বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ট্যুরিস্ট কোস্টারে পদ্মা সেতু ভ্রমণের উদ্যোগ নিয়েছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পর্যটন ভবন থেকে পদ্মা সেতু পার হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত যায় এ কোস্টার, তারপর আবার ফিরে আসে। ২২ জুলাই (শুক্রবার) ভ্রমণ প্যাকেজের উদ্বোধন করেন পর্যটনমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী।
সাত থেকে আট বছর বয়সে একবার ফেরিতে পদ্মা নদী পার হয়ে গোপালগঞ্জে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন লুৎফুর কবির। তারপর আর পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে কোথাও যাওয়া হয়নি। সম্প্রতি দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ট্যুরিস্ট বাসে পদ্মা সেতু ভ্রমণ করেন তিনি।
লুৎফুর কবির বলেন, ‘পরিবারের সবাই মিলে এই প্রথম একসঙ্গে পদ্মা সেতু ভ্রমণ করলাম। আমরা খুবই উপভোগ করেছি। বাচ্চারা বেশি একসাইটেড ছিল। কারণ, বাচ্চারা এর আগে ওইভাবে এত বড় নদী দেখেনি। এত বড় নদীর ওপর সেতু, তার ওপর দিয়ে গাড়ি যাচ্ছে। সেটা তাদের খুব আনন্দ দিয়েছে।’
উদ্বোধনের দিন বিকেল চারটার পর প্রথমবারের মতো পর্যটক নিয়ে পর্যটন ভবন থেকে দুটি ট্যুরিস্ট কোস্টার পদ্মা সেতুর উদ্দেশে রওনা দেয়। প্রথম দিন কোস্টার ২টিতে মোট ৫৬ জন পদ্মা সেতু ভ্রমণ করেন।
পর্যটন করপোরেশনের ট্যুরিস্ট কোস্টার দুটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি)। গাড়ির ভেতরে ফ্রি ওয়াইফাইয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে, তবে প্রথম দিন কারিগরি ত্রুটির কারণে তা ব্যবহার করতে পারেননি পর্যটকেরা। যাত্রীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় গাড়িতে সিসি ক্যামেরা রয়েছে, যা পর্যটন করপোরেশন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সেই সঙ্গে পাঁচ বছরের কম বয়সীদের কোনো খরচ দিতে হয় না।
পাঁচ বছরের কম বয়সী কন্যা ও স্ত্রীকে নিয়ে ওই কোস্টারে পদ্মা সেতু ভ্রমণ করেন ঢাকার তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়া এলাকার আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘গাড়ির পরিবেশ চমৎকার ছিল। পর্যটকদের সবাই বন্ধুসুলভ ছিলেন। খুব মজা করতে করতে গিয়েছি ও এসেছি। সার্বিকভাবে খুব ভালো অনুভব করেছি।’
দুই বাসের সঙ্গে পর্যটন করপোরেশনের দুজন কর্মকর্তা ও এই প্রতিষ্ঠানের অধীন ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের দুজন শিক্ষার্থী ছিলেন। আরিফুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যাওয়া কর্মকর্তাদের ব্যবহার খুবই বন্ধুসুলভ ছিল।’
প্রথম দিনের ভ্রমণে পর্যটকদের সঙ্গী হয়েছিলেন পর্যটন করপোরেশনের যে দুজন কর্মকর্তা, তাঁদের একজন করপোরেশনটির উপব্যবস্থাপক (ভ্রমণ ও বিপণন) শেখ মেহদি হাসান। তিনি বলেন, শুরুতে শুধু শুক্র ও শনিবার ট্যুরিস্ট বাস চললেও চাহিদা বেশি থাকায় তা আরও এক দিন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে পর্যটন করপোরেশন।
আগামী ৯ আগস্ট থেকে প্রতি মঙ্গলবারও এ বাসে করে পদ্মা সেতু দেখতে নিয়ে যাওয়া হবে। অর্থাৎ শুক্র, শনি ও মঙ্গলবার সপ্তাহে এই তিন দিন পর্যটন করপোরেশনের প্যাকেজটি চালু থাকবে। অবসরপ্রাপ্ত, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থী—মানে যাঁদের অফিস নেই, তাঁদের মঙ্গলবার প্রাধান্য দেওয়া হবে। শুক্র ও শনিবার চাকরিজীবীদের প্রাধান্য দেওয়া হবে।
পর্যটন করপোরেশনের তিনটি ট্যুরিস্ট কোস্টার রয়েছে। সব কটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। ভ্রমণের প্রথম দিন উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা থাকায় বাস ছাড়তে ও ফিরতে কিছুটা দেরি হয়েছিল। তবে তার পরের দিন গত শনিবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বাস ছাড়ে এবং রাত ১০টার আগেই ফিরে আসে বলে জানান শেখ মেহদি হাসান।শুক্র ও শনিবার বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ট্যুরিস্ট কোস্টারে করে পদ্মা সেতু ভ্রমণ প্যাকেজটির খরচ ছিল জনপ্রতি ৯৯৯ টাকা। আগামী সপ্তাহ থেকে তা জনপ্রতি ১ হাজার ২০০ টাকা করা হচ্ছে।
সরকারিভাবে যে এমন একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এই বিষয়ই সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে রাজধানীর শ্যামলী এলাকার এলিয়স ম্যাকাওলি গোমেজের। তিনি তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে পদ্মা সেতু ভ্রমণে যান। এলিয়স ম্যাকাওলি গোমেজ বলেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হচ্ছে।
তারপর খাওয়াদাওয়া থেকে শুরু করে তাদের যে সার্বিক ব্যবস্থাপনা, সবকিছুই মোটামুটি ভালোই ছিল। যেহেতু অনেকেই পরিবার নিয়ে যাবে, তাই পদ্মা সেতুর আশপাশের দু-একটি জায়গা দেখানো গেলে ভালো হতো বলেও মনে করেন এলিয়স ম্যাকাওলি গোমেজ।