দরিদ্র নারীদের প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে সৌদি আরবে বিক্রি, পাঁচ প্রতারক গ্রেপ্তার
প্রথমে দরিদ্র পরিবারের নারীদের প্রলোভনের ফাঁদে ফেলা হয়। কোনো অর্থ না নিয়ে ভ্রমণ ভিসায় এসব নারীকে পাঠানো হয় সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে। তারপর মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে দালাল চক্রের কাছে বিক্রি করা হয় তাঁদের।
এরপর বিভিন্ন বাসায় আটকে রেখে চালানো হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।এসব নারীকে দেশে ফিরিয়ে আনার নাম করেও পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হয় মোটা অঙ্কের অর্থ। এমন প্রতারণায় জড়িত একটি চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান জানান, সৌদি আরবে পাচার হওয়া এক নারীর স্বামীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চক্রের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে ফিরিয়ে আনার নাম করে স্বামীর কাছ থেকে মুক্তিপণের অর্থ আদায় করেন চক্রটির সদস্যরা। মুক্তিপণ দিয়েও ওই নারীকে দেশে ফিরিয়ে আনা যায়নি।
সিআইডি জানায়, বৃহস্পতিবার ঢাকার মালিবাগে ডায়নামিক স্টাফিং সার্ভিসেস ওভারসিজ লিমিটেড নামের একটি ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে এ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযানে ৭৮টি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার পাঁচজনই এই প্রতিষ্ঠানের কর্মী।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ফরহাদ হোসেন রেজা সিকদার (৪২), মো. মিজান (৩৯), আনোয়ার হোসেন (৪০), রাজু আহমেদ আরজু (৫০) ও আনোয়ার হোসেন (৩৯)। পলাতক রয়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ইমরান (৪২) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সানাউল্লাহ (৪৫)।এ ঘটনায় কথিত ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও এমডিসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে শুক্রবার হাতিরঝিল থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশে থাকা চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন এলাকা থেকে সহজ–সরল নারীদের উচ্চ বেতনে বিদেশে চাকরির লোভ দেখিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তারপর বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেন।
গত বছরের অক্টোবরে এক নারীকে উচ্চ বেতনে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাঁকে সৌদি আরবে পাঠান চক্রের সদস্যরা। তাঁকে বলা হয়, সৌদি আরবে যেতে তাঁকে কোনো অর্থ খরচ করতে হবে না। তবে বিষয়টি পরিবারের কাউকে জানানো যাবে না। ওই নারীকে বলা হয়, সৌদি আরবে কোনো সমস্যা হলে দ্রুততম সময়ে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। চক্রটির এমন প্রলোভনে পড়ে ওই নারী পরিবারের কাউকে না জানিয়ে একই বছরের নভেম্বরে সৌদি আরবে যান।
সৌদি আরবে পাচার করে ওই নারীকে চার লাখ টাকায় একটি দালাল চক্রের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয় জানিয়ে সিআইডি বলে, তাঁকে দাম্মাম এলাকার একটি বাসায় আটকে রেখে গৃহকর্মীর কাজে বাধ্য করা হয়। সেখানে তাঁর ওপর চলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রায় তিন মাস পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারেননি তিনি।
আটক অবস্থায় থাকার একপর্যায়ে মুঠোফোনে যোগাযোগের একটি অ্যাপের মাধ্যমে ওই নারী তাঁর স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন। তখন স্বামীকে বিস্তারিত ঘটনা জানান। নারীর স্বামী ডায়নামিক স্টাফিং সার্ভিসেস ওভারসিজ লিমিটেডের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন প্রতিষ্ঠানটি মুক্তিপণ হিসেবে তাঁর কাছে চার লাখ টাকা দাবি করে। গত জুনে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে তিন দিনের মধ্যে ওই নারীকে দেশে ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দেওয়া হয়। তবে তাঁকে দেশে আনা হয়নি।