বাসায় নিষিদ্ধ মাদক মারিজুয়ানা রাখার অভিযোগে নাইজেরিয়ান বন্ধুসহ আটক হয়েছিলেন বাংলাদেশি কূটনীতিক কাজী আনারকলি। প্রায় ২৪ ঘণ্টা তিনি বন্দি ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ডিটেনশন সেন্টারে। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পরে কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় বিশেষত ইন্দোনেশিয়া সরকারের বদান্যতায় তিনি মুক্তি পান। দূতাবাসের জিম্মায় তাকে ছাড়া হলেও শর্ত দেয়া হয় যত দ্রুত সম্ভব ইন্দোনেশিয়ার সীমানা ত্যাগ করতে। বিষয়টি সেগুনবাগিচার নোটিশে আসে তাৎক্ষণিক।
মাদক নিয়ন্ত্রণে ইন্দোনেশিয়ার সরকার অত্যন্ত কঠোর। তারা চিকিৎসা কর্মেও এখন পর্যন্ত মারিজুয়ানার ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি। মাদক রাখা বা সেবনে যাবজ্জীবন এমনকি মৃত্যুদণ্ডেরও বিধান রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার আইনে।
সূত্র জানায়, কূটনীতিকের বাসায় মাদক রয়েছে এটা নিশ্চিত হওয়ার পরই ৫ই জুলাই তারা অভিযান পরিচালনা করে। তবে তার আটক এবং মুক্তির পর দেশত্যাগে ততটা চাপ তৈরি করেনি। বরং সেই চাপ ছিল ঢাকার পক্ষ থেকে। কারণ তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের পূর্ব নির্ধারিত ইন্দোনেশিয়া সফরের প্রস্তুতি চলছিল।
জাকার্তার বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমেই চলে নেগোসিয়েশন। সূত্র বলছে, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ইন্দোনেশিয়ার মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত কঠোরতার সঙ্গে কাজী আনারকলির বাসায় অভিযান চালায়, মাদক উদ্ধার করে এবং নাইজেরিয়ান বন্ধুসহ তাকে তুলে নিয়ে যায়।
সূত্র মতে, যুক্তরাষ্ট্রের লস এনজেলস থেকে জোগাড় হওয়া ওই বিদেশি বন্ধুর সঙ্গেই জাকার্তার বাসা শেয়ার করতেন আনারকলি। সূত্র মতে, এ দু’জনের সম্পর্ক ছিল লিভ টুগেদারের। তবে তার বয়ফ্রেন্ড বা যার সঙ্গে বাসা শেয়ার করতেন তার নাম জানা সম্ভব হয়নি।এটা নিশ্চিত যে, তিনি নাইজেরিয়ার নাগরিক।
এদিকে আনাকলির আটক বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে সরকার। এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামসকে প্রধান করে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ থেকে তদন্ত কমিটি আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করবে।
তবে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, কূটনৈতিক দুনিয়ায় বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তিকে চরমভাবে ক্ষুণ্ন্ন করা আনারকলির মারিজুয়ানা কাণ্ডের অনানুষ্ঠানিক তদন্ত আগে থেকেই চলছে। ১৬ই জুলাই জাকার্তা মিশনের উপ-প্রধান কাজী আনারকলি ইন্দোনেশিয়া ছেড়ে আসার পরদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন দেশটি সফরে যান। সেই সময় মন্ত্রীর সফরসঙ্গী ছিলেন সচিব মাশফি বিনতে শামস।
কূটনৈতিক দায়িত্ব থেকে আনারকলিকে ফেরত আনার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগে বাসার গৃহকর্মী নিখোঁজের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলস থেকে ২০১৭ সালে তাকে ফেরত আনা হয়েছিল। পররাষ্ট্র ক্যাডারের ২০ ব্যাচের কর্মকর্তা আনারকলি ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসে বাংলাদেশের ডেপুটি কনসাল জেনারেল ছিলেন। মার্কিন সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে তাকে জাকার্তায় জরুরি পদায়ন করা হয়েছিল এবং ইন্দোনেশিয়ার ভিসা পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সচিব মাশফি বিনতে শামসকে বিষয়টির প্রাথমিক অনুসন্ধান করে আসতে বলা হয়েছিল। তিনি এ নিয়ে কিছু তথ্য সংগ্রহ করে এসেছেন। সেই সময়ে ইন্দোনেশিয়া সরকারের কাছে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত রিপোর্টের অনুরোধ করা হয়েছে। ওই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে ঢাকা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আনারকলিকে ডাকা এবং অন্যান্য প্রক্রিয়া দ্রুতই সম্পন্ন হবে। উল্লেখ্য, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনও এ বিষয়ে অবহিত জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, আনারকলিকে ফিরিয়ে আনা এবং তার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্তের কাজটি নীরবেই করতে চেয়েছিল মন্ত্রণালয়।
অনেক আগেই তার তদন্তের ফাইল ইনিশিয়েট করা হয়েছে এবং তা অনুমোদন হয়ে আছে। কিন্তু চিঠি ইস্যু হয়নি। আজ চিঠি ইস্যু এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে বলে নিশ্চিত করেছে সেগুনবাগিচা।
এদিকে ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশ মিশনের উপ-প্রধান কাজী আনারকলির বাসায় মাদক পাওয়া এবং তাকে প্রত্যাহারের ঘটনাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক ও বিব্রতকর’ বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, ‘আমরা এটা ইনভেস্টিগেট করছি। নিউজটা আমরা দেখেছি, নিউজটা শুধু দেখার বিষয় না, আমরা সেই কর্মকর্তার বিষয়ে কয়েক দিন আগ থেকেই জানি। আমরা তদন্ত করছি। এটা আমাদের জন্য বিব্রতকর।