এই গরমে ছোট্ট সোনামনির যত্ন
গরমের শুরুতে ছোট্টমণির চুলের দিকে নজর দিতে হবে। গরমে চুলের গোড়া ঘেমে যায়। অনেক সময় অতিরিক্ত গরমে চুলের ত্বকে খুশকি বা ঘামাচি হয়। তাই গরমের শুরুতেই শিশুর চুল ছোট করে দিতে হবে। প্রয়োজনে ন্যাড়া মাথা করতে হবে।
এতে চুলের গোড়া ঘেমে গেলেও তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়, খুশকি বা ঘামাচি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। লম্বা চুলের ভেতরে ঘেমে গেলে সেটা দেখা যায় না। এতে ঘাম বসে ঠাণ্ডা লাগার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
গরমের সময় শিশুদের পেট খারাপ বা ডায়রিয়া হতে পারে। শিশুর পেট খারাপ হলে তাকে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। সেই সঙ্গে পানি, ডাবের পানি ও অন্যান্য তরল খাবার দিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত শিশুর পায়খানা স্বাভাবিক না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এই নিয়ম মেনে চলতে হবে।
লক্ষ্য রাখতে হবে যেন শিশুর পানিশূন্যতা না হয় এবং তার প্রস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে। ৪ থেকে ৬ ঘণ্টার ব্যবধানে প্রস্রাব করা স্বাভাবিক। এ ছাড়া শিশুর পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। এ সময় কোনো অবস্থাতেই মায়ের দুধ বন্ধ করা যাবে না। সঠিক নিয়মে খাবার স্যালাইন তৈরি করতে হবে এবং অতিরিক্ত স্যালাইন খাওয়ানো যাবে না।
জ্বর কোনো রোগ নয়, এটি রোগের উপসর্গ। অতিরিক্ত গরমের কারণে শিশুদের ভাইরাস জ্বরের প্রবণতা বেড়ে যায়। এ সময়ে সংক্রমণ, ঠাণ্ডাসহ নানা কারণে জ্বর হয়।তাই মূল রোগের চিকিৎসার মাধ্যমে জ্বরের চিকিৎসা করা সম্ভব। তবে খেয়াল রাখতে হবে জ্বর যেন অতিরিক্ত বেড়ে না যায়।
অতিরিক্ত জ্বরে মাথা ও গা মুছে দিতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক মাত্রায় ওষুধ দিতে হবে। যেসব শিশুর জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হওয়ার ইতিহাস আছে তাদের জন্য জ্বর আসার সঙ্গে সঙ্গেই প্যারাসিটামল সেবন করাতে হবে। তাছাড়া ১০০ ডিগ্রির উপরে জ্বর আসলে ওষুধ দেয়া ভালো।
শিশুদের ক্ষেত্রে র্যাশ বা ফুসকুড়ি বেশি হয়। সাধারণত ঘামাচি বা চামড়ার উপরে লাল দানার মতো হয়ে। নিয়মিত গোসল করিয়ে পরিষ্কার জামা পরাতে হবে। ঘাম ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে নিয়ে, এরপর শুকনো কাপড় দিয়ে মুছতে হবে। পাউডার দিলে তা যেন ঘামে ভিজে না যায় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে।
ফ্যান চলা অবস্থায় পাউডার দেয়া যাবে না। এতে শ্বাসনালিতে পাউডার চলে যেতে পারে। গা শুকিয়ে গেলে পাউডার লাগাতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন পাউডার চামড়ার ভাঁজে জমে না থাকে। খেয়াল রাখতে হবে, ভেজা ডায়াপার যেন শিশুর গায়ে বেশিক্ষণ না থাকে। ডায়াপার ভিজে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তা বদলাতে হবে। তবে গরমের সময় বেশিক্ষণ ডায়াপার না পরিয়ে রাখাই ভালো। অনেক সময় র্যাশ বেশি হয়ে গেলে ঘা হয়ে যেতে পারে।
সর্দি-কাশি, ঘন ঘন শ্বাস নেয়া, কাঁপুনিসহ তীব্র জ্বর নিউমোনিয়ার লক্ষণ। তাই শিশুর নিউমোনিয়া হয়েছে মনে হলে দ্রুত শিশু বিশেষজ্ঞ দেখাবেন। মনে রাখবেন শুধু সর্দি অথবা শুধু কাশি থেকেও দেরি হলে নিউমোনিয়া হতে পারে।
এ সময়টায় শিশুদের চিকেন পক্স/ জলবসন্ত হয়ে থাকে। সাধারণত ১-৫ বছরের শিশুদের বেশি হয়। এ অসুখ হলে তাকে নরম সুতি কাপড় পরাতে হবে। বেশি করে পানি খাওয়াতে হবে। শিশু মায়ের দুধ পান করলে তা চালিয়ে যেতে হবে। তরল বা নরম জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে। তবে দেখতে চিকেন পক্স মনে হলেও অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
১. নিয়মিত গোসল করান এবং ধুলাবালি দূরে রাখুন। ২. বাইরে বের হলে বিশুদ্ধ খাবার পানি সঙ্গে রাখুন। ৩. ঘেমে গেলে ঘাম মুছিয়ে দিন। ৪. শিশুকে নরম খাবার খাওয়ান। ৫. ত্বকের র্যাশ বা ফুসকুড়ি এড়িয়ে চলতে শিশুর ত্বক পরিষ্কার রাখুন।
৬. প্রচুর পানি খাওয়ান, যেন পানিশূন্যতা না হয়। ৭. সদ্যজাত শিশুর শরীর উষ্ণ রাখতে তাকে ঢেকে রাখুন, খেয়াল রাখুন ঘেমে যেন না যায়। ৮. এ সময় মশা-মাছি, পিঁপড়া ইত্যাদি পোকামাকড়ের প্রকোপ বাড়ে। যা শিশুর অসুস্থতার কারণ। ঘর পোকামাকড় মুক্ত রাখুন। ৯. সর্বোপরি শিশুর দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। তার নিজস্ব রুটিন চলছে না মনে হলে তাকে শিশু চিকিৎসক দেখান।