প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র জোরদার হচ্ছে।শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২০১৪–এর নির্বাচনের আগে চক্রান্ত করেছে, ২০১৮–এর নির্বাচনের আগে করেছে, আবার এখন নির্বাচন যখন ঘনিয়ে আসছে, তখন শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগও যেমন আসবে, পাশাপাশি যেখানে রাসেলকে পর্যন্ত খুন করল, আর সেই পরিবার থেকে বেঁচে এসে সরকারে এলাম, সাফল্য এনে দিলাম, বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিলাম, এটা অনেকেই পছন্দ করবে না। কাজেই তারা তৎপর আছে সারাক্ষণই। আমি জানি, তাদের তৎপরতা অনেক বেশি। তাদের খবরও আমি রাখি, আমার তো অচেনা কেউ নাই। তারা তাদের চক্রান্ত করেই যাচ্ছে।’
বুধবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নবনির্বাচিত বোর্ড সদস্যরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্যোগ চতুর্দিক দিয়ে আসবে ও আসছে। একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অপর দিকে মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ। তাই এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি ফেলে রাখা যাবে না। উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে নিজের ব্যবস্থা নিজেকেই করে রাখতে হবে।’
করোনাভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে স্যাঙ্কশন এবং পাল্টা স্যাঙ্কশনকে কেন্দ্র করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি কাজে লাগানোর মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কৃচ্ছ্রসাধনের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এ স্যাঙ্কশনের ফলেই প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়ছে এবং আমি জানি না, কারা লাভবান হচ্ছে এই যুদ্ধে। লাভবান হচ্ছে অস্ত্র প্রস্তুতকারী ও সরবরাহকারীরা। আর মরছে সাধারণ মানুষ, ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে সাধারণের আজকে কী মানবেতর জীবন। সেটাই সবচেয়ে দুঃখজনক।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে এটা প্রমাণিত সত্য যে আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ কাজ করেনি ও করবেও না। আর অবৈধভাবে যারা ক্ষমতা দখলকারী, তারা তো ক্ষমতার চেয়ারটা কীভাবে দখলে রাখবে, ওই চিন্তাতেই ব্যস্ত থাকে।
সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিলেও বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কিছুটা সীমিত করতে বাধ্য হয়েছে বলে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘কেবল আমরাই নয়, এখন ইউরোপের দেশগুলো থেকে শুরু করে আমেরিকা পর্যন্ত জ্বালানি সাশ্রয় করছে। কাজেই আমরা আগাম ব্যবস্থা নিচ্ছি, ভবিষ্যতে যেন বিপদে না পড়তে হয়। তা ছাড়া এক কোটি মানুষকে আমরা স্বল্পমূল্যে খাবার দিচ্ছি অর্থাৎ কোনো মানুষ যাতে কষ্টে না থাকে, সেটাই আমাদের চেষ্টা।’
তাঁর কাছে ক্ষমতাটা জনগণকে সেবা করার একটা সুযোগ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা থাকলে আছে, না থাকলে নাই। তবে থাকলে দেশের মানুষের জন্য কাজ করার একটা সুযোগ পাই এবং সেই সুযোগটা যত দূর পারি কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। তাই আমি আমার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি তৃণমূল থেকে সাধারণ মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে কার কী লাভ হবে জানি না, তবে দেশের মানুষের তো ক্ষতিই হবে। কারণ, আমরা তো একেকটা জিনিস টার্গেট করে কাজ করছি। যেমন বলেছি, একজন মানুষও ভূমিহীন থাকবে না। জাতির পিতা যে পদক্ষেপ শুরু করেছিলেন নোয়াখালী থেকে। আমি সেই দায়িত্বটা পালন করে যাচ্ছি। এখন আরও ৫৬ হাজার ঘর তৈরি হচ্ছে (বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য)। তাহলে এখানে আর কোনো ভূমিহীন থাকবে না।’
দেশে ভূমিহীন-গৃহহীন খুঁজে বের করায় আওয়ামী লীগের সভাপতি সরকারের পাশাপাশি তাঁর দলের নেতা–কর্মীদেরও দায়িত্ব দিয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘তারপরও আমি আলাদাভাবে খবর নিচ্ছি। রংপুরসহ বিভিন্ন বিভাগে আমাদের কৃষক লীগ ও আওয়ামী লীগের যে নেতা-কর্মী রয়েছেন তাঁদের বলেছি, কোথায়, কে ভূমিহীন-গৃহহীন রয়েছে খোঁজ করে তালিকা করতে হবে। একেকটা এলাকা ধরে আমাকে তালিকা দিতে বলেছি, যাতে কেউ বাদ না যায়। আমরা তাঁদের ঘর করে দেওয়ার পাশাপাশি জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেব। কেননা বাংলাদেশে একজন মানুষও আর ভূমিহীন বা গৃহহীন থাকবে না।’
শেখ হাসিনা দুর্যোগকালে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে মানবতার সেবায় সম্পৃক্ত করার উদাত্ত আহ্বান জানান। আগামী চার বছরের জন্য আন্তর্জাতিক রেডক্রস সংস্থা আইএফআরসির সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আবদুল ওয়াহাবকে অভিনন্দন জানান তিনি।