শিশু-মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে দেড় কোটি টাকার যন্ত্রে জমছে ধুলা
রাজধানীর মাতুয়াইলের শিশু-মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’-এর জন্য কেনা প্রায় দেড় কোটি টাকার পাস্তুরাইজিং মেশিন, অত্যাধুনিক ফ্রিজসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতিতে ধুলা জমেছে।
মায়ের বুকের দুধ সংরক্ষণে হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের উদ্যোগটি ঢাকা জেলার মাতুয়াইলের শিশু-মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (আইসিএমএইচ) নবজাতক পরিচর্যাকেন্দ্র (স্ক্যানো) এবং নবজাতক আইসিইউর (এনআইসিইউ) নিজস্ব উদ্যোগ। বেসরকারি আর্থিক সহায়তায় ব্যাংকটি স্থাপন করা হয়েছিল। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকটি যাত্রা শুরুর আগে ব্যাংকের জনবলকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। যন্ত্রপাতি সব চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে এখন আপাতত সবকিছুই থেমে আছে।
অন্যদিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন দুধমা-সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় এখনো কোনো মতামত দিতে পারছে না। মায়ের বুকের দুধ সংগ্রহ এবং অন্য নবজাতকদের খাওয়ানোর ক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়াহর কোনো লঙ্ঘন না করে সে ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করে এ ধরনের ব্যাংক করার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিক অনুমতি না দিলেও মনোভাব ‘ইতিবাচক’ বলে বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনে মহাপরিচালক হিসেবে ড. মো. মুশফিকুর রহমান ২০২১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি যোগ দিয়েছেন। হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি এ পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর এ-সংক্রান্ত কোনো আলোচনা শোনেননি। বিষয়টি যেহেতু সংবেদনশীল, তাই যথাযথ আলোচনার মাধ্যমেই তার সমাধান করতে হবে
২০১৯ সালে মিল্ক ব্যাংক উদ্বোধনের সময় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছিলেন, যে মায়েদের সন্তান জন্মের পর মারা গেছে বা নিজের সন্তানকে খাওয়ানোর পরও মায়ের বুকে অতিরিক্ত দুধ আছে, সেই মায়েরা হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকে দুধ সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন। যে নবজাতকের জন্মের পরই মা মারা গেছেন বা যাদের মা অসুস্থতার জন্য দুধ খাওয়াতে পারছেন না, সেই নবজাতকেরা এই দুধ খেতে পারবে।
আইসিএমএইচের সহযোগী অধ্যাপক এবং ইনস্টিটিউটের এনআইসিইউ ও স্ক্যানোর ইনচার্জ মজিবুর রহমান হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।মজিবুর রহমান বলেন, ইসলামে দুধমায়ের ছেলেমেয়ের সঙ্গে ওই মায়ের দুধ যে ছেলে বা মেয়ে খেয়েছে, তাদের বিয়ে নিষিদ্ধ।
মো. শামসুল হক আরও বলেন, কোনো নবজাতক মায়ের বুকের দুধ না পেলে বর্তমানে পারিবারিক উদ্যোগে আশপাশের মায়েদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করে খাওয়ানো হচ্ছে। কোন মায়ের দুধ খেল, তা সবার জানা থাকছে। মিল্ক ব্যাংকে এই তথ্যগুলো কতটুকু সংরক্ষণ করা যাবে, সে চ্যালেঞ্জ তো আছেই।তবে ব্যাংকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ব্যাংকে সার্বিক নজরদারি বাড়ানো হলে, যথাযথ প্রক্রিয়ায় তথ্য সংরক্ষণ করা হলে দুধমা নিয়ে যে আশঙ্কা, তা পুরোপুরি দূর করা সম্ভব হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নবজাতক এবং শিশুদের জীবন বাঁচানোর জন্যই হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক। তাই সরকার বিষয়টি নিয়ে যে বিতর্ক তার সমাধান করে এ ধরনের ব্যাংক তৈরিতে উদ্যোগ নিতে পারে।