাইপারসনিক অর্থাৎ শব্দের চেয়েও দ্রুতগামী ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে জোর দিয়েছে চিন। লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক জিনো লিওনির মতে, ‘পিছিয়ে’ আছে জেনে বেইজিং অন্যান্য অস্ত্রের মতো ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতেও টেক্কা দিতে চাইছে।

তবে চীনের হাতে কী কী ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র আছে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের কাছে স্পষ্ট তথ্য নেই বলেই চলে। কারণ শব্দের চেয়েও দ্রুতগামী ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কথা অস্বীকার করেছে চীন। তবে গত বছর দুটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় স্পষ্ট হয় যে চীনের হাতে ঘণ্টায় ১২ হাজার ১৬৯ কিলোমিটার গতিবেগে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার প্রযুক্তি আছে।

ধারণা করা হচ্ছে- চীনের কাছে দুই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র আছে। এর একটি হাইপারসনিক গ্লাইড ক্ষেপণাস্ত্র, যা অনেক উঁচু দিয়ে গিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। অপরটি ফ্র্যাকশনাল অরবাইটাল বম্বার্ডমেন্ট সিস্টেম (এফওবিএস), যা নিচু কক্ষপথে উড়ে গিয়ে আঘাত হানে।

নের শক্তিশালী পদাতিক সেনাবাহিনী আছে। তাদের রয়েছে প্রচুর ট্যাঙ্ক এবং সাঁজোয়া যান। কিন্তু চীনের মূল শক্তি হচ্ছে তার নৌবহর। সমরাস্ত্র বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, চীনা নৌবহর দুনিয়ায় সবচেয়ে বড়।চীনা নৌবহরে রয়েছে বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ। নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ওই যুদ্ধজাহাজে ৪০-৬০টি বিমান থাকতে পারে। থাকতে পারে হেলিকপ্টারও। চীনের ওই বিমানবাহী জাহাজের নাম ‘ফুজিয়ার টাইপ-০০৩ এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার’।

সামরিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা- ২০৪০ সালের মধ্যে চীনা নৌবহরের আকার আরও ৪০ শতাংশ বাড়বে। চীনের বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে জলসীমা। সে কারণেই নৌবহরের আয়তন বৃদ্ধিতে বিশেষ জোর দিয়েছে দেশটি। ছোট-বড় নানা আকারের নৌবহর রয়েছে চীনের হাতে।

রয়েছে আকাশ এবং জলে চলতে পারে এমন উভচর বিমান। রয়েছে নানা শ্রেণির ডুবোজাহাজ এবং বিমান নামার জন্য বিশেষ ধরনের যুদ্ধজাহাজ।যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের ধারণা, ২০৩০ সালের মধ্যে চীন পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা অন্তত চার গুণ বাড়িয়ে ফেলবে। যার অর্থ, ওই সময়ের মধ্যে চীনের হাতে থাকবে হাজার খানেকের মতো নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড।

ধারণা করা হয়, ‘রেলগান’ নামক একটি অস্ত্র তৈরিতে সক্ষম হয়েছে চীন। যা আসলে দুটি রেললাইনের ওপর বসানো একটি দৈত্যাকার বন্দুক। তড়িৎচৌম্বকীয় শক্তির মাধ্যমে সেই বন্দুক থেকে বুলেট ছোড়া হয়, যার আকার একটি গোলার মতো। ওই বুলেট শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি গতিতে ছুটে। চীনের হাতে ‘রেলগান’ বসানো যুদ্ধজাহাজ রয়েছে বলেই সমরবিদদের একটা বড় অংশের মত।

চীনের হাতে রয়েছে ‘মাদার অব অল বোম্ব’। যা বোমারু বিমান থেকে ফেলা যাবে। তবে এ নিয়ে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি। চীনের হাতে রয়েছে যুদ্ধজাহাজ ধ্বংসকারী ‘ক্যারিয়ার কিলার’ ক্ষেপণাস্ত্র। যুদ্ধে নৌবহর ধ্বংস করতে ওই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র কার্যকরী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

চীনের আরও ভয়ঙ্কর অস্ত্র হল সাইবার হামলা। ইতোমধ্যেই চীনা হ্যাকারদের বিরুদ্ধে বার বার সাইবার হামলারর অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশ। গত জুলাই মাসে ওই সাইবার হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুনিয়ার অন্তত ৩০ হাজার সংস্থা। সেখান থেকে নানা তথ্য চুরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের সরাসরি সংঘাত ঘটলে তাতে বড় ভূমিকা নিতে পারে চীনা হ্যাকাররা।

রাডারকে ফাঁকি দিতে পারে এমন ড্রোন রয়েছে চীনের হাতে। যার নাম ‘স্টেলথ ড্রোন’। রাডারকে ফাঁকি দিতে পারে এমন যুদ্ধবিমানও রয়েছে চীনের হাতে। যার নাম ‘স্টেলথ ফাইটার’।চীনের  রয়েছে দুনিয়ায় সবচেয়ে বড় উভচর বিমান। যা আকাশ-জল দুই জায়গাতেই চলতে পারে। যা সাধারণত বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সেই বিমানের নাম ‘এজি-৬০০’। চীনের কাছে আছে আরও এক ভয়ঙ্কর অস্ত্র। সেটি হলো ‘সিআর-৫০০ গোল্ডেন ঈগল’ নামে মানববিহীন হেলিকপ্টার।

সম্প্রতি চীন দাবি করেছে, সেনা বাঙ্কার ধ্বংস করার মতো বোমা রয়েছে তাদের হাতে। ৯০ ডিগ্রি কোণে গুলি ছোড়া যেতে পারে এমন আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে তাদের হাতে। কোনো বিশেষ অভিযানে ওই ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে।যুদ্ধ মানে শুধুমাত্র অস্ত্রের ব্যবহার নয়। চীনা সমরসজ্জার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স) ব্যবহার। মিলিটারি রোবোটিকস এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে ব্যাপকভাবে ওই প্রযুক্তির ব্যবহার করেছে চীন।

Back to top button