শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে যাওয়া নাভানা ফার্মার মালিকানা এখন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর নিকটাত্মীয়দের হাতে। কোম্পানিটির মালিকানা ইসলাম গ্রুপের কাছ থেকে হাতবদল হয়ে তাঁদের কাছে এসেছে। প্রায় ১০০ কোটি টাকায় নাভানা ফার্মা বেচাকেনা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, ইসলাম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জহুরুল ইসলাম ১৯৮৬ সালে নাভানা ফার্মা প্রতিষ্ঠা করেন। কোম্পানিটি ১৯৮৮ সালে মানুষের ওষুধ ও ১৯৯০ সালে গবাদিপশুর ওষুধ উৎপাদন শুরু করে। এরপর ধীরে ধীরে নাভানা ফার্মার ওষুধ উৎপাদন বাড়তে থাকে। ১৯৯৫ সালে জহুরুল ইসলামের মৃত্যুর পর একমাত্র ছেলে ও দুই ভাইয়ের মধ্যে ভাগ হয় তাঁর প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলো।
এর মধ্যে ছেলে মঞ্জুরুল ইসলাম পান ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। আর বাকি কোম্পানিগুলো নিয়ে জহুরুল ইসলামের ভাই আজহারুল ইসলাম আফতাব গ্রুপ ও অন্য ভাই শফিউল ইসলাম কামাল নাভানা গ্রুপ নামে নতুন দুটি শিল্পগোষ্ঠী গড়ে তোলেন।
নাভানা ফারমার নতুন মালিকানা পাওয়া আনিসুজ্জামান চৌধুরীর ভাই ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর স্ত্রী রুকমীলা জামান বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চেয়ারম্যান ও আনিসুজ্জামান চৌধুরী ব্যাংকটির নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান। সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও আনিসুজ্জামান চৌধুরীর পিতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী ছিলেন ইউসিবির উদ্যোক্তা পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান।
কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, এখন নাভানা ফার্মার ২২ শতাংশ শেয়ারের মালিক আনিসুজ্জামান চৌধুরী, তাঁর স্ত্রী ইমরানা জামান চৌধুরী ও তাঁদের পরিবার। এ ছাড়া তাঁদের নিকটাত্মীয় জুনায়েদ শফিক ও তাঁর স্ত্রী মাসুমা পারভীন এবং তাঁদের পরিবারের কাছে রয়েছে ২১ শতাংশ।
জুনায়েদ শফিক এখন নাভানা ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক। একই সঙ্গে তিনি জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা ও ইউসিবির পরিচালক। জাভেদ কায়সার, তারানা আহমেদ ও জাহারা রসুল এবং তাঁদের পরিবার মিলে ৬ শতাংশ করে শেয়ার ধারণ করছেন। মঞ্জুরুল ইসলাম ও তাঁর পরিবারের কাছে রয়েছে ৫ শতাংশ। সায়িদ আহমেদ নামের এক ব্যক্তি ৩ শতাংশ এবং আরও কয়েকজন ৭ শতাংশ শেয়ার নিয়েছেন।
এ ছাড়া বিদেশি কোম্পানির হাতে রয়েছে ২৫ শতাংশ শেয়ার। এর মধ্যে দুবাইয়ের স্ট্রাটাস হোল্ডিং ১১ শতাংশ ও মনটেনিয়া হোল্ডিং ৭ শতাংশ এবং ব্রিটিশ অধিভুক্ত দীপপুঞ্জ গার্নসির এনএমআই হোল্ডিং ৭ শতাংশ শেয়ারের মালিক। এই তিনটি কোম্পানি শেল কোম্পানি হিসেবে পরিচিত। সাধারণত কর ফাঁকি দিতে ও অবৈধ অর্থ আড়াল করতেই শেল কোম্পানি গড়ে তোলা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে নাভানা ফার্মার মালিকানা বিক্রির আগ্রহ প্রকাশ করেন মঞ্জুরুল ইসলাম। এ সময়ে কয়েকটি পক্ষের সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়। শেষ পর্যন্ত আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গেই বিক্রির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।
২০২০ সালের অক্টোবরে নাভানা ফার্মার ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ পান নতুন মালিকেরা। আর ওই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ৯৫ শতাংশ শেয়ার হাতবদল হয়ে যায় আনিসুজ্জামান চৌধুরীসহ কয়েকজনের কাছে। বাকি ৫ শতাংশ শেয়ার নিজেদের হাতে রেখেছেন মঞ্জুরুল ইসলাম ও তাঁর পরিবার।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রমতে, বেসরকারি খাতের সাউথইস্ট ব্যাংকে নাভানা ফার্মার ৮৮ কোটি টাকা ঋণ ছিল। পুরো ঋণ কিনে নিয়েছে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক। নতুন মালিকেরা এই ঋণের দায়িত্ব নিয়েছেন। পাশাপাশি আগের মালিককে কিছু নগদ টাকাও দিয়েছেন।
সব মিলিয়ে ১০০ কোটি টাকার মধ্যে নাভানা ফার্মা বিক্রি ও হস্তান্তর কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।জানতে চাইলে নাভানা ফার্মার কোম্পানি সচিব জয়নাল আবেদিন বলেন, মালিকানা পরিবর্তনের পর এখন কোম্পানিটিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। ব্যবসার প্রবৃদ্ধিও ভালো হচ্ছে।
এদিকে নাভানা ফার্মা সূত্রে জানা গেছে, মালিকানা পরিবর্তন হলেও নাম পরিবর্তন হচ্ছে না নাভানা ফার্মার। কারণ, বিদেশি অনেক অনুমোদন ও বাজারজাতের সঙ্গে নাভানা ফার্মার নামটি জড়িয়ে আছে।
বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে কোম্পানিটির শেয়ারের নিলাম সম্পন্ন হয়েছে। ৪ থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত ওই নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। তাতে ২৮১টি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে।
এ দরপ্রস্তাবে নাভানা ফার্মার ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের সর্বোচ্চ দাম ওঠে ৫০ টাকায়। আর সর্বনিম্ন দাম প্রস্তাব করা হয়েছিল ২০ টাকা। এসব দরপ্রস্তাবের ভিত্তিতে শেয়ারের ভারিত্ব গড় মূল্য দাঁড়ায় ৩৪ টাকা, এটিই শেয়ারের কাট-অফ প্রাইস।
এ দামেই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি করা হবে। আর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা অনুসারে, কাট-অফ প্রাইসের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম দামে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি করা হবে।