চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার হাড়িয়া গ্রামের নূরুল আমিনের মেয়ে পারভীন আক্তারেরকে (২৩) কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার আশিয়াদারি গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে প্রবাসী মহিন উদ্দিনের সঙ্গে ৩ বছর পূর্বে বিবাহ দেয়া হয়। এরই মধ্যে সুখের সংসারে ফাহাদ নামে একটি শিশু সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, যার বর্তমান বয়স দেড় বছর।
ওই সময় দাম্পত্য জীবনের কিছু সময় অতিক্রান্ত হতেই সংসারে শুরু হয় গৃহ বিবাদ। স্ত্রী পারভীন আক্তার ওই কলহ হজম করতে না পেরে নিজেকে গুছিয়ে বাবার বাড়ি থাকার সিদ্ধান্ত নেন। এক পর্যায়ে লিগ্যাল এইড কার্যালয় চাঁদপুরের সিদ্ধান্ত মতে, তাকে স্বামী পক্ষের তরফ থেকে ভরণপোষণবাবদ প্রতিমাসে ৮ হাজার টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পারভীনের ভাষ্যমতে, তার ওই প্রবাসী স্বামী মহিন ওই চুক্তি মোতাবেক প্রতিমাসের হাত খরচের টাকা না দিয়ে দূরত্ব তৈরি করে রাখে।
এজন্য নিজ শিশু সন্তানকে নির্যাতন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছেন সেই মা। ওই শিশু নির্যাতনের বিষয়টি তার প্রবাসী পিতার দৃষ্টিগোচর হলে তার আকুতিতে শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ হুমায়ন রশিদ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। মঙ্গলবার রাত ১২টায় শাহরাস্তি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মন্নান, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ আবু ইসহাক, ইউপি চেয়ারম্যান জোবায়েদুল কবির বাহাদুর হাড়িয়া গ্রামের দুলাল মেম্বারদের বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া শিশুটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে তাকে দ্রুত শাহরাস্থি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
পারভীন তার আদরের ধন শিশু পুত্রটির নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে স্বামীকে পাঠায়। পরে তার স্বামী ওই শিশু নির্যাতনের লোমহর্ষক ভিডিওটি দেখে শিশুটির নিরাপত্তায় তার গ্রামের বাড়ি মনোহরগঞ্জের কতিপয় ব্যক্তিদের শরণাপন্ন হন। এদিকে ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে ভাইরাল হয়ে পড়লে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ সহ প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তিদের নজরে আসে।
শাহরাস্তি উপজেলা প্রশাসন শিশুটিকে উদ্ধার করে শাহরাস্তি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসা শেষে তার মা সহ আদালতে প্রেরণ করে।থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আবদুল মান্নান জানান, শিশু নির্যাতনকারী মাকে ৫৪ ধারায় আদালতে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রে হুমায়ন রশিদ বলেন, ভাইরাল ভিডিওয়ের প্রেক্ষিতে শিশুটাকে উদ্ধার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ প্রসঙ্গে শিশুটির মা পারভীন আক্তার জানান, বিয়ের পর থেকে তার স্বামী বহু নারীতে আসক্ত।
এসবের প্রতিবাদ করায় তিনি তাদের ভরণপোষণ বন্ধ করে দেন। স্বামীকে শিক্ষা দিতেই তিনি শিশুকে নির্যাতন করে শিশুর পিতার নিকট পাঠিয়েছেন। শিশুর দাদা আবদুল করিম জানান, ‘অনেক চেষ্টা করেও তার পুত্রবধূর উগ্র চলাফেরা বন্ধ করা যায়নি। পুলিশ উদ্ধার না করলে আমার নাতিকে হয়তো মেরেই ফেলতো।