শোকের মাস আগস্ট শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সংঘাত এবং সহিংসতার মধ্য দিয়ে। শুধু চট্টগ্রাম নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানেই এখন ছাত্রলীগ যেন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগের জন্য৷ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রাচীনতম দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। কিন্তু তারপরও আওয়ামী লীগ স্বস্তিতে নেই। অন্য দলের আক্রমণ বা ভয়ে ভীত নয় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সমস্যা আছে তার নিজেকে নিয়ে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে দলের সাংগঠনিক শক্তি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, জনগণের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দূরত্ব হচ্ছে এবং আওয়ামী লীগ আগের মতো আওয়ামী লীগ নেই বলেই অনেকে মনে করছেন।এই সংকট গুলো সমাধান না করতে পারলে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য অশনি সংকেত অপেক্ষা করছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন। যে পাঁচটি সমস্যা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উদ্বিগ্ন তার মধ্যে রয়েছে:
১. বেপরোয়া ছাত্রলীগ: গত কয়েক বছর ধরেই ছাত্রলীগের বেপরোয়া আচরণ আওয়ামী লীগের জন্য সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এমনকি ছাত্রলীগের নেতৃত্ব পরিবর্তন করার পরও এই সংগঠনটি এখন পর্যন্ত সুশৃঙ্খল সংগঠন হিসেবে দাঁড়াতে পারেনি। বরং এই সংগঠনের ভিতরে নানারকম অনিয়ম, অপকীর্তির কাহিনী প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। এখন ছাত্রলীগের সংকট দেখা দিয়েছে চট্টগ্রামে। কিছুদিন আগে সিলেটে ছাত্রলীগের সমস্যা ছিলো। থেমে থেমে সারাদেশেই ছাত্রলীগের সংকট এবং সমস্যা আওয়ামী লীগের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২. কমিটি বাণিজ্য: আওয়ামী লীগের কমিটি বাণিজ্য একটি বড় সংকট হিসেবে সামনে এসেছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম প্রকাশ্যে বলেছেন যে, কমিটি বাণিজ্য এবং পদ বাণিজ্য করে কোন কোন নেতা দলের সর্বনাশ করছেন। তিনি যেকোনো মূল্যে কমিটি বাণিজ্য বন্ধ করার জন্য দাবি জানিয়েছেন। তারপরও ঢাকা মহানগরী সহ বিভিন্ন স্থানে কমিটি গঠন নিয়ে নানারকম বাণিজ্যের খবর শোনা যাচ্ছে, এটি আওয়ামী লীগের একটি বড় উদ্বেগের কারণ বলে মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরা।
৩. সিনিয়র নেতৃত্বের উদাসীনতা: আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সংকট চরম ভাবে দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পর আর কোনো নেতা দলের সব মানুষের কাছে তেমন আস্থাভাজন এবং জনপ্রিয় নয়। দলের সাধারণ সম্পাদক প্রেস কনফারেন্স করছেন কিন্তু নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার দূরত্ব আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে বলেও অনেকে মনে করেন। একমাত্র প্রেসিডিয়ামের সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আব্দুর রহমান ছাড়া প্রেসিডিয়ামের অন্য কোন সদস্যের কোন সাংগঠনিক তৎপরতা নেই। প্রেসিডিয়ামের সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক মন্ত্রী হওয়ার পরও কিছু কিছু সাংগঠনিক তৎপরতার মধ্যে নিজেকে যুক্ত রাখার চেষ্টা করছেন কিন্তু সেটি সম্পূর্ণ ভাবে তার এলাকাভিত্তিক। অন্যান্য প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে বেগম মতিয়া চৌধুরী কিছু কিছু কাজ করছেন কিন্তু জাতীয় রাজনীতিতে তিনি তেমন ভূমিকা রাখছেন না। আর বাকি প্রেসিডিয়ামের সদস্যরা কোন সাংগঠনিক তৎপরতা দৃশ্যমান নন।
৪. অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর নির্লিপ্ততা: আওয়ামী লীগের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলো এখন দিবসভিত্তিক কর্মসূচিতে ব্যস্ত। তাদের কাজকর্ম এখন শুধুমাত্র বিভিন্ন দিবসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলো কার্যকরভাবে যে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে এগুবে সেটি দেখা যাচ্ছে না। বরং সহযোগী সংগঠনগুলো নানারকম বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে। এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় সংকটের কারণ বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
৫. এমপি লীগ হাইব্রিড: আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে এখন চিহ্নিত করা হচ্ছে দলের বিপুল পরিমাণ অনুপ্রবেশকারী ঢোকা এবং সেই অনুপ্রবেশকারীরা দলের জন্য এক ধরনের আপদ হিসেবে দেখা দিয়েছেন। তাদের বাড়াবাড়ি এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তাদের বসা আওয়ামী লীগের জন্য একটা বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা স্বীকার করছেন যে, আগামী দুই বছরের মধ্যে আওয়ামী লীগকে একটি নির্বাচনে যেতে হবে এবং এই নির্বাচনটি হবে এ যাবৎকালের সবচেয়ে কঠোর, কঠিন নির্বাচন।
আর সেই কারণেই এখন থেকেই সংগঠনের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে, অর্থনৈতিক সংকট সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে চায় তাহলে সংগঠনকে আরো শক্তিশালী গতিশীল করতে হবে। আর এই ৫ সংকট দূর না করলে সংগঠন গতিশীল করা আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।